Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল

| প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিগত প্রায় একমাসের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র যদি আমরা দেখি তাহলে দেখব মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এক ঈদযাত্রায় তিন দিনে মৃত্যু হয়েছে দুই শতাধিক। আহত হয়েছে শত শত। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৫০ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫০৪ জনের। প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করেছে গড়ে ১০ জন। আহতের সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। এ চিত্র থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না কী হারে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ হয়ে রয়েছে যানবাহনের চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। এছাড়া মহাসড়কে নিষিদ্ধ ইজি বাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটি, লেগুনা, ব্যাটারিচালিত যানবাহনের অবাধ চলাচল। এসবের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সড়ক বিশৃঙ্খলা এবং গাড়ি চালকদের বেপরোয় মনোভাবের কারণে ঘর থেকে বের হয়ে জীবন নিয়ে ফেরা যাবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকা জুড়ে সড়ক দুর্ঘটনার মর্মান্তিক বিবরণ পাওয়া যায়। এসব দুর্ঘটনায় মন বিষন্ন হয়ে উঠে। আবার বিষয়টি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে, মানুষ আহত-নিহত হবে-এটা নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে যেন পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই।

সড়ক দুর্ঘটনা কোনো জাত-পাত, শ্রেণী, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, সরকারি আমলা, কর্মজীবী, বেকার, তরুণ-তরুণী বিচার করে না। সব শ্রেণীই এর শিকার হচ্ছে। সব পেশার মানুষকেই পিষে মারছে। এতে দেশের কী অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ ক্ষতি হয়। অর্থনৈতিক হিসাবে এ ক্ষতি অনেক বড়। বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন ক্ষতি হয় কিনা আমাদের জানা নেই। তবে সবচেয়ে বড় এবং স্থায়ী ক্ষতির শিকার হয় নিহতের পরিবার। পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তি, যার ওপর পুরো পরিবারটি নির্ভরশীল তিনি যদি নিহত হন, তাহলে সেই পরিবারটি কী করুণ পরিস্থিতি এবং পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়, তা কেবল তারাই জানে। পুরো পরিবারটি অচল এবং ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। নিহত ব্যক্তি যদি দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে নিয়োজিত থাকেন এবং উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়, তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। অপরদিকে যে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ কিংবা কর্মে অক্ষম হয়ে পড়েন, তিনি পরিবার ও রাষ্ট্রের বোঝায় পরিণত হন। চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। আহত ব্যক্তিও নিজেকে বোঝা মনে করে হতাশার মধ্যে বেঁচে থাকেন। গত ৫০ দিনে যে পাঁচ শতাধিক মানুষের জীবন গেল এই পাঁচশতাধিক পরিবার এখন কী অবস্থায় আছে, তা কি কেউ খোঁজ নিচ্ছে? দুঃখের বিষয়, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের পরিবারের খোঁজ সরকার বা সংশ্লিষ্ট কোনো মন্ত্রণালয়ও নেয় না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রতিটি মানুষের সুখ-দুঃখের বিষয়ে অবহিত হয়ে তার সেবা করা। আমাদের দেশে এ রাষ্ট্রনীতি নেই এবং যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তারা এ ব্যাপারে উদাসীন। যার ফলে সাধারণ মানুষের দুঃখের সময় রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রতিফলিত হয় না। এমনকি সড়ক দুর্ঘটনা কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, তাও জোরালোভাবে দৃষ্টিগোচর হয় না। সড়ক দুর্ঘটনায় যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, নিশ্চিতভাবে তার দায়ভার সরকারের উপরই বর্তায়। আমরা দেখেছি, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী গাড়ি চালকদের দায়মুক্তি নিয়ে সরকারের মন্ত্রীসহ পরিবহন সংগঠনগুলোকে সোচ্চার হতে। তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া যাবে না বলে আন্দোলন করতে। বিস্ময়ের ব্যাপার, যে চালকের অদক্ষতা এবং ভুলে মানুষের জীবন চলে যাচ্ছে, তাদের রক্ষার জন্য আন্দোলন এবং বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করতে গিয়ে সরকারকে নমনীয় হতে হচ্ছে। এমন নজির বিশ্বের কোথাও আছে কিনা জানা নেই।

সড়ক দুর্ঘটনায় চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, অদক্ষতা, অসচেতনতা, আনফিট যানবাহন, অবৈধ ও নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল এবং সড়ক ব্যবস্থাপনায় ত্রæটির কারণের সাথে এখন নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে মহাসড়কের মসৃণতা। আগে ভাঙাচোরা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে ছিল। এখন সড়ক যত উন্নত ও মসৃণ হচ্ছে তাতেও দুর্ঘটনার হার বাড়ছে। এর কারণ, মসৃণ সড়কে গতি বৃদ্ধি পায় এবং এ গতির সাথে বেপরোয়া চালকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। সড়কে তারা যেন উড়তে থাকে। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। তার অর্থ হচ্ছে, সড়ক মসৃণ ও উন্নত হলেও চালকদের মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। সরকারকে এ বিষয়টির দিকে গভীর দৃষ্টি দিতে হবে। ইতোমধ্যে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। দেশে প্রায় ৫ লাখ গাড়ি চালককে প্রশিক্ষণ এবং বিদ্যমান গাড়িচালকদেরও নতুন করে প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে এ কার্যক্রম শুরু হবে। পাশাপাশি আগামী একমাসের মধ্যে সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধ থ্রি হুইলার জাতীয় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা তৈরি করবে। এসব উদ্যোগ দেখে প্রতীয়মাণ হচ্ছে, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার বেশ সরব হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, হাইকোর্ট গত বৃহস্পতিবার গাড়ি চালকদের মাদকাসক্তি ও চোখের দৃষ্টি পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক দুর্ঘটনা কখনোই শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়। এই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হলে যেসব সমস্যা চিহ্নিত হয়ে আছে, সেগুলো পুরোপুরিভাবে দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবহন সংগঠনগুলোরও সচেতন হওয়া এবং সহযোগিতা করা প্রয়োজন। পাশাপাশ যাত্রী, পথচারীদেরও সচেতন হতে হবে। সরকার এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রেখেছে। এর আওতায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহতদের পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে এ পরিবারগুলো কিছুটা হলেও সান্ত¦না পাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->