Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রিফাতের দুই খুনির যত অপকর্ম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ২৮ জুন, ২০১৯

বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে রিফাত শরফিকে কুপিয়ে হত্যাকারী কারা- এ প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে। হঠাৎ করেই কি দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেছে, নাকি পূর্বেও অপরাধ জগতের সঙ্গে সখ্যতা ছিলো তাদের। অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে তাদের অপকর্মের নানা খতিয়ান। ছিনতাই, মাদক, হামলাসহ নানা অপরাধের হোতা এই দুই খুনী।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্র বলছে, হত্যাকারী দুই জনের একজন রিফাত ফরাজী, আরেকজন নয়ন (২৫) বন্ড। দু’জনই অনেক আগে থেকেই অপরাধ জগতের পরিচিত মুখ। তাদের কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ।

মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে খুনের মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন নয়নকে যিনি এলাকায় ‘নয়ন বন্ড’ নামেও পরিচিত। দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজি, তিন নম্বর আসামি রিশান ফরাজি, চার নম্বর আসামি চন্দন। এর মধ্যে চন্দনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন ও ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে যুক্ত ছিল খুনী রিফাত ফরাজী। এ কারণে স্থানীয়দের কাছে আতঙ্ক সে। রিফাতের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের ওপর হামলা, মারধর ছিল খুনী রিফাতের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এসব অপরাধে কয়েকবার গ্রেফতার হলেও অজ্ঞাত এক কারণে খুব স্বল্প সময়েই মুক্তি পেয়ে যায় সে। ২০১৭ সালের ১৫ই জুলাই সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলাম (২১) নামে এক প্রতিবেশীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে রিফাত ফরাজী।
ঘটনার শিকার তরিকুল জানান, একদিন সামান্য কথা কাটাকাটি হয় রিফাত ফরাজীর সঙ্গে। তখন রিফাত ফরাজী তাকে কুপিয়ে জখম করার হুমকি দেন। রিফাত ফরাজীর ভয়ে তিনি দেড় মাস রিফাত ফরাজীর বাসার সামনে দিয়ে না গিয়ে আধা কিলোমিটার পথ ঘুরে তার বাসায় যাওয়া আসা করতেন। হুমকি দেয়ার দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর একদিন সন্ধ্যায় রিফাত ফরাজীর বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে তাকে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মাথায় গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় তরিকুলের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

একই বছর রিফাত বরগুনার হোমিও চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন আহমেদের ডিকেপি রোডের বাসার ছাত্র মেসে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের মুখে সব ছাত্রদের জিম্মি করে ১৪টি মোবাইল ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলে পুলিশ রিফাতের বাবা দুলাল ফরাজীকে আটক করে মোবাইলগুলো উদ্ধার করেন।
বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা মারজানা মনি বলেন, ২০১৭ সালের রমজানে আমার একমাত্র ছোট ভাই হাফেজ মো. মেহেদী হাসান বরগুনার হোমিও চিকিৎসক আলাউদ্দিন ডাক্তারের বাসা সংলগ্ন মসজিদে তারাবির নামাজ পড়াতো। ওই সময় একদিন রিফাত ফরাজী মেহেদীর কাছ থেকে স্যামস্যাং গ্যালাক্সি কোর প্রাইম মডেলের বিদেশ থেকে আনা একটি ফোন ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি রিফাত ফরাজীর মা-বাবাসহ স্থানীয় অনেককে জানানোর পরও মোবাইলটি কেউ উদ্ধার করে দিতে পারেনি। পরে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করার পর সাড়ে সাত হাজার টাকার বিনিময়ে মোবাইলটি ফিরিয়ে দিয়ে হুমকি দেয় রিফাত ফরাজী। মনি বলেন, তার হুমকিতে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে আসে আমার ভাই।

অপর খুনী নয়ন বন্ডের (২৫) বাসা বরগুনা সরকারি কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিমে বরগুনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে। নয়নের বাবা মরহুম মো. ছিদ্দিকুর রহমান। দুই ভাইয়ের মধ্যে নয়ন ছোট। নয়নের বড় ভাই মিরাজ দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুর প্রবাসী হওয়ায় মাকে নিয়েই ওই বাসায় বসবাস করছে নয়ন। ২০১৭ সালের ৫ই মার্চ রাত ১১টার দিকে নয়ন বন্ডের বাসায় অভিযান চালায় বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় বিপুল পরিমাণ মাদক, দুটি দেশীয় অস্ত্র ও এক সহযোগীসহ নয়ন বন্ডকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসব মাদকের মধ্যে ছিল ৩০০ পিস ইয়াবা, ১২ বোতল ফেনসিডিল ও ১০০ গ্রাম হেরোইন।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বরগুনা সদর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগি ইমামের বিরুদ্ধে। পরে তাদের জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর স¤প্রতি জামিনে বেরিয়ে আসে নয়ন বন্ড। জেল থেকেই বেরিয়ে মূলত এ হত্যাকান্ড ঘটায় সে।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ওসি আবীর হোসেন মাহমুদ বলেন, নয়ন বন্ডের মাদক বাণিজ্যের কথা আমরা জানি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলার কথাও আমরা জেনেছি। এর আগে নয়ন ও তার সহযোগি জেল খেটেছে। জামিনে তারা বেরিয়ে যায়। ওসি বলেন, রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডে জড়িত সবাইকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে যারা দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। একাধারে রিফাতকে কুপিয়ে বীরদর্পে অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে হামলাকারীরা। তারা চেহারা লুকানোরও কোনও চেষ্টা করেনি। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যায়।

 



 

Show all comments
  • হুমায়ুন খালিদ ২৮ জুন, ২০১৯, ১:৩১ এএম says : 0
    এ ভাবে একটি দেশ চলতে পারে না
    Total Reply(1) Reply
    • MAHMUD ২৮ জুন, ২০১৯, ১১:৪৫ এএম says : 4
      Bhai Deshto unnoner joar nia cholitese.
  • মাহিদুর রহমান ২৮ জুন, ২০১৯, ১১:১৭ এএম says : 0
    আমি একটা রিপোর্ট লেখানোর পয়োজন ছিলও..
    Total Reply(0) Reply
  • mahmud hamidi ২৯ জুন, ২০১৯, ১০:১৮ এএম says : 0
    ইনকিবাল একটি সমকালিন পত্রিকা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কর্ম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ