পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের রাজনীতিতে সব সময় আলোচিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর টানা ৯ বছরের শাসনামলে দেশের উন্নয়নে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি চতুর্থ জাতীয় সংসদে ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন। ওই সংশোধনীতে সংবিধানের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের পরই ২(ক) নম্বর অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। এতে বলা হয় ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’
এরশাদ উপজেলা পদ্ধতির প্রচলনসহ বিভিন্ন কাজের কারণে পেয়েছিলেন পল্লীবন্ধু উপাধি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালের সংসদীয় নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ধর্মীয় মূল্যবোধের বিষয়টি বিবেচনা করে ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার মাধ্যমে এরশাদ বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে এক নতুন পরিচয়ে পরিচিত করে তোলেন। দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে নতুনভাবে পরিচয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
দেশ যখন তথাকথিত প্রগতিশীল রাজনীতি এবং হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির চর্চার উর্বর ভূমি তখন ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা দেয়াটা খুব সহজ ছিল না। কারণ স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে সর্বপ্রথম সংবিধান রচনার সময় রাষ্ট্রধর্মের কথা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। সেই সংশোধনীতে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খিষ্টানসহ বিভিন্ন স¤প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। যেকোনো সরকারের উচিত সব স¤প্রদায়ের মাঝে স¤প্রীতি বজায় রেখে সবার ন্যায্য হিস্যা মোতাবেক সেবা প্রদান করা; সবার নির্বিঘেœ ধর্ম পালনের নিশ্চয়তা বিধান করা। এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করলেও সঙ্গে সঙ্গে অন্য ধর্মাবলম্বীদের স্বার্থের বিষয়টিও সংবিধানে যোগ করেছিলেন।
এ ছাড়াও সরকারিভাবে মসজিদের বিদ্যুতের বিল মওকুফ ও শুক্রবারকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করেন। এতে মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে ক্রমেই প্রিয় ব্যক্তি হয়ে ওঠেন এরশাদ। ১৯৮৮ সালেই ‘সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’-এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ‘স্বৈরাচার ও সা¤প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে কয়েকজন নাগরিক রিট আবেদন করেন। দীর্ঘদিন মামলাটি আদালতে বিভিন্ন উত্তাপ ছড়ায়। দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়। ঢাকার রাজপথ কাঁপিয়ে তোলা হয়। ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ দেশের সর্বোচ্চ আদালত রিটটি খারিজ করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখেন।
ঐতিহাসিক এ রায়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় আবেগের প্রতি লক্ষ রাখা হয়েছে। তাই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আদালতের এ রায়কে সশ্রদ্ধ স্বাগত জানিয়েছেন। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার সিদ্ধান্ত দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাহিদার ভিত্তিতেই নিতে হয়েছিল।
তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের চাপের মুখে ২০১৬ সালে সংবিধান সংশোধনে বিশেষ সংসদীয় কমিটির সঙ্গে এক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তার দল (আওয়ামী লীগ) সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে বাদ দিতে চায় না। গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে থাকবে, এবং তার দল আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম বা ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বাদ দিতে চায় না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুসারে এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে সংযোজন করায় ৯২ ভাগ মুসলমান দেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এরশাদ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।