Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহ্র অস্তিত্ব : আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন তত্ত

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৭ এএম

চৌদ্দ

ঠিক একইভাবে এটিও বিশ্বাস করা যায় না যে, এই বিরাট সৃষ্টি জগৎ এমনিতেই সৃষ্টি হয়ে গেছে এবং এর পিছনে কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। একমাত্র অস্তিত্বশীল স্রষ্টাই এই বগতের প্রতিটি বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন, এবং সেই সৃষ্টির প্রকৃতি, এর গঠনবিন্যাস, এর কার্যকারিতা প্রভৃতির উপলব্ধির দ্বারা এক আল্লাহ্র অস্তিত্বের স্বীকৃতি দেওয়া ছাড়া উপায় যে নেই সেই সত্যটি পবিত্র কুরআনের অনেক জায়গায় জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে বলা হয়েছে। যেমন কুরআনে বলা হচ্ছে, “তোমাদের আল্লাহ্ এক ও একক। সেই দয়াবান ও করুণাময় আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। (এই সত্যটি চিহিৃত করার জন্য যদি কোন নিদর্শন বা আলামতের প্রয়োজন হয় তাহলে) যারা বুদ্ধি বিবেক ব্যবহার করে তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর ঘটনাকৃতিতে, রাত্রদিনের অনবরত আবর্তনে, মানুষের প্রয়োজনীয় ও উপকারী সামগ্রী নিয়ে সাগর দরিয়ার চলমান জলযানসমূহে, বৃষ্টি ধারার মধ্যে, যা আল্লাহ্ বর্ষণ করেন ওপর থেকে তারপর তার মাধ্যমে মৃত ভূমিতে জীভন দান করেন এবং নিজের এই ব্যবস্থাপনা বদৌলতে পৃথিবীতে সব রকমের প্রাণী ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেন, আর বায়ূ প্রবাহ এবং আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে।” “সূরা ২, আয়াত ১৬৩-১৬৪”।

কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, “তিনি অর্থাৎ আল্লাহ্ আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা। তিনিন তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন......।” “সূরা ৪২, আয়াত ১১”।

কুরআনে আরো বলা হচ্ছে, “হে মানব জাতি। ইবাদত কর তোমাদের রবের যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার সৃষ্টিকর্তা....।” “সূরা ২, আয়াত ২১; আরো দেখুন, সূরা ১৬, আয়াত ১০-১১; সূরা ৬, আয়াত ৯৯; সূরা ৫০, আয়াত ৯-১১”।
পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, কুরআনের অনেক জায়গায় বলা হয়েছে, এই জগতকে বিনা উদ্দেশ্য সৃষ্টি করা হয়নি। এই জগতে যে নিয়ম শৃঙ্খলা, সামঞ্জস্য, ঐক্য বিরাজমান এদিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন যে, প্রকৃতির সকল ঘটনারাজির ঐক্য বিধানের জন্য নিশ্চয়ই একজন স্রষ্টা প্রয়োজন। যে ঐক্যের মধ্যে কোন ফাটল বা অসামঞ্জস্যতা থাকবে না। কুরআনে বলা হচ্ছে, “সেই মহান সত্তাই সাত আসমানকে স্তরে স্তরে তৈরি করেছেন। তুমি সেই করুণাময়ের সৃষ্টিতে কোথাও কোন ক্রটি দেখতে পাবে না। “সূরা ৬৭, আয়াত ৩-৪”।

কুরআনের অন্যত্র বলা হচ্ছে, “আমি আকাশ ও ভূমÐল এবং তন্মাধ্যস্থ যাবতীয় ব্স্তু খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। নিশ্চয়ই আমি উভয়কেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি করেছি কিন্তু অধিকাংশ লোকই অনুধাবন করে না।” “সূরা ৪৪, আয়াত ৩৮-৩৯”।

এটিকে দর্শনের পরিভাষায় আল্লাহর অস্তিত্বের তত্ত¡ বিষয়ক প্রমাণ হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এটি হলো, মানুষের মনে আল্লাহর ধারণার উপস্থিতিই তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। কুরআনে বলা হচ্ছে, মানুষ বিপদে পড়লে অকস্মাৎ সে আল্লাহ্কে স্মরণ করে, আসমান যমীনের সৃষ্টির ব্যাপারে প্রশ্ন করলেও সে জবাব দেয় যে, মহান আল্লাহ্ই এগুলো সৃষ্টি করেছেন। “সূরা ৪১, আয়াত ৫১; সূরা ৪৩, আয়াত ৯”।

এখানে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে যদি আল্লাহ্র অস্তিত্ব না-ই থাকে তাহলে মানুষের অন্তরে এমন ধারণা কে সৃষ্টি করে? সুতরাং এ থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহ্র অস্তিত্ব অত্যন্ত সুষ্পষ্ট।

আল্লাহ্ যুগে যুগে মানব জাতিকে হিদায়েতদানের জন্য নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। “সূরা ৩৫, আয়াত ২৪”।

সেই সাথে ঐসব নবী-রাসুলকে তিনি সঙ্গে দিয়েছেন আসমানী গ্রন্থ। ঠিক এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)Ñকে পবিত্র কুরআন দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। “সূরা ৬, আয়াত ১৯”।

পবিত্র কুরআনের অনেক জায়গায় চ্যালেঞ্জ “সূরা ২, আয়াত ২৩; সূরা ১০, আয়াত ৩৮; সূরা ১১, আয়াত ১৩; সূরা ১৭, আয়াত ৮৮ এবং সূরা ৫২, আয়াত ৩৩-৩৪”।

দিয়ে বলা হয়েছে যে, এই কিতাব স্বয়ং আল্লাহ্রই বাণী এবং মানুষ ও জ্বীনকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে যে, তোমরা যদি মনে কর এটি আল্লাহ্র বাণী নয় তাহলে তোমরা অনুরূপ একটি অধ্যায় বা সূরা রচনা করে নিয়ে এসো। এই চ্যালেঞ্জ যে মানুষ গ্রহণ করেনি তা নয়। কিন্তু মানুষ অনুরূপ একটি অধ্যায় তো দূরের কথা একটি ছোট সূরাও রচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্র অস্তিত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত। সব শেষে কোন্ কোন্ ভিত্তির উপরই নির্ভর করে আল্লাহ্র সাথে মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা আলোচনা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে কুরআনে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র কয়েকটি বিষয়ে অতি সংক্ষেপে এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে ঃ মানুষের দুটি দিক রয়েছে, ১. দৈহিক দিক, ২. আত্মিক দিক। দৈহিক দিকের চেয়ে আত্মিক দিকটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ