পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। কোথাও ভারি, কোথাও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এই বৃষ্টিপাতে রাজধানীসহ বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রাম শহরের কী করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়। কোমর সমান পানিবদ্ধতায় বাসা-বাড়ি, দোকানপাটে পানি ঢুকে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। স্মরণকালে এমন ভয়াবহ পানিবদ্ধতা চট্টগ্রামবাসী দেখেনি। রাজধানীতে থেকে থেকে স্বল্প ও মাঝারি বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতায় কী ভয়াবহ দুর্ভোগ নেমে এসেছে, তা সকলেই অবলোকন করছে। এমন কোনো সড়ক নেই যেখানে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে না। হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে রাস্তা-ঘাট সয়লাব হয়ে অশেষ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নেই যেখানে এই পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, যেটি ভিআইপি এবং ভিভিআইপিদের চলাচলের সড়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেই বিমানবন্দর সড়কটি গত রবিবার তলিয়ে গেছে। এই সড়ক দিয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিসহ ভিভিআইপিরা প্রায় নিয়মিত যাতায়ত করেন। আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের তো যাতায়াত করতেই হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বিমানবন্দরে আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক মিলিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০টি ফ্লাইট উঠা-নামা করে। গাড়ে প্রতিদিন ১৩ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে। তাদের বিদায় ও অভ্যর্থনা জানাতে তিন-চার হাজার লোক হাজির হয়। এছাড়া রাজধানীর লোকজনের যাতায়াত তো আছেই। এই সড়কটিই গত রবিবার বৃষ্টির পানিতে ডুবে অচল হয়ে পড়ে। অসহনীয় দুর্ভোগে যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়ে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, মহাগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে ড্রেনেজ সিস্টেম বা পানি নিষ্কাশন বলতে কিছু নেই। রাজধানীর সার্বিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার করুণ হালের কথা উল্লেখ না করাই ভাল।
আমরা প্রতিনিয়ত উন্নয়নের কথা শুনছি। উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুত এগিয়ে চলেছি। বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছি। অথচ রাজধানীর এক পানিবদ্ধতার সমাধান করতে পারছি না। এখানেই যেন উন্নয়নের আষাঢ়ের তর্জন-গর্জন সার হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টি থামার পর দুই-তিন ঘন্টা থৈ থৈ করা পানি আপনা আপনি সরে যাওয়ার পর সড়কের কঙ্কাল বের হয়ে পড়ে। সড়কগুলো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি করে। তখন প্রতীয়মাণ হয়, সড়কগুলো যেন উন্নয়নকে ব্যঙ্গ করে চলেছে। শুধু রাজধানীতেই এ অবস্থা পরিদৃষ্ট হয় না, বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে জেলা শহরগুলোর চিত্রও একই রকম। রাজধানীতে এখন এতটাই দুর্গম হয়ে উঠেছে যে তাতে সহজে ও সচ্ছন্দে চলাচলের কোনো উপায়ই নেই। সরকারের মধ্যে এমন একটা ভাব পরিলক্ষিত হয়, রাজধানীতে মেট্রোরেলসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজ চলছে, কাজেই উন্নয়ন চাইলে এই সমস্যা সহ্য করতেই হবে। এটা ভাবছে না, পানিবদ্ধতার সমাধান করতে না পারলে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর যাত্রীদের পানির মধ্যেই নামতে হবে। আমরা দেখেছি, যানজট নিরসনের জন্য যেসব ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোতে এখন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট রাস্তা থেকে উপরে উঠে গেছে। ফলে ফ্লাইওভারও অকার্যকর হয়ে পড়ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজধানীর পানিবদ্ধতার সমস্যা একদিনে বা মেট্রোরেল ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজ শুরুর সাথে সাথে হয়নি, যুগের পর যুগ ধরেই তা চলছে। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে এবং নগরবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন। এ সমস্যার মূলে যে সিটি করপরেশন এবং ওয়াসার মধ্যকার সমন্বয়হীনতা, তা বহু আগেই চিহ্নিত হয়েছে। সমস্যা চিহ্নিত হলেও সমাধান আজ পর্যন্ত হয়নি এবং হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। কারণ প্রতিষ্ঠান দুইটি তাদের কাজের সমন্বয় করার পরিবর্তে একে অপরকে দোষারোপ করার মধ্যেই বেশি ব্যস্ত। সমস্যা সমাধান না করে দোষারোপের মধ্যে থাকা, এমন নজির বিশ্বের আর কোন দেশে আছে কিনা আমাদের জানা নেই। পানিবদ্ধতার এই সমস্যা আশু সমাধান হবে এমন ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপের কথাও শোনা যায় না। বছর দুয়েক আগে এই জুলাই মাসেই রাজধানীর ভয়াবহ পানিবদ্ধতা দেখে তৎকালীন স্থানীয়সরকার মন্ত্রী ওয়াদা করে বলেছিলেন আগামী বছর আর এই পানিবদ্ধতা দেখা যাবে না। তার এ কথা শুনে নগরবাসীর মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, মন্ত্রীর ওয়াদা তো পূরণ হয়ইনি, উল্টো পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। যেখানে স্থানীয়সরকার মন্ত্রীর ওয়াদা বাস্তবায়িত হয় না, সেখানে আশার শেষ প্রদীপটাও নিভে যায়। এভাবে কি কোনো দেশের রাজধানী এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর চলতে পারে? এটা কি উন্নয়নের নমুনা?
দেশে উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য প্রায় নিয়মিতই একনেক বৈঠকে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। এসব বরাদ্দ দেখে আশার গতিও বেগবান হয়। বর্তমানে সড়ক ও যোগযোগ খাতে চারলেন, আটলেনের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ চলছে। দেখা যাচ্ছে, এসব উন্নয়ন কাজে মারাত্মক গলদ দেখা দিচ্ছে। নির্মাণাধীন ঢাকা-টাঙ্গাইল চারলেনের মাহসড়কটি উদ্বোধনের আগেই দেবে গেছে। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে নিস্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ করলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাত দেখিয়ে তার দায় এড়াতে চাচ্ছে। শুধু এই মহাসড়কই নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেনের মহাসড়কও নির্মাণ শেষে ত্রুটি দেখা দেয়ায় তা সংস্কারে পুনরায় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা চরপাড়া সৈকত এলাকায় সিটি আউটার রিং রোডও চালুর আগেই ধসে পড়েছে। এর ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য মাটি ও রড না দিয়ে সৈকতের বালি ও ঢালাই করার কারণে এই ধস নেমেছে বলে বলা হচ্ছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সড়ক ও মাহসড়ক উন্নয়ন কাজে দুর্নীতি ও অর্থ অপচয়ের মহোৎসব চলছে। অথচ সরকার মনেপ্রাণে চাচ্ছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে সুনাম অর্জন করতে, বাহবা নিতে। সরকারের এই আশায় গুড়ে বালি দিয়ে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ। দেখা যাবে, জোড়াতালি দিয়ে এসব উন্নয়ন কাজ শেষ করার পর কিছুদিন না যেতেই সব ধসে পড়বে এবং তা উন্নয়নের ফানুসে পরিণত হবে। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে কিনা তা কঠোরভাবে মনিটর করা এবং যেখানে নিম্নমানের কাজ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। তা নাহলে, উন্নয়নের নামে জনগণের অর্থের এই অপচয়ের দায় আখেরে সরকারের উপরই বর্তাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।