বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দীর্ঘ ১৬বছর পর আগামী ২৭ ও ২৯ জুলাই সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলন। এনিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে। সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে সংঘাত সংঘর্ষের আশংকাও একই সাথে বিরাজ করছে। পদে থাকা নেতৃত্ব পুনরায় কমিটিতে ফিরে আসতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সাথে মূল্যায়ন প্রত্যাশা কমিটিতে স্থান পাওয়ার চেষ্টা করছে তারুন্য নির্ভর ত্যাগি কর্মীরাও। কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশায় দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে আদু ভাইদের অর্থ ভান্ডার। তরুনদের একমাত্র ভরসা ত্যাগ, তীতিক্ষা। জেলা-মহানগনের নেতৃত্ব থাকা যুবলীগের নেতারা স্থানীয় অভিভাবক সংগঠনের কতিপয় নেতা, এমপি, মন্ত্রীর নিজের লোকে পরিচয়ে অথের্র পাহাড় গড়েছেন। ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট, তদবির বাণিজ্য সহ নানা ক্ষেত্রে অবাধে ব্যবহার করেছেন দলীয় পদবী। সাংগঠনিক অবস্থান বা বিস্তৃতির পরিবর্তে নিজস্ব বলয়ে বিলীন করেছেন নিজেদের। দলীয় কর্মসূচীতে শো‘ডাউনে করে জানান দিয়েছেন নিজেদের শক্তিমত্তা। বলয় ধরে রাখতে যেয়ে দলীয় বিস্তৃতিকে সীমিত করেছেন তারা। কমিটি পূর্ণগঠন বা সাংবিধানিকভাবে নিয়মিত কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বিকাশে তারা ছিলেন প্রধান বাধা। এতে করে বছরের পর বছর নেতৃত্ব উপযোগী কর্মীরা পদ পদবী অলংকিত করতে পারেনি দলে। অনেক সম্ভাবনাময়ী নেতৃত্ব হারিয়ে গেছে আদু ভাইদের কূটকৌশলে। কূটকৌশলী পদবীধারী নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সাধারন নেতাকর্মীদের অভিযোগের পাহাড়। থানা বা ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের নিবেদিত কর্মীদের সাথে যোগসূত্রের ধারধারেনি তারা।
কিন্তু সম্মেলন ও কাউন্সিল আসতেই তোড়জোড় শুরু করেছেন পদবীধারী নেতারা। তড়িগড়ি করে পকেট কমিটি গঠন করে কাউন্সিলে বিজয় নিশ্চিতে প্রস্তুুত চালাচ্ছেন। সেই সাথে মন্ত্রী, এমপি সহ নেতাদের মাধ্যমে জোর লবিং শুরু করেছেন পুনরায় কমিটির মুকুট হতে। তাদের এহেন তৎপরতার পরও বসে নেই পদ প্রত্যাশি তরুণ নেতারা। নেতৃত্বের প্রত্যাশায় রাজপথের সংগ্রামে ত্যাগ তীতিক্ষার কমতি করেনি তারা। পকেটের টাকা খরচ করে দলের কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছে মূল্যায়নের আশায়। আ‘লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছিলেন, কমিটিতে দলের দু:সময়ের ত্যাগিদের কর্মীদের যেন মূল্যায়ন করা হয়। এছাড়া আ‘লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নিজের লোক নয়, দলের লোক যেন কমিটিতে স্থান পায়। শীর্ষ নেতাদের এমন বক্তব্যে আশা জাগিয়েছে তারুন্য নির্ভর নেতৃত্ব প্রত্যাশিদের। তবে এরপরও বিগত সময়ের ব্যর্থ নেতারা পুনরায় পদের লোভে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘদিন পদ থাকার সুবাধে নিজস্ব নের্টওয়ার্ক, সেই সাথে অর্থের ভান্ডারের আওয়াজ তোলে দলের নিবেদিত তরুণদের দূর্বল করারও চেষ্টা করছেন তারা। দলের কেন্দ্রিয় নেতারা অর্থে ম্যানেজ হয়েই কমিটি ঘোষনা করবেন এমন হিসেবে নিকেশও কৌশলে তুলে ধরছেন পদ প্রত্যাশি তরুণ ত্যাগি কর্মীদের নিকট। তাদের দৌড়ঝাঁপ দলের সভানেত্রী ও সাধারন সম্পাদকের কমিটি কেন্দ্রিক প্রদত্ত বক্তব্যের বিপরীত। স্থানীয় অনেক রাজনীতিক বিশ্লেষক আশংকা প্রকাশ করে বলছেন, ত্যাগি-পরীক্ষিত পদ প্রত্যাশি নতুন নেতৃত্বের বিকাশ হয়েতো টাকার প্রভাবে হারিয়ে যেতে পারে এবার। কারন যুবলীগে নতুন নেতৃত্ব গঠন ঘিরে টাকার জোর প্রবল দেখা যাচ্ছে। তারা এও মনে করছেন, বিগত সময়ে বিএনপি নেতৃত্বে প্রকৃত রাজনীতিকদের ঠেক্কা দিয়ে টাকাওয়ালা লোকজন পদপদবী অলংকিত করে। অবমূল্যায়ন হয় ত্যাগ তীতিক্ষায় পরীক্ষিত দলের কর্মীরা। টাকাওয়ালা পদবীধারী নেতারা দীর্ঘসূত্রিতার কবলে ফেলে নিয়মিত কমিটি গঠনও বাধাগ্রস্থ করে তোলে দলে। সেকারনে কয়েক জেনারেশন নতুন নেতৃত্ব বিকাশ ঘটেনি বিএনপি সহ তাদের অঙ্গ সংগঠনে। সম্ভাবনাময়ী নেতৃত্ব উপযোগ্য কর্মীরা বাধ্য হয়ে দলীয় কার্যক্রম থেকে নিসক্রিয় হয়ে পড়ে। দলের পদবী আকঁড়ে থাকা মুলত ব্যবসায়িক ব্যক্তিরা দলীয় কর্মসূচীতে ফটোসেশন করেই ফিরে যেতেন এসি রুমে। এতে করে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বিএনপি, তাদের রাজনীতি রাজপথ ছেড়ে পালিয়ে যায় নেতাদের ড্রয়িং রুমে। বিএনপির নেতৃত্ব থেকে রাজনীতিকদের করুন বিদায়ের সেই আলামত অনেকে দেখতে পাচ্ছেন যুবলীগের কমিটি নিয়ে রাজনীতির আড়ালে টাকাওয়ালা ব্যবসায়ীদের। তারা টাকার জোরে কমিটি নিয়ে আসলে, যুবলীগের নেতৃত্বও ব্যবসায়ী রাজনীতিকদের কবলে চলে যাবে। এতে করে ত্যাগ তীতিক্ষার কোন মূল্যই অবশিষ্ট থাকবে না যুবলীগের রাজনীতিতে। বিগত সময়ের সিলেট জেলা ্ও মহানগর যুবলীগের নেতৃত্ব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নেতৃত্ব আঁকড়ে থাকা নেতাদের ব্যর্থতার অপ্রতাশিত সাংগঠনিক চিত্র।
দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে জগদীশ ও আজাদের নেতৃত্বে সিলেট জেলা যুবলীগ পুনর্গঠনের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিভিন্ন থানায় আয়োজন করা হয় সম্মেলনের। কিন্তু ২০০৮ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে শপথ গ্রহণের আগে দলীয় পদ ছাড়তে হয় জগদীশ দাস ও আজাদুর রহমান আজাদকে। এরপর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে তাদের স্থলাভিষিক্ত হন সিনিয়র সহ-সভাপতি শামীম আহমদ ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার মহসিন কামরান। ভারপ্রাপ্তরা ১১ বছর জেলা যুবলীগ চালালেও জেলার ১৩ থানার একটিতেও সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেননি। এর মধ্যে কেন্দ্র থেকে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় কেন্দ্র থেকে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। বাকি উপজেলাগুলোর মধ্যে কমিটি ছাড়াই চলছে সিলেট ও বিয়ানীবাজার যুবলীগ। একইভাবে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামীম আহমদ সভাপতি ও আবদুর রহমান জামিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে আলম খান মুক্তিকে আহ্বায়ক করে ৫১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। ওই কমিটিও আয়োজন করতে পারেনি সম্মেলনের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।