গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগে প্রথমবারের মতো লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়েছে। গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিনামূল্যে সিরাজুল ইসলাম নামের ২০ বছর বয়সী এক যুবকের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন করে। জটিল এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করতে একটানা ১৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়েছে চিকিৎসকদের। বর্তমানে রোগী এবং দাতা দুজনেই সুস্থ আছেন।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। ‘বিকাশমান চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে নিরন্তর এগিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় জানানো হয়, হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. জুলফিকার রহমান খানের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যবিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম এই ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন করে। বিএসএমএমইউ’র পাশাপাশি দেশের কোন সরকারি হাসপাতালেও এটি প্রথম লিভার ট্রান্সপ্লান্ট। ইতিপূর্বে বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতালে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হলে সরকারি পর্যায়ে হয়নি।
ট্রান্সপ্লান্ট সম্পর্কে ডা. মো. জুলফিকার রহমান খান জানান, রোগীকে প্রথমে এ্যানেসথেসিওলজিস্টদের সাহায্যে অজ্ঞানকরা হয়। তারপর রোগীর লিভার অপসারণ করা হয়। এরপর ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রম শুরু করা হয়। ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া লিভারট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রম সম্পন্ন হয় রাত ১২টা। অর্থাৎ একটানা ১৮ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় এই লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হয়। প্রায় ৫০ সদস্যের চিকিৎসক টিম এই কার্যক্রমে অংশ নেন। লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হওয়ার পর বর্তমানে লিভার দাতা রোগীর মা এবং রোগী ২০ বছরের যুবক আশানুরূপ সুস্থ আছেন। চিকিৎসাপরবর্তী প্রথম সাত দিন নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন। আশাকরি, রোগী ও তার মা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের লিভারের বিভিন্ন রোগের সমস্যা একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। যদি কোনো রোগীর লিভার সিরোসিস হয়ে যায় তাহলে তার একমাত্র চিকিৎসা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট। এই চিকিৎসা বাংলাদেশে করতে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। আর দেশের বাইরে এ চিকিৎসা পেতে কম করে হলেও একজন রোগীকে কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। দেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্টের উল্লেখযোগ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিবছর কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক রোগী বিদেশে গিয়ে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে থাকে। তবে দরিদ্র লোকেদের অর্থিক সঙ্গতী না থাকায় তারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় এটি একটি নতুন মাইলফলক স্থাপিত হলো। এর আগে এদেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে। একটা সময় আগে হার্টের চিকিৎসা করতেও দেশের বাইরে যেতে হত। এখন সেটি অনেক কমেছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ট্রান্সপ্লান্টের ব্যবস্থার কথা বলা ছিলো, এই প্রক্রিয়ায় তা বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এসবের খোজ খবর নিচ্ছেন। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাত উন্নত হওয়ায় আমাদের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়–য়ার সভাপতিত্বে এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ডা. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সিকদার, ডা. সাহানা আখতার রহমান, কোষাধ্যক্ষ ডা. মুহাম্মদ আতিকুর রহমান, ভারতের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডা. পি বালাচন্দ্র মেনন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই ট্রান্সপ্লান্ট পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটি সফল এবং কোন সমস্যা চিহ্নিত হয়নি। এর আগে দেশে মোট ৪ টা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়। যার দুটি ল্যাবএইড হাসপাতালে এবং বাকি দুইি বারডেম জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে সফলতা ছিল ৫০ ভাগ। দেশে বেসরকারি হাসপাতালে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করতে যে খরচ হয় তার অর্ধেক খরচে বিএসএমএমইউতে ট্রান্সপ্লান্ট করা সম্ভব।
ডা. জুলফিকার রহমান খানের নেতৃত্বে লিবার ট্রান্সপ্লান্ট টিমে যারা কার করেছেন - ডা. মোহাম্মদ মোহছেন চৌধুরী, সহযোগী ডা. বিধান চন্দ্র দাস, ডা. মো. সাইফউদ্দিন, ডা. মো. নূর-ই-এলাহী এবং রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন- ডা. ওমর সিদ্দিকী, ডা. মোহাম্মদ ইমরুল হাসান খান, ডা. মোহাম্মদ মশিউর রহমান, ডা. রাসেল মাহমুদ, ডা. আব্দুল্লাহ মো. আবু আইউব আনসারি, ডা. সারওয়ার আহমেদ সোবহান, ডা. মো. নাজমুলহক, ডা. এস এম মোর্তজা আহসান, ডা. জাবিউল ইসলাম, ডা. মো. আবদুল কাইউম, ডা. মো. আরিফুজ্জামান, ডা. মো. আসাদুজ্জামান নূর, ডা. মোস্তফা মামুন ওয়ারিদ, ডা. এ কে আজাদ, ডা. সবিতা রানী, ডা. আজফার বিন আনিস, ডা. মো. ইমরান আলী।
দীর্ঘ ১৮ ঘন্টার জটিল অপারেশন সম্পন্নের সময় রোগীকে অত্যন্ত দক্ষতার যারা অজ্ঞান করার কাজ করেছেন- এ্যানেস্থেসিয়া, এ্যানালজেসিয়া ও ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রফেসর মো. আব্দুল হাই, ডা. ইকবাল হোসেন চৌধুরী, ডা. সাবিনা ইয়াসমিন, ডা. মন্তোষ কুমার মন্ডল, ডা. আব্দুল আলীম, ডা. সঞ্জয় কুমার সাহা, ডা. মো. মোস্তফা কামাল। অপারেশন চলাকালীন ইমেজিং সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন করে সার্বিক সহযোগী করেছেন রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.এম.এইচ মোস্তফা কামাল ও রেসিডেন্ট দীপক ভার্মা। এছাড়া জটিল এ অস্ত্রপচারে সার্বিক সহায়তা করেন ভারতের প্রতিথযশা লিভারট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডা. পিবালাচন্দ্র মেনন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।