পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চীন সফর নিয়ে গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খোলামেলা মন্তব্য ও মতামত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আঞ্চলিক ইস্যু হিসেবে রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ ও চীনের সহযোগিতামূলক অবস্থান, রাখাইন নিয়ে এক মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাব নাকচ, দেশে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার মত সামাজিক সংকটে পুরুষদের করণীয়, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতাসহ চলমান নানা ইস্যু সম্পর্কে কথা বলেছেন। বিশেষত দেশীয় বাস্তবতায় ক্ষমতাসীন ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থতার কারণে জনগণকে অনেক খেসারত দিতে হয়’ বলে করা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটিকে দার্শনিক প্রজ্ঞাপূর্ণ বক্তব্য বলে আখ্যায়িত করা যায়। ভুল সবারই হয়। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভুল জাতিকে পিছিয়ে দেয়। জাতির উন্নয়ন অগ্রগতির সম্ভাবনা ব্যহত ও বাঁধাগ্রস্ত হয়। এ ক্ষেত্রে ২০০৪-৫ সালে চীন-জাপানের বিনিয়োগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাইপলাইনে ভারতে গ্যাস নেয়ার উদ্যোগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসম্মতিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বড় রকমের ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি হলে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতেন এবং পাইপলাইন থেকে বাংলাদেশের অংশও আদায় করে নিতেন বলে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভুল হলে জাতিকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হয়। এ কথা একইভাবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনী, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আশ্রয় ও ভরণপোষণ বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় সমস্যা। এটা একদিকে অর্থনৈতিক চাপ অন্যদিকে সামাজিক ক্ষেত্রেও নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও কিছু মানবিক সহায়তা প্রদান ছাড়া তারা এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই করতে পারেনি। একইভাবে জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক সংস্থাও রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে চীনই হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর শক্তি। চীনের সাথে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং উভয় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে চীনের বিনিয়োগ ও অংশিদারিত্বের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি এবং কানেক্টিভিটির মাধ্যমে বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সড়ক ও রেল যোগাযোগের সম্ভাবনা উন্মোচিত করার যে লক্ষ্য রয়েছে তার সাথে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারসহ আঞ্চলিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। এসব স্বার্থের সাথে পশ্চিমাদের দ্বিমত থাকা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়া নীতিগতভাবেই রাখাইন প্রদেশকে বাংলাদেশের সাথে যুক্ত করার প্রস্তাব সরকার সমর্থন করে না। এ কারণেই মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী নাকচ করেছেন। অন্যদিকে চীনের আশ্বাস ও মধ্যস্থতায় ইতিবাচক ফলাফলের প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। বিশেষ সময়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে পশ্চিমা কোনো কোনো মহলের পাতা ফাঁদে পা না দেয়া এবং মিয়ানমার ও চীনের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান, পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি, চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযুক্তির মাধ্যমে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত ও বিশাল অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত আছে। এ বিষয়ে মিয়ানমারকে যত দ্রæত সম্ভব সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। চীনের মধ্যস্থতার পাশাপাশি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কেও এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধনের উদ্যোগ নিতে হবে। মিয়ানমারের ইতিবাচক সাড়া ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া একতরফা কোনো উদ্যোগ সমাধান দেবে না। তবে চীনের প্রভাব ওকার্যকর ভূমিকা বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানে অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ইতিমধ্যে মিয়ানমারকে সমঝোতার পথে আনতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার মিয়ানমার সফর করেছেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে এটা সম্ভব হচ্ছে। চীন সফরের মাধ্যমে তারই ধারাবাহিক সফল পরিণতির প্রত্যাশা আরো বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিকে যৌক্তিক বলে দাবি করেছেন। অনেক বেশি দামে এলএনজি কিনে গ্রাহকদের কাছে কমদামে বিক্রির কারণে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ভতুর্কির বোঝা কমিয়ে আনতে দামবৃদ্ধির প্রস্তাবকে যৌক্তিক বলে গণ্য করা গেলেও বেশি দামে এলএনজি কেনার বিষয়টি পুনর্বিচেনার দাবি রাখে। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ ও দুর্নীতি-অপচয় কমিয়ে গ্যাসের মূল্য স্থিতিশীল রাখার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আশা করি, এ ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী সফল হবেন। সেই সাথে আমাদের সব রাজনৈতিক নেতৃত্ব অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের জন্য একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলতে সক্ষম হবেন। রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রয়োজনে সময়োপযোগী বক্তব্য ও জাতীয় স্বার্থে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।