পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্তমান যুগ হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিশ্বায়ন ও পরিবেশ রক্ষার। এসবের উপরই নির্ভর করে টেকসই উন্নতি। তাই এসব ক্ষেত্রে যে দেশ যত বেশি উন্নতি করছে, সে দেশের অগ্রগতি তত বেশি হচ্ছে। বিশ্বের বহু দেশ এসব ক্ষেত্রের উন্নতির দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তার সুফলও পাচ্ছে তারা। আমাদের দেশে এসবের প্রতিটি ক্ষেত্রেরই চিত্র হতাশাজনক! যেমন ব্যবসার কথাই যদি ধরি তাহলে দেখা যাবে, এর চিত্রটি হতাশাজনক। বিশ্ব ব্যাংকের ‘ব্যবসা সহজী-করণ সূচক-২০১৯’ মতে, বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। আর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ-আফগানিস্তানের অবস্থান ১৬৭তম। অর্থাৎ ব্যবসা সহজী-করণের ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের অবস্থান আমাদের চেয়ে ৯ ধাপ উপরে! যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। স্মরণীয় যে, এই অবস্থা নতুন নয়। এ থেকে উত্তরণে দেশে বহু আইন-নির্দেশ জারী করা হয়েছে। এমনকি ওয়ান স্টপ নীতিও প্রবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই আমলাতন্ত্রের জটিলতা দ‚র হচ্ছে না। জিলাপির প্যাঁচের মতো আমলাতন্ত্রের জটিলতা খোলা যাচ্ছে না। ফলে কাক্সিক্ষত উন্নতি হচ্ছে না। কারণ, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আশাব্যঞ্জক হচ্ছে না। বেসরকারি বিনিয়োগ একই বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে বহুদিন যাবত। যা মোট জিডিপির ২২-২৩%। ব্যক্তি সঞ্চয়ও আশানুরূপ নয়। এছাড়া সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমতে কমতে গত বছর কিছুটা বেড়েছে। আঙ্কটার্ডের ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০১৯’ মতে, ২০১৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় মোট এফডিআই প্রবাহের ৬.৬% বাংলাদেশের, যার আর্থিক পরিমাণ ৩৬১ কোটি ডলার (যা গত ছয় বছরের গড় ছিল ৪.৬%)। অন্যদিকে, একই সময়ে ও অঞ্চলে ভারতের অংশ ৭৮% (আর্থিক পরিমাণ ৪,২৮৮ কোটি ডলার)। এছাড়া, পাকিস্তানের ৪.৩৩%, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান ও ভুটান এর যথাক্রমে ২.৯৭, ১.০১, ০.২৯, ০.২৫ ও ০.১। গত বছর দেশে যে মোট এফডিআই এসেছে, তা নিয়ে অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। কিন্তু উক্ত বিনিয়োগের প্রায় অর্ধেক হচ্ছে জাপানের এবং তা বাংলাদেশ টোবাক্কো কোম্পানি ক্রয় করার মাধ্যমে। কিন্তু এটা বিদেশি বিনিয়োগ হলেও দেশের নতুন বিনিয়োগ নয়। শুধুমাত্র মালিকানার পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে এতে কর্মসংস্থান ও অন্যকিছুর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না। তাই এই বিনিয়োগ ছাড়া বিদেশি অন্য বিনিয়োগ আগের মতোই, তেমন কোন উন্নতি হয়নি। অবশ্য সাম্প্রতিককালে দেশে সরকারি বিনিয়োগ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মূলত অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ খাতে, যা দেশি ব্যাংক ও বিদেশি ঋণে। এতে করেই দেশের জিডিপি, প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এছাড়া, দেশের অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নতি হচ্ছে। তবে এতে নতুন কর্মসংস্থান তেমন সৃষ্টি হচ্ছে না। এছাড়া, এই ঋণ ও তার সুদ পরিশোধের জের চলবে বহুদিন। বর্তমানে বৈদেশিক ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে মাথাপিছু ৬৭ হাজার টাকা এবং তা এ বছর শেষে বৃদ্ধি পেয়ে ৭৫ হাজার টাকা হবে বলে মিডিয়ায় প্রকাশ। আর কয়েক বছর পর লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তাই প্রতিবছর এসব ঋণ ও তার সুদ পরিশোধ করতে হয় বিরাট অংকের। দ্বিতীয়ত: সরকারের ব্যাংক ঋণ ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে অনেক। তাই এ নিয়ে ব্যবসায়ী মহল নাখোশ। যা’হোক, দেশে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ হচ্ছে না। তাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারত্ব দিনদিন ব্যাপকতর হচ্ছে। তাই যে কোন ম‚ল্যেই হোক দেশের ব্যবসা সহজী-করণ বিশ্ব পর্যায়ের করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এফডিআই আশাব্যঞ্জক না হওয়ার কারণ হিসেবে পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখনো ইমেজ সংকট দ‚র করতে ব্যস্ত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মতো সমস্যা এখন না থাকলেও জমি সমস্যার পাশাপাশি রয়ে গেছে ওয়ান স্টপ ফ্যাসিলিটির অকার্যকারিতা। যোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামো সমস্যা তো রয়েছেই। ভালো বা খারাপ নয়, বরং এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা।’ এই অভিমত অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই ব্যবসা সংক্রান্ত সব কাজ ওয়ান স্টপ পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া, অন্যসব অফিসিয়াল কাজ অনলাইন ভিত্তিক করতে হবে এবং প্রতিটি আবেদনের জবাব দিতে হবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
দেশের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শ্রমের উৎপাদনশীলতা। এ ক্ষেত্রেও যে দেশ যত বেশি উন্নতি করে সে দেশের উন্নতি তত বেশি ত্বরান্বিত হয় এবং বিশ্বায়ন মোকাবেলায় সফল হয়। কারণ, শ্রমের উৎপাদনশীলতার সক্ষমতার সাথে উন্নতি ও পণ্যের ম‚ল্য সংশ্লিষ্ট। তাই বেশিরভাগ দেশ তার শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। আমাদের দেশে তার চিত্র ভিন্ন, বিশ্ব পর্যায়ের তুলনায় অতি নিম্নতর! ‘এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের ডাটাবুক-২০১৮’ মতে, ১৯৯০-২০১৬ সাল পর্যন্ত শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে প্রথম অবস্থানে আছে চীন (৮.৭%), দ্বিতীয় ভিয়েতনাম (৫%), তৃতীয় ভারত (৪.৯), চতুর্থ শ্রীলংকা (৩.৯), পঞ্চম বাংলাদেশ ও মিয়ানমার (৩.৫%), ষষ্ঠ থাইল্যান্ড (৩.৩%), সপ্তম পাকিস্তান (২.১% ), অষ্টম নেপাল (১.৮)। অর্থাৎ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আমরা চীনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ কম। শ্রমের এই উৎপাদনশীলতা কম হওয়ার কারণেই আমরা বিশ্বায়ন মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হচ্ছি! কারণ, আমাদের পণ্যম‚ল্য অধিক। উপরন্তু বেশিরভাগ পণ্যের মানও খারাপ। অপরদিকে, অন্য দেশের শ্রমের উৎপাদনশীলতা অধিক। তাই তাদের উৎপাদিত পণ্যমূল্য কম, মানও ভালো। তাই তাদের পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় আমাদের পণ্য টিকতে পারছে না। ফলে লোকসানের ভারে ন্যুজ হতে হতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। একই কারণে আজ দেশের কৃষি খাতও চরম হুমকির মুখে পড়েছে। অপরদিকে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অবস্থা শোচনীয়। তাই প্রায় সব কাজ কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারে না। এতে করে ব্যয় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। দ্বিতীয়ত প্রায় প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উপরন্তু কাজের মানও চরম খারাপ!
দেশে শ্রমের উৎপাদনশীলতা অতি নিম্ন হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। অন্যতম হচ্ছে অদক্ষতা। শিক্ষা পদ্ধতি আধুনিক বা কর্মমুখী নয়। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাঙ্গনে যা শিখছে, কর্মক্ষেত্রে এসে তারা তার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে তাদের আউট পুট ভালো হচ্ছে না। এছাড়া, উৎপাদনশীলতা কম হওয়ার আরও কারণ হচ্ছে: ভয়াবহ দুর্নীতি, দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির কারণে অনুপোযুক্ত লোক কর্মে নিয়োজিত হচ্ছে। ফলে তাদের কর্মের আউট পুট ভালো হচ্ছে না। সর্বোপরি দেশের শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পরিবেশও অনুকূল নয়। মেশিন পত্র সেকেলে, ভাঙ্গাচুরা ও মিস ম্যানেজমেন্ট। মিস ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে শিক্ষার সাথে কাজের অসামঞ্জস্যতা। যেমন: বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনকারীকে প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে জনসংযোগ বিভাগে পোস্টিং না দিয়ে সেখানে পোস্টিং দেওয়া হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বা অন্য বিষয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারীকে। আর সাংবাদিকতায় সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারীকে পোস্টিং দেওয়া হয় মনিটরিং বা অন্য কোনো বিভাগে। ফলে সংশ্লিষ্টরা তার কর্মে মনোনিবেশ করতে পারে না। বিজ্ঞান বিষয়ের ক্লাস সাধারণ বিভাগের শিক্ষক নিলে যা হয়, তাই হচ্ছে। এর ফলে কাজের আউট পুট ভালো হচ্ছে না স্বাভাবিকভাবেই। এই ধরনের অবস্থা সরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই বিদ্যমান। ব্যাংকের অবস্থাও তদ্রুপ। বিজ্ঞানের ডিগ্রীধারীকে করা হয় ক্যাশিয়ার আর বাণিজ্যের ডিগ্রীধারীকে করা হয় প্রশাসক। এভাবে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসামঞ্জস্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত: চাকরিতে প্রবেশ করার পর উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতি বেশিরভাগ কর্মচারীর ভাগ্যে জোটে না। যারা এসবের শিকার, তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আর হতাশায় নিমজ্জিত মানুষের উৎপাদনশীলতা কখনই কাক্সিক্ষত হয় না। অপরদিকে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বড় অন্তরায় হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ন। পশ্চিমা দেশগুলোতে ওয়ার্কিং আওয়ারে ট্রেড ইউনিয়ন এক্টিভিটিজ করার রীতি নেই। তাই তারা এসব করে ওয়ার্কিং আওয়ার শেষ হওয়ার পর। আর আমাদের দেশে তার বিপরীত। আর সরকারী দলের নেতা-কর্মী হলে তো কথাই নেই। তাকে কোন ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কারও নেই। একই অবস্থা ছাত্র ও পেশাজীবীদের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান। যা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির চরম অন্তরায়। অপরদিকে, উৎপাদনশীলতা স্বল্প হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে: কর্মের জবাবদিহিতার প্রচন্ড অভাব। অন্যদিকে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সাথে অটোমেশন, রোবট, ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদির ব্যবহার সংশ্লিষ্ট রয়েছে। বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে পশ্চিমাদেশগুলো এবং এশিয়ার চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি দেশ এসব আধুনিক প্রযুক্তি ব্যাপকহারে ব্যবহার করছে। তাদের উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবশ্য এ দেশেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব ব্যবহৃত হচ্ছে। যার মধ্যে গার্মেন্ট উল্লেখযোগ্য। আবার অটোমেশন, রোবট, ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যত ব্যবহার হবে, মানুষ তত বেশি কর্মহীন হবে। ফলে বেকারত্বের হার আরও বাড়বে। যেমন: ‘একেকটি রোবট দেড় ডজনেরও বেশি মানুষের সমান কাজ করতে পারে’ বলে সম্প্রতি প্রকাশিত অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তাতে আরও বলা হয়েছে, ‘২০৩০ সাল নাগাদ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের দুই কোটি মানুষের চাকরি দখল করবে রোবট।’ একই অবস্থা অন্যসব খাতেও সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ প্রযুক্তি ক্রমান্বয়ে মানুষের স্থান দখল কর নিচ্ছে এবং তা ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তবুও আধুনিক যুগে টিকে থাকতে হলে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতেই হবে এবং তা সর্বক্ষেত্রেই। নতুবা দেশের শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে না। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সাথে মানুষের সুস্বাস্থ্যেরও সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ যদি রোগা হয়, তাহলে তাকে দিয়ে কর্ম ভালো হবে না।
মানুষের সুস্বাস্থ্যের সাথে মানসম্মত খাদ্য, পরিবেশ, বিনোদন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা প্রতিবেদন স্মরণীয়। বিলস এর গবেষণা মতে, ‘ঢাকায় বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রিকশা চলছে। কিন্তু তাদের আয় রোজগার আগের চাইতে বাড়লেও জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি। বিশেষ করে তাদের বিশ্রাম, খাবার দাবার, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের সংকটে ভুগতে হয়। তথ্যমতে, ঢাকার ৯৪% রিকশা চালকই অসুস্থ থাকেন। বিশেষ করে জ্বর-কাশি, ঠান্ডা, গায়ে ব্যথা, দুর্বলতা লেগেই থাকে। সেই সঙ্গে ৩০% জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। তার কারণ তাদের জন্য রাস্তাঘাটে সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা নেই। এছাড়া টয়লেটের সংকটের ভুগতে হয়। উপরন্তু বেশিরভাগ রিকশাওয়ালা তাদের দিনের খাওয়া সারেন বিভিন্ন ছাপড়া দোকানে রুটি, কেক ও চা খেয়ে। সব মিলিয়ে এই রিকশা চালকরা বড় ধরনের স্বাস্থ্য-ঝুঁকিতে থাকেন’-বিবিসি। একই অবস্থা দেশের বেশিরভাগ শ্রমিকের। অপরদিকে, দেশের পরিবেশের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ, বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। তাই অসংখ্য মানুষ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। শুধুমাত্র বায়ু দূষণের কারণে বছরে ২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে ‘হু’র অভিমত। এছাড়া, মাদকে দেশ সয়লাব হয়ে গেছে। মাদকাসক্তের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, ভেজাল নকল নেই এমন খাদ্য পাওয়া কঠিন। মোবাইল আসক্তির সংখ্যাও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসবে যুব স¤প্রদায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসা ব্যবস্থা চরম অপ্রতুল। যেটুকু আছে, তাও খুবই ব্যয়বহুল, ঝামেলাপ‚র্ণ ও নিম্নমানের। কোন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসা করতে নিয়ে গেলে এই হাসপাতাল তো সেই হাসপাতালে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি করতে করতে সঙ্গের সুস্থ লোকও অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর চিকিৎসাকামী লোক আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। উপরন্তু চিকিৎসক, ডায়াগনিক টেস্ট ও ওষুধের মান-হীনতার কারণে একটা রোগ নিরাময় করতে গিয়ে নতুন কয়েকটি রোগ সৃষ্টি হয়। তাই দেশের বেশিরভাগ মানুষ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আর অসুস্থ মানুষের কাছে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি কামনা করা বৃথা। এই জটিললতার কারণে আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে-‘রোগ নিরাময় নয়-প্রতিরোধ করা’ এ দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি মানুষকে সুস্থ ও সাবলীল রাখতে হবে। তবেই উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এ জন্য প্রয়োজন দেশের সব হাসপাতালকে স্বয়ংসম্পন্ন করা, তথা এক ছাতার নীচে আনা। যাতে কোনো পরীক্ষার জন্য অন্য কোথাও যেতে না হয়। এছাড়া, চিকিৎসা, টেস্ট, ওষুধ ইত্যাদির মান ভালো ও স্বল্পম‚ল্যের করা। অন্যদিকে, ভয়াবহ যানজট, নিরাপত্তাহীনতা, জ্বালানি সংকট ইত্যাদি দূর করতে না পারলে শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে না। এসব সমস্যা উৎপাদনশীলতার সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট। মোট কথা দেশের উন্নতি ও বিশ্বায়ন মোকাবেলার জন্য দেশের শ্রমের উৎপাদনশীলতা ও ব্যবসা সহজী-করণ বিশ্ব পর্যায়ের করতেই হবে। তা করতে হলে বর্ণিত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অবিলম্বে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।