Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাড়ল গ্যাসের দাম

নতুন দামে ৩২.৮ শতাংশ বৃদ্ধি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দুই বছর চার মাস পর আবার বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। গণশুনানির জনমত উপেক্ষা করেই এই মূল্যবৃদ্ধি করা হলো। নতুন মূল্যে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৩২.৮ শতাংশ। ফলে গ্রাহকদের আগের চেয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি মূল্য পরিশোধ করে গ্যাস ব্যবহার করতে হবে। আজ সোমবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এর আগে ২০১৭ সালে গ্যাসের দাম গড়ে ২২.৭০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। ওই বছরের মার্চ ও জুলাইয়ে দুই ধাপে তা কার্যকর হয়।

বিইআরসির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্যাসের দাম ৩২.৮ শতাংশ বৃদ্ধি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এই দাম অনুযায়ী, এক চুলার জন্য গ্রাহকদের ৭৫০ টাকার বদলে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার গ্রাহকদের ৮০০ টাকার বদলে ৯৭৫ টাকা করে গুনতে হবে। বলা হয়, আবাসিকে প্রিপেইড মিটারে প্রতি ঘনমিটার ১২.৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান ও রহমান মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, গ্যাসের গড় দাম ঘনমিটারে ৭.৩৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৮০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার বিদ্যুতের জন্য গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৪৫ টাকা, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ উৎপাদন (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটার ১৩.৮৫ টাকা, সার কারখানায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারের দাম পড়বে ৪.৪৫ টাকা। এ ছাড়াও শিল্পে ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটার ১০.৭০ টাকা, চা বাগানে ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটিার ১০.৭০ টাকা, বাণিজ্যিক খাতে হোটেল-রেস্টুরেন্টে ২৩ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১৭.০৪ টাকা ও সিএনজিতে ৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতি ঘনমিটার সিএনজির মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা এবং অপারেটর মার্জিন ৮ টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিইআরসিতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম গড়ে ১০২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। বাসাবাড়িতে এক চুলার বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৪০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ, সিএনজি, সার, ক্যাপটিভ পাওয়ার, শিল্প-বাণিজ্যসহ সব খাতে গ্রাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এ নিয়ে গত মার্চে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। বিইআরসি আইন অনুসারে শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনকে সিদ্ধান্ত জানাতে হয়। গতকাল ৩০ জুন সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই দাম বৃদ্ধি করা হলো।

বিইআরসির আইনে বলা হয়েছে, কমিশন যদি মনে করে কোম্পানির কাছ থেকে আরো তথ্য নিতে হবে তাহলে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে। এর আগে গত বছরের জুনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে গণশুনানি হয়েছে। কিন্তু সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সে আশঙ্কায় তখন দাম বাড়ানোর গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়নি। এ জন্য বিইআরসিকে ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর সরকারকে তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার সুপারিশ করে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দিতে হয়।

বিইআরসি সচিব রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত (গতকাল) এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩-এর ধারা ২২(খ) এবং ৩৪ অনুযায়ী গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিষয়ে আগ্রহী পক্ষদের শুনানিপূর্বক বিস্তারিত আলোচনা করে এই মূল্য বাড়ানো হলো। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন সব ভোক্তা পর্যায়ে নতুন এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিকে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অভিহিত করে গতকালই প্রতিবাদ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। বিবৃতিতে জোটের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের দায় জনগণের ওপর চাপাতে বিইআরসি গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে সব বাম প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, জোট, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি-গোষ্ঠীকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সরকারের এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে সই করেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, খালেকুজ্জামান, শাহ আলম, সাইফুল হক, বজলুর রশীদ ফিরোজ মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, জোনায়েদ সাকি, মোশাররফ হোসেন নান্নু, মোশরেফা মিশু, হামিদুল হক, শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, আকবর খান, ফিরোজ আহমেদ।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম অনেক বেশি। আর দেশে ক্রমান্বয়ে গ্যাসের চাহিদাও বাড়ছে। চাহিদা অনুযায়ী, এলএনজি আমদানি করতে হলে সরকারকে আরো অনেক বেশি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। কাজেই গ্যাসের দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের সামনে কোনো বিকল্প ছিল না। পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, এত দিন আমদানি কম হওয়ায় সরকারের ওপর লোকসানের চাপ বেশি হয়নি। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এলএনজি আমদানিতে সম্পূরণ শুল্ক, কাস্টমস ডিউটি ও অগ্রিম বাণিজ্য ভ্যাট প্রত্যাহার করায় গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত ছিল। আমদানি এক হাজার এমএসিএফডি ছাড়ালে দাম বাড়ানোর তোড়জোড় আরো আগে থেকেই শুরু হতো।

সূত্র জানায়, কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের পর গত বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ এলএনজি যুগে প্রবেশ করে। কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে ওই টার্মিনালের মাধ্যমে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেয়া হচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে সর্বোচ্চ এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার টার্গেট ছিল সরকারের। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় সরকার এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। জানতে চাইলে কমিশনের এক সদস্য বলেন, তারা গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি আগেই দেয়া হয়। আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে জুলাইয়ে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হলো।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, গ্যাস চুরি ওপেন সিক্রেট। গ্যাস খাতে লোকসান কমাতে হলে প্রথমে চুরি ঠেকাতে হবে। পাশাপাশি সাগর ও স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর জোর দিতে হবে। দেশীয় গ্যাস পেলে ভোক্তার কাছে কম টাকায় সরবরাহ করা যাবে। এলএনজি আমদানি করে গ্যাস সঙ্কট দূর করা যাবে না।



 

Show all comments
  • হিমু আহমেদ ১ জুলাই, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    দেয়ালে পিঠ ঠেকতেছে সবার।এরা যা খুশি তাই করতেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মিথী মারজান ১ জুলাই, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
    আমাদের এখানে তো বেশিরভাগ সময় গ্যাস-ই থাকেনা। তার উপর দাম বাড়ালে কেমন রাগটা লাগে!
    Total Reply(0) Reply
  • Mizanur Rahman ১ জুলাই, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
    প্রতিবছর '৮০-৯০' হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি না করলে রাষ্ট্রের কোষাগার ভরবো কী করে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Latif ১ জুলাই, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    Why this massive budget??? We don't need this budget that increases the costing of basic needs.
    Total Reply(0) Reply
  • Murtuza Chowdhury ১ জুলাই, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে, পন্য পরিবহনে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Jubaier Ahmed ১ জুলাই, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    চিন্তাহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন পরিকল্পনায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সচল রাখতে সরকারের এ ধরনের ভূমিকা জনগণের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। সরকারের সেবার মান ও জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ভূমিকা ইতিমধ্যে যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ!
    Total Reply(0) Reply
  • Parvez Mamoon ১ জুলাই, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
    সরকার যদি মনে করে তারা জনগনের কল্যাণ চান তাহলে গ্যাসের দাম যেন বৃদ্ধি না করে কারন এতে অনেক অনেক জিনিষপত্রের দাম, বাসাবাড়ির ও পরিবহন ভাড়া অতিরিক্ত মাত্রায় সুবিদাভোগিরা বাড়িয়ে দিবে এতে সাধারণ মধ্য ও নিন্ম মধ্যবিত্ত মানুষজনেরা আর্থিকভাবে চরম কষ্ট ও ভোগান্তিতে পড়বে এবং সরকারের প্রতি সাধারন মানুষের ঘৃনা বেড়ে যাবে!
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Abdul Alim ১ জুলাই, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
    জনগণ এখন মালিকানাধীন পোষ্য প্রানী, সুতরাং মালিকের সুবিধাটায় এখানে প্রধান এবং একমাত্র বিবেচিত বিষয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahidul Alam Mazumder ১ জুলাই, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
    সাধারণ মানুষ যা আয় কবে তার ৫০℅ সরকারকে দিয়ে দিতে হবে, এখন তো ব্যাংক,শেয়ারবাজার খাওয়া শেষ বাকি শুধু সাধারন জনগণ
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar Hossain ১ জুলাই, ২০১৯, ১:২৬ এএম says : 0
    সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি পায় সুযোগ সুবিধা পাবেন কিন্তু বেসরকারি চাকরি করে তাদের কি হবে এই ভাবে গ্যাস বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ানো হলে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ