পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
টানা তৃতীয়বারের মতো রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সদ্য সমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৪৩ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ঘাটতি ২৪.৪৬ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা ১৪ হাজার ৬৫ কোটি। দেশে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক থাকলেও রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র আড়াই শতাংশ। যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ওভার ইনভয়েজিং, আন্ডার ইনভয়েজিংসহ মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি, সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি, দেশে চোরাচালান বৃদ্ধিসহ নানা কারণে রাজস্ব আহরণের হার কমছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি হ্রাস, তেল আমদানি কমে যাওয়া, কাস্টম হাউসে জনবল সঙ্কট এবং নির্বাচনের বছর হওয়ায় রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। আর এ কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি।
দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরভিত্তিক সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের নৌ-বাণিজ্যের প্রায় ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার এবং ৯২ শতাংশ পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। গেল অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি এবং সেইসাথে জাহাজ আসা-যাওয়ার হার বেড়েছে। গোটা অর্থ বছর জুড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে বড় ধরনের কোন জটও ছিল না।
অর্থ বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কারণে কিছুটা স্থবিরতা ছিল। তবে বাকি সময় অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ অন্যান্য সড়কে পণ্য পরিবহনে ছিল না কোন প্রতিবন্ধকতা। ওই অর্থ বছরে জাতীয় নির্বাচন হলেও রাজনীতির মাঠে অস্থিরতা হয়নি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করলেও বিরোধীরা নতুন নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামেনি। ফলে রাজনীতির মাঠেও নেই কোন অস্থিরতা। এরপরও রাজস্ব আদায় পিছিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে প্রায় টানা ছয় মাস রাজপথে বিরোধী দলের আন্দোলন ছিল। অথচ সে বছর আগের বছরের তুলনায় রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ শতাংশ। পরবর্তী আরও তিনটি অর্থ বছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয় যথাক্রমে ১৫, ১৭ এবং ১৬ শতাংশ। তবে এবার এ প্রবৃদ্ধি মাত্র আড়াই শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৭ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। অর্থ বছরের শেষ দিন রোববার পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৪৩ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। তার আগের অর্থ বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে মাত্র এক হাজার ৬১ কোটি টাকা।
আমদানি-রফতানি সংশ্লিষ্টদের মতে, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। প্রতিনিয়তই মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকির চালান ধরা পড়ছে। তবে যে পরিমাণ চালান আটক হচ্ছে তার কয়েক গুণ পার হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে কাস্টম হাউসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনাও অনেকাংশে দায়ী।
একশ্রেণির অসাধু আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সাথে কাস্টম হাউস সংশ্লিষ্ট কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটছে। এর ফলে রাজস্ব আদায় চাপের মুখে পড়েছে। সরকারি দলের নেতা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শুল্ক কম দিয়ে চালান ছাড়িয়ে নিতে নানান দেন-দরবারও করছেন। তাদের আবদার রাখতে গিয়েও শুল্ক আহরণ হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শুল্ক আহরণে সøথ গতিসহ নানা কারণে গেল অর্থ বছরে দুইজন কাস্টম কমিশনারকে বদলির ঘটনাও ঘটে।
মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকির কারণে রাজস্ব আহরণ চাপের মধ্যে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলম। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, এ প্রবণতা রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সতর্ক নজরদারির ফলে বেশ কয়েকটি বড় বড় চালান ধরাও পড়েছে। বন্ডের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে কাপড় এনে খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে দেশি কারখানাগুলো মার খাচ্ছে।
নতুন অর্থবছরে পুরোদমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা নিয়েছেন জানিয়ে কাস্টম কমিশনার বলেন, দেশে ক্রমবর্ধমান আমদানি-রফতানির মধ্যেও অনুমোদনের চেয়ে কম জনবল নিয়ে কাজ করছি। অন্যদিকে শুল্ক আহরণ স্বাভাবিক রাখতে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকিসহ কাস্টম সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম, দুর্নীতি কঠোরহস্তে প্রতিরোধে হার্ডলাইনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।