যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
প্রতি বছরের মতো এবারো খুব গরম পড়েছে। ব্যস্ত নগরজীবনে অসহনীয় যানজট, ধুলোবালু, গুমোট আবহাওয়া, পর্যাপ্ত মুক্ত বাতাসের অভাব, প্রখর রোদ, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির অভাব এবং ঘন ঘন লোডশেডিং এই গরমকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। গরমে ডায়রিয়া, পানিশূণ্যতা, পেটের পীড়া, টাইফয়েড জ্বর, চর্মরোগ ইত্যাদি স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। এই দুঃসহ গরমে যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ পড়তে পারেন অসুস্থতায়। আবহাওয়ার তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে মানবদেহের তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। তাই এসময়ে কেউ যদি নিজের দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার কৌশল আয়ত্ত করতে পারেন তাহলেই সম্ভব অসুস্থতার হাত থেকে রেহাই পাওয়া ।
১. কমিয়ে আনুন শারীরকি পরিশ্রম-গরমে বেশি ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। ব্যায়ামে বাড়বে শরীরের তাপমাত্রা। তবে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে যেটুকু ব্যায়াম করবেন তা যেন হয় পরিমিত। ব্যায়ামের মাধ্যমে ঘেমে গিয়ে একাকার হয়ে ওঠার কথা ভুলে যান; বরং এ চিন্তাটা তুলে রাখুন শীতকালের জন্য। এই সময়ে খুব ভোরে হেঁটে আসুন খোলা বাতাসে কিংবা সাঁতার কাটুন কিছুক্ষণ। ব্যস, এর বেশি কিছু নয়।
২. পানি পান করুন পেটপুরে- এই দুঃসহ গরমে ঘামের সাথে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় প্রচুর পরিমাণে পানি। সেই পানি পূরণ করতে আপনাকে অনেক বেশি পানি পান করতে হবে। এ ছাড়া স্বাভাবিক ভাবেই গরমে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। শরীরের কোষ গুলোকে সজীব রাখতে হলে চাই পানি। শরীরে পানির অভাব হলে মাংসপেশি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই দুঃসহ গরমে যেখানেই থাকুন না কেন সাথে রাখুন বোতলভর্তি পানি।
৩. তরল খাবার বেশি খান- বিভিন্ন মাংস, ডিম ও চর্বি জাতীয় খাবারের কথা ভুলে যান। তরল খান বেশি করে; দেখবেন শরীর সতেজ লাগছে বেশ। স্যুপ, ফলের রস খান। সবজি বাদ দেবেন না। শরীর থেকে ঘামের সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে লবণ। আপনি খাবার স্যালাইন খান। ডাবের পানি, তরমুজে ভরিয়ে ফেলুন পাকস্থলী।
৪. পোশাক পরুন হালকা রঙের- গাঢ় রঙের পোশাক রোদ শোষণ করে বলে গরম অনভূত হয় বেশি। কিন্তু হালকা রঙের পোশাক রোদ যতটুকু না শোষণ করে তার চেয়ে প্রতিফলিত করে। তাই হালকা রঙের পোশাকে আপনি কেবল স্বাচ্ছন্দ্যই বোধ করবেন না, বরং এই পোশাকে আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখবে। সবচেয়ে ভালো হয় সাদা রঙের পোশাক হলে। গরমে সিনথেটিক পোশাক কখনোই পরবেন না। সব সময় সুতি ও ঢিলা পোশাক পরুন।
৫. পারফিউম মাখুন দেখেশুনে- যদি গরম বেশি পড়ে তাহলে ভারী ও কড়া গন্ধের পারফিউম মাখবেন না। কড়া পারফিউমে আপনার শরীরে গরম লাগার ভাব বেড়ে যাবে। এ সময় একেবারে হালকা গন্ধের পারফিউম মাখুন। কিছু কিছু পারফিউম আছে যা মাখলে শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হয়। আজই খোঁজ করুন।
৬. বিরত থাকুন ধূমপান থেকে- আগে সিগারেটের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন সেটা। ধূমপানে শরীর আরো গরম হয়ে উঠবে। বাড়বে ত্বকের শুষ্কতা। বরং তার বদলে খান একটি করে ভিটামিন সি ট্যাবলেট। সজীব লাগবে নিজেকে।
৭. পরিত্যাগ করুন চা, কফি ও অ্যালকোহল। এগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে আপনার শরীরে। বাড়িয়ে দেবে পানিশূণ্যতা। আপনার তৃষ্ণা মেটাতে ¯্রফে পানি পান করুন। অথবা কোমল পানীয়। চা, কফি বা আ্যলকোহল একেবারেই নয়।
৮. এড়িয়ে চলুন সূর্যালোক- চেষ্টা করুন ছায়ার মধ্য দিয়ে চলতে। রোদে গেলে মাথায় রাখুন চওড়া ক্যাপ,স্কার্ফ অথবা ছাতা। রিকশায় চড়লে হুড উঠিয়ে চলুন। ত্বকে মেখে চলুন সানস্ক্রিন ক্রিম বা লোশন। রোদে বাইরে বেরোলেই সানগাস পরে নেবেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন সানগাসটি যেন চোখের সাথে চমৎকার ফিটিং হয়। বেছে নিন ধূসর অথবা সবুজ রঙের কাচ। বাদামি রঙের কাচ হলে ভালো হয়। এই কাচগুলো সূর্যালোক প্রতিহত করবে।
৯. গোসল করুন একাধিক বার- সবচেয়ে ভালো হয় যদি ঠান্ডা বাথটাবে চুপচাপ শুয়ে থাকেন এবং মাঝে মাঝে সেখানে ছুড়তে থাকেন হাত -পা । তা সম্ভব না হলে দিনে দু’তিনবার গোসল করুন। শরীরে তেলজাতীয় কিছু মাখবেন না। সময় একটু বেশি নিয়ে গোসল করুন।
১০. শুয়ে পড়–ন মেঝের ওপর- ফোমের বিছানা কিংবা জাজিম, তোশক গুটিয়ে রাখুন। ভালো করে ধুয়ে মুছে সটান করে শুয়ে পড়–ন মেঝের ওপর। আপনার কমরে কিংবা পিঠে ব্যথা থাকলে তো সোনায় সোহাগা । গরম তাড়ানোর পাশাপাশি ব্যথার চিকিৎসাও হয়ে গেল। মেঝের শীতল অনুভূতি শীতল করে তুলবে আপনার শরীরকে। চমৎকার ঘুম হবে আপনার। মাথার ওপর অবিরাম ছেড়ে রাখুন ফ্যান। দেখবেন গরম কোথায় পালায়! সবশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন-নিজের যত্ন না নিলে নিজে অন্যের উপর ভরসা মিছে।
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবাঃ ০১৭১৬২৭০১২০।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।