Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত আগামী শুক্রবার

উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী অর্থাৎ নৌকার বিরোধীতা করেছেন সে সকল এমপি ও মন্ত্রী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কী ধরণে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আগামী শুক্রবার দলের কার্যনির্বাহি কমিটির বৈঠকে। এর আগে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বার বার বলেছেন নৌকার বিরোধীতাকারীদের দলীয় শাস্তির আওতায় আনা হবে। দলের কার্যনির্বাহি কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় নৌকা বিরোধী এমপি-মন্ত্রীদের শো-কজ করা হবে। কিন্তু তা আদৌ হয়নি।

দলীয় সূত্র জানায়, আগামী শুক্রবার গণভবনে দলের কার্যনির্বাহি সংসদের সভা রয়েছে। এ বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের বিভাগীয় জেলাগুলোতে কারা নৌকার বিরোধীতা করেছেন, বিদ্রোহীদের সহায়তা করেছেন তার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত পেশ করবেন।

এরপর অভিযুক্তদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তবে দলের একটি নীতি-নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত এমপি-মন্ত্রী, জেলা নেতা বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের আপাতত বিশেষ কোন শাস্তির আওতায় আনা হবে না। তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হবে। আর যদি কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয় তা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার পাঁচ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ১৪৩ জন দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে তা-ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরষ্কুশ বিজয় অর্জনের মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে। অনেকটা একতরফা এই নির্বাচনেও বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন আ.লীগের প্রার্থীরা। মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ক্ষমতার দাপটেই হেরেছে তারা।

জানা যায়, এর আগে কোন কোন এমপি-মন্ত্রী অথবা কেন্দ্রীয় বা জেলা নেতা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন তা জানতে চেয়ে তৃণমূলের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিল কেন্দ্র। সেই রিপোর্টের আলোকে সাংগঠনিক সম্পাদকরা প্রমাণাদিসহ প্রতিবেদন তৈরী করেছিলেন এবং তা ৫ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহি কমিটিতে উপস্থানও করা হয়েছিল। সে সময় নৌকা বিরোধী এমপি-মন্ত্রীদের শো’কজ করার সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু পরে তা বিভিন্ন কারণে হয়নি। এ নিয়ে অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছিলেন, আরো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হুটহাট করে শো’কজ করা ঠিক হবে না।

নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডেয়াম মেম্বার ইনকিলাবকে জানান, দলের পক্ষ থেকে এমপি বা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা কঠিন। দলের অনেক হেভিওয়েট নেতা উপজেলায় নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে, না হয় এ নিয়ে দলের ভিতরেই কথা উঠবে। তবে এ নিয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত।

দলের একটি বিশেষ সূত্র জানায়, পুরো দেশেই দলের নেতাকর্মীরা কোন না কোন নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতার আশির্বাদপুষ্ট হয়ে রাজনীতি করেন। যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তারা সেই নেতার সমর্থনেই হয়েছেন। এক্ষেত্রে শুধু এমপি বা মন্ত্রী নন, দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতা অনেকেই জড়িত। আবার নেতাদের মধ্যেও বিভাজন আছে, রয়েছে সিন্ডিকেট। তাই যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কিংবা বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছেন তাদের বিষয়ে দল কখনই শক্ত অবস্থানে যেতে পারবে না কারণ নেতাদের মধ্যেই তাহলে বিভাজন তৈরী হবে। যদি না প্রধানমন্ত্রী নিজে শক্ত হয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাই আপাতত নৌকা বিরোধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে না।

নির্বাচনে আ.লীগের নৌকা হেরেছে সেগুলো হলো, শেরপুরের নকলা, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, মাদারীপুর সদর, রাজবাড়ীর কালুখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও খুলনার ডুমুরিয়া। এর আগে ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ময়মনসিংহের আটটি উপজেলার মধ্যে ছয়টিতেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা হেরে যান। খুলনার ছয়টির মধ্যে চারটি, টাঙ্গাইলের চারটি, কুমিল্লায় দুটিতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি, মুন্সিগঞ্জের দুটিতে, পটুয়াখালীর একটি, ভোলার একটিতে ও ঢাকার একটি। তৃতীয় ধাপে লক্ষীপুরে তিনটি, কক্সবাজারের চারটি উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হন আ.লীগে দলীয় প্রতীকের প্রার্থীরা।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, নৌকার বিরোধিতাকারী এসব মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রে জেলা নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত মন্ত্রী-এমপির তালিকা এখন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরে।

এসব এমপি-মন্ত্রীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পাট ও বন্ত্রমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের এমপি গাজী গোলাম দস্তগীর (বীর প্রতীক), নাটোরের তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস ও সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলাম বকুল, কুমিল্লা-২ আসনের এমপি সেলিমা আহমাদ মেরী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-৫ আসনের এবাদুল করিম বুলবুল, টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, ময়মনসিংহ-৯ আসনের আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন, খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ড. আজিজ, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বরগুনা-১ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ আরো অনেকে।

এসব মন্ত্রী-এমপি কোনো সময় অন্তরালে এবং কখনো সরাসরি নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থী এবং জেলা আ.লীগ সংবাদ সম্মেলন করেও অভিযোগ জানান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও নির্বাচন কমিশনের আদেশের পরও সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীদের লাগাম টানা যায়নি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, নেক্সট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। আমরা খুব দ্রুত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক করব। আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে। রিপোর্টের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খান ইনকিলাবকে বলেন, আগামী শুক্রবার দলের কার্যনির্বাহি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। এমপি, মন্ত্রী বা অন্য যে বা যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন অর্থাৎ উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করেছে এই সভায় তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। #



 

Show all comments
  • Shahin Hawladar ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৩৮ এএম says : 0
    এসব কথা বলে দলের ১২ বাজাবেন না প্লিজ.দলের ভিতর যা গ্রুপিং হইসে সেটা কি ভাবে সমাধান করা যায় সেটা ভাবেন প্লিজ. দলকে কি ভাবে সংঘবদ্ধ ভাবে রাখা যায়.সেই দিকে খেয়াল নিন. আর দলের ভিতর থাকে ভাইরাস সরান প্লিজ. জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
    Total Reply(0) Reply
  • Shaymol Roy ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৩৯ এএম says : 0
    খারাপ মানুষ কে নৌকার মাঝি দিলে নৌকার জন্য বিপদ ।তাই ভাল মাঝি দেখে নৌকাকে নিরাপদ রাখতে মানুষ অন্য এক মাঝি খুজে
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ সাজ্জাদুর রহমান তারেক ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৩৯ এএম says : 0
    যারা আপনার কথাই শোনেনা তাঁদের একটা শিক্ষা হওয়া উচিৎ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahir Ahmed Jahir ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৩৯ এএম says : 0
    ৩ মাস আগে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হয়ছে,এখন নৌকা তাদের কাছে ভাল লাগে না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নজরুল ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৪০ এএম says : 0
    শোকজ করলে হবে না শুধু কঠিন শাস্তি হওয়া উচিৎ , এদের জন্য তৃনমুল ধংশ হওয়ার পথে
    Total Reply(0) Reply
  • Shipon ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৪১ এএম says : 0
    নৌকার এমপিরা নৌকার শত্রু আর আমরা নৌকায় ভোট দিয়ে হুমকির মুখে,,,, এ কেমন বিচার জননেত্রীর কাছে জোর দাবি জানাই
    Total Reply(0) Reply
  • Md Nijam Uddin ১০ জুলাই, ২০১৯, ৩:৪১ এএম says : 0
    এগুলো বললে হবে না কাজে প্রমান দেখাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Dewan nabiur rahman ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৩:৪৩ পিএম says : 0
    পত্রিকাতে আমাদের রুপগঞ্জের মা মাটি ও মানুষের আইকন বস্র পাট মন্রী গোলাম দস্তগীর গাজী(বীরপ্রতিক)স্যারের নামে যে নৌকার প্রার্থীর বিরোদ্ধে লেখা হয়েছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ষড়যন্রমুলক।গাজী স্যার উপজেলা থেকে পৌর নির্বাচনে নৌকা পক্ষে নিঃসন্দেহে ১০০% কাজ করেছেন এবং নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন।মাননীয় প্রধানমন্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ