পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কলাপাড়ার নির্মাণাধীন পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে বয়লার থেকে পড়ে এক বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশি শ্রমিক ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে এক চীনা নাগরিককে মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাং ইয়াং ফাং (২৬) নামের ওই নাগরিকের মৃত্যু হয়। এছাড়া এ ঘটনায় আরো ৫ চায়না নাগরিকসহ ৭ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব ধরনের কাজ বন্ধ ছিল। ঘটনার রাতেই অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক হামলার আশঙ্কায় কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়েছে বলে বিভিন্ন ম্যানপাওয়ারের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এ ঘটনার নেপথ্যে শুধুই বিবাদ নাকি অন্য কিছু তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তবে অনেকেরই ধারনা- প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকে সামনে রেখে ভারতীয় অনুচরদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটতে পারে। চীনের কাছে সরকারকে বিব্রত করানোর জন্যই শ্রমিক নামধারী ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে কৌশলে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে স্থানীয়রা জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশি শ্রমিক সাবিন্দ্র দাসের (৩২) মৃত্যুকে কেন্দ্র করে লাশ গুমের চেষ্টার গুজবের খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হামলার ঘটনা ঘটায়। বিকেল তিনটা থেকে অন্তত ছয় হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক ও তিন সহস্রাধিক চীনা শ্রমিক দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ২ চীনা শ্রমিক চাংচংটিং (২৩) ও লিংসুয়ে (৫০) এবং ২ বাংলাদেশি শ্রমিক আলকাছ (৪৪) ও মোস্তাফিজুর রহমান (৪৮) আহত হয়েছে বলে বিসিপিসিএল কর্মকর্তারা জানালেও আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক বলে জানিয়েছে শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ ঘটনায় বিসিপিসিএলএর দুই কর্মকর্তা জার্জিস তালুকদার ও শাহমিন জিকো জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা।
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ, কলাপাড়া থানার পুলিশসহ অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সংঘর্ষের ছবি তুলতে গিয়ে প্রতিদিনের সংবাদের কলাপাড়া প্রতিনিধি ফরাজী মো. ইমরানের মটরসাইকেল ও মাইটিভির কলাপাড়া-কুয়াকাটা প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম রয়েলের ক্যামেরা ভাঙচুর করে করা হয়। এ সময় চীনা শ্রমিকের ধাওয়া খেয়ে আরও দুই সাংবাদিক মিজানুর রহমান বুলেট ও মিলন সরকার ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পুলিশের আশ্রয় নেন।
সাংবাদিক মিজানুর রহমান বুলেট জানান, কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই উত্তেজিত চীনা শ্রমিকরা আমাদের ধাওয়া করে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে দৌড়ে পুলিশের আশ্রয় নেই। এ সময় চীনা শ্রমিকরা সাংবাদিক ইমরানের মটরসাইকেল ভাঙচুর ও রয়েলের ক্যামেরা ভাঙচুর করে। চীনারা না বোঝে ভাষা না বোঝে কথা।
মঙ্গলবার দিনব্যাপী বাংলাদেশি শ্রমিক ও চীনা শ্রমিকরা দফায় দফায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে রাত ১১টার দিকে পটুয়াখালী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব ধরনের কাজ বন্ধ ছিলো। ঘটনার রাতেই অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক হামলার আশঙ্কায় কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়েছে বলে বিভিন্ন ম্যানপাওয়ারের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আহতদের প্রথমে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে রাত ২টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাং ইয়াং ফাং (২৬) নামের এক চীনা নাগরিকের মৃত্যু হয়।
উপর থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যুর সাথে চীনা নাগরিকের কী সম্পর্ক তা জানার জন্য কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এটা নিছকই একটা দুর্ঘটনা ছিল। কিন্তু তারপরেও শ্রমিক নামধারী কতিপয় সন্ত্রাসী এ ঘটনার জন্য ঘুরেফিরে চীনা নাগরিকদের দায়ী করতে থাকে। তারা কৌশলে অন্যান্য শ্রমিকদের উত্তেজিত করে তোলে। তারই জের ধরে চীনা নাগরিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। অনেকের ধারনা- এ ঘটনার নেপথ্যে ভিন্ন কোনো মোটিভ আছে। বিশেষ করে চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিনষ্ট করার জন্য একটি মহল কৌশলে শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে থাকতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকে সামনে রেখে এ রকম একটা ঘটনা ষড়যন্ত্রমূলক ও খুবই ন্যাক্কারজনক।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস গণমাধ্যমকে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুততার সাথে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, চায়না-বাংলাদেশ বন্ধু রাষ্ট্র। তাই বিষয়টি আরো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন জানান, বুধবার রাত ৩ টা ৫০ মিনিটে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন জাং ইয়াং ফাং (২৬)। তার মাথায় আঘাত ছিলো এবং প্রচুর রক্তক্ষরণে মারা যায়। এছাড়া আহত বাকি ৫ চীনা নাগরীককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে সেখান থেকে তাদের স্কায়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে চীনা নাগরীক জাং ইয়াং ফাং (২৬) নিহত হওয়ার ঘটনায় ভবিষ্যতে কোন মামলা মোকদ্দমা করা হবে না দাবি করে বিনা ময়না তদন্তে তার লাশ গ্রহণের জন্য বরিশাল জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করেছেন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রজেক্ট ম্যানেজার লিউ সি।
এদিকে, গতকাল সকাল সাড়ে ১০ টায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত বাঙ্গালী শ্রমিকদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস, ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, পটুয়াখালীর এডিসি হেমায়েত উদ্দিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।