Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রাম কাস্টমসে জালিয়াত চক্র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

জালিয়াত চক্রের কব্জায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সম্প্রতি বদলি হওয়া দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় বহু সংখ্যক চালান খালাস করে নেওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধরা পড়ে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রাথমিক অনুসন্ধানে কমপক্ষে ৮৫০ কোটি টাকার চালান খালাসে জড়িত সাতটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এরমধ্যে দু’টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঢাকার রমনা থানায় মামলা হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি পাঁচটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়াও চলছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিপুল সংখ্যক সন্দেহজনক চালান খালাস করে নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি অনুসন্ধানে জানতে পারে, কাস্টম হাউসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বদলি হওয়া কাস্টম কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি ব্যবহার করে এসব চালান খালাস করে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে যেসব চালান খালাস করে নেয়া হয়েছে তাতে কি পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, জালিয়াতির বিষয়টি শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর তদন্ত করছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিষয়টি তদারক করছে। ইতোমধ্যে সাতটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে। প্রসঙ্গত কাস্টম হাউসে ২০১৩ সাল থেকে অনলাইনে শুল্কায়ন কার্যক্রম চলছে। অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড নামের সফটওয়্যারের মাধ্যমে কাস্টমসের বেশিরভাগ কাজই অনলাইনে সম্পন্ন হয়। এ পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য কাস্টমস কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি দেওয়া হয়। ওই আইডি ব্যবহার করে তারা শুল্কায়ন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। জালিয়াত চক্রটি বদলি হয়ে যাওয়া কয়েকজন কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক চালান খালাস করে নিয়ে যায়।

এদিকে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করে শুল্কফাঁকির মধ্যেই জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য খালাসের এসব ঘটনা ধরা পড়লো। সংশ্লিষ্টদের মতে, নানা উপায়ে শুল্কফাঁকি ও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে চাপের মুখে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আদায়। দেশে আমদানি বাড়লেও সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারী এ প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আদায় নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় ২৩ শতাংশ কম হয়েছে।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৭ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। গতকাল পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। এ সময় পর্যন্ত আদায়ের টার্গেট ছিল ৩০ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। ঘাটতির আকার দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ১১০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের এ সময়ের তুলনায় রাজস্ব আদায় বেড়েছে মাত্র এক হাজার ২৬২ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলেও গত অর্থবছরের তুলনায় বেশি আদায় হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে রাজস্ব আদায়ের হার আরও বাড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম কাস্টমস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ