বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সোনাইমুড়ীতে এক কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ২০ টাকার প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে চার শিশুকে ধর্ষণ করেছে এক ব্যক্তি। এছাড়া খাগড়াছড়ির রামগড়ে এক গৃহবধূ, সিলেটে স্কুল থেকে ফেরার পথে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী, ফটিকছড়িতে ৯ মাসের শিশু, কলাপাড়ায় ১১ বছরের কন্যা শিশু, ও ফেনীর পরশুরামে এক কিশোরীকে রাতভর ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ মামলায় ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

নোয়াখালী : বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা থেকে পাশ্ববর্তী সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নে নিয়ে এক কিশোরী (১৭)কে তিন বন্ধু মিলে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় ভিকটিমের কথিত প্রেমিক রফিকুল ইসলাম হয় (২৬) কে আটক করেছে পুলিশ।

ঘটনায় গতকাল সকালে ভিকটিম বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে সোনাইমুড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামীরা হলো, রফিকুল ইসলাম জয় (২৬), সাজ্জাদ হোসেন বাবু (২৮) ও সাইফুল ইসলাম (২০)। ভিকটিম বেগমগঞ্জ উপজেলার তিতা হাজেরা এলাকার মহি উদ্দিনের মেয়ে।

পুলিশ জানায়, বেগমগঞ্জের আপানিয়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জয় বুধবার তিতা হাজরা এলাকার বাসিন্দা কিশোরী (১৭)কে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পাশ্ববর্তী সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন বাবুর বাড়ীতে নিয়ে যায়। পরে ওইদিন রাতে থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জয়, বাবু ও সাইফুল পাঁচ বার ভিকটিমকে গণধর্ষণ করে। বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের নজরে আসলে তারা গভীর রাতে থানায় খবর দেয়।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সামাদ জানান, খবর পেয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার ও ঘটনাস্থল থেকে মামলার প্রধান আসামি জয়কে আটক করা হয়েছে। ডাক্তারি পরিক্ষার জন্য ভিকটিমকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মামলার অপর আসামিদের গেফতারের চেষ্টা চলছে।
গাজীপুর : গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে চার শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তির নাম জসিম উদ্দিন (৫৫)। জসিম উদ্দিন বরিশাল জেলার কর্ণকাঠি গ্রামের মৃত আমজাদ আলীর ছেলে। তিনি বনমালা টেকপাড়া এলাকায় মুদির দোকান করেন।

টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের ওসি মো. কামাল হোসেন জানান, ধর্ষক জসিম উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার বিকেলে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী এক শিশুকে ধর্ষণ করে। এসময় স্থানীয়রা তাকে বনমালা এলাকা থেকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণকারী জসিম জানায়, মাত্র ২০ টাকার লোভ ও ভয় দেখিয়ে গত সোমবার থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুরে একে একে চার শিশুকে ভাড়া বাড়ির একটি কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে। গত বৃহস্পতিবার ৬ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করলে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা অভিযুক্ত জসিমকে বনমালা থেকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। ধর্ষিত শিশুদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জসিম ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ির রামগড়ে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের সময় অহিদুর রহমান (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলার রামগড়ের পাতাছড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের হাতে আটক অহিদুর রহমান রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের মধুপুর এলাকার মফিজুর রহমানের ছেলে। ধর্ষিতা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অহিদুর রহমান ওই নারীর বাড়ির পাশে একটি বাগান দেখাশুনার সুবাধে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। ঘটনার দিন রাতে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে থাকার সময় জানালা দিয়ে প্রবেশ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে অহিদুর। এ সময় তার পাশে ঘুমিয়ে থাকা শিশু সন্তানসহ ধর্ষিতার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ধর্ষককে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষককে আটক করে। এ ব্যাপারে ধর্ষিতা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রামগড় থানায় মামলা দায়ের করেন।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১১ বছরের এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের এ ঘটনায় রক্তক্ষরণে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পরলে স্বজনরা শিশুটিকে উদ্ধার করে গত বুধবার রাতে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাতেই দ্রুত পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। বর্তমানে শিশুটি পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ওই শিশু জানায়, বুধবার শেষ বিকেলে স্থানীয় বাজারে একটি মোবাইল মেরামতের দোকান থেকে তার মায়ের মোবাইল নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। এসময় পথিমধ্যে একই এলাকার আনোয়ার সরদারের ছেলে শাহীন সরদার (২৩) তার মুখ চেপে ধরে পার্শ্বের একটি জঙ্গলে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় বাড়িতে পৌছান।

কলাপাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান জানান, শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল এবং ইনজুরি ছিল। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রæত পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে প্রেরন করেন।
ফটিকছড়ি : ফটিকছড়িতে চাচার হাতেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯ মাসের এক শিশু! গত বুধবার রাতে মামালা হওয়ার গতকাল বিষয়টি জানাজনি হয়। অভিযুক্ত চাচার নাম মোজাম্মেল হক (২৬)। সে ওই বাড়িরর মৃত ইয়ার মুহাম্মদের তৃতীয় পুত্র। সে সম্পর্কে শিশুটির আপন চাচা।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার পূর্ব ফরহাদাবাদের খাস মোহাম্মদ তালুকদার বাড়িরতে এ ঘটনা ঘটে। শিশুটির মা চাচার হাতে তার মেয়েকে রাখতে দিয়ে ঘরের কাজ করছিল। কিছুক্ষণ পর মা শিশুটির সজোর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে ফিরে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তাকে। এ সময় চাচা মোজাম্মেল হক দৌঁড়ে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। তবে ঘটনাটি লুকোতে চেষ্টা করে এয়ার মোহাম্মদ পরিবার। কিন্তু গত বুধবার (২৬ জুন) রাতে ভিকটিমের মামা বাবর বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় ধর্ষণ দায়ের করলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে চলে আসে। বর্তমানে শিশুটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে। এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ বাবুল আকতার বলেন, অভিযুক্ত ধর্ষককে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’
বিশ্বনাথ (সিলেট) : স্কুল থেকে বাড়ি ফিরার সময় পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে জোর করে নিয়ে পাশের নির্জনস্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেছে এক লম্পট। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশুটি এখন হাসপাতালে। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের বিশ্বনাথে। উপজেলার মুফতিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সে। তাকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গত বুধবার বিকেলে বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের চৌধুরীগাঁও গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুস শুকুরের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এলাকার মাতব্বরা তৎপর বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানাগেছে, উপজেলার মুফতিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী গত বুধবার বিদ্যালয় থেকে বাড়ি যাচ্ছিল। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে স্থানীয় চৌধুরীগাঁও গ্রামের আবুল কাহার তাকে জোর করে পাশেই দেয়াল দিয়ে ঘেরা টিউবওয়েলের চাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ধর্ষণ করে তাকে। এ সময় ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন তারা। বর্তমানে ওই ছাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

ফেনী : ফেনীর পরশুরামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া এক কিশোরীকে (১৮) বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে পরশুরাম থানায় মামলা হয়েছে। কিশোরীর বাড়ি ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ সতর গ্রামে। গতকাল শুক্রবার কিশোরীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ফেনী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে ।
জানা গেছে, পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নে বড় বোনের স্বামীর বাড়িতে কিশোরী বেড়াতে গেলে পূর্ব পরিচিত একই উপজেলার বাহারের ছেলে রাসেল (২৬) গত বুধবার সন্ধ্যায় কৌশলে কিশোরীকে মধুগ্রামের কামাল ডাক্তারের খালি বাড়ির ঘরের ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে রাসেল ও তার কয়েকজন সহযোগীসহ রাতভর কিশোরীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। গত বৃহস্পতিবার ভোরে ফজরের নামাযের জন্য মুসল্লিরা রাস্তায় বের হলে কিশোরীর চিৎকার শোনে এগিয়ে গেলে রাসেল ও তার সহযোগিরা পালিয়ে যায়। পরশুরাম থানার ডিউটি অফিসার এসআই মোঃ কামরুল বিকেলে জানান, আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।