পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি-রফতানিতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকিই শুধু হচ্ছে না, অবৈধ ও নিষিদ্ধ পণ্যের আমদানী রফতানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ও উৎপাদন ব্যবস্থাকেও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। মিথ্যা ঘোষণা এবং আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি ছাড়াও হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরসহ স্থল ও বন্দরগুলোতে এ ব্যবস্থা অনেকটা ওপেন সিক্রেট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের জাতীয় বাজেটের প্রয়োজনীয় অর্থের প্রধান যোগানদাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে এ ধরনের সুযোগ দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বড় ধরণের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, চট্টগ্রাম কাস্টস হাউজের সাথে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাশালী রুই-কাতলাদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা চক্র হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির নানা পন্থা অবলম্বন করে প্রকৃত সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসাকে কঠিন করে তুলেছে। ঘুষ লেনেদেনের বিনিময়ে রাজস্ব ফাঁকিবাজ চক্রকে মিথ্যা ও অঘোষিত পণ্য আমদানীর সুযোগ দেয়ার কারণে একদিকে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে,অন্যদিকে যথাযথ প্রক্রিয়া রাজস্ব পরিশোধ করেও প্রকৃত ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরা নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অল্পদিনে কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে শুল্ক ফাঁকিবাজ চক্রের সদস্যরা।
সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতার নিরীখে সরকার জাতীয় বাজেটে নতুন শুল্ক আরোপ, শুল্ক কমানো ও প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে থাকে। বৃহত্তর স্বার্থে বিদেশি সিগারেট, মদসহ নানা রকম বিলাস দ্রব্যের আমদানী নিরুৎসাহিত করতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়। অথচ মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এসব পণ্য আমদানীর মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির পাশাপাশি সামাজিক অপরাধ ও অবক্ষয়ের পথ সুগম করা হচ্ছে। তেল আমদানীর নামে পানিভর্তি ট্যাংকার বা ফাঁকা কন্টেইনার খালাসের মাধ্যমে কালোটাকা বিদেশে পাচারের সুযোগ দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। গত মে মাসে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানী করা পণ্যে শুল্ক ফাঁকি রুখতে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের এআইআর শাখার অভিযানে দুইমাসে ৪০ কোটি টাকার অতিরিক্ত শুল্ক এবং ১০ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করেছে। তবে যে হারে মিথ্যা ঘোষণায় রাজস্বহানি ঘটছে সে তুলনায় অভিযানে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও জরিমানা আদায়ের হার খুবই কম। মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস ও অর্থ পাচার রোধে কাস্টমস হাউজের প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, সক্ষমতা এবং সামগ্রিক নজরদারির ব্যবস্থা জোরদার করার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে জরিমানা বা পেনাল্টিসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বাগ্রে কাস্টমস বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের সরিয়ে সেখানে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিদের পদায়ন করতে হবে।
দেশের অন্যতম শীর্ষ কর্পোরেট কোম্পানী প্রাণ-আরএফএল সম্প্রতি প্লাস্টিক দানা আমদানীর ঘোষণা দিয়ে ৩০ কন্টেইনার বোঝাই সিমেন্ট আমদানীর তথ্য ধরা পড়েছে শুল্ক গোয়েন্দাদের হাতে। এতে প্রাথমিকভাবে ৩ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির কারসাজি ধরা পড়লেও আমদানী ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে থাকতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছেন। এভাবে দেশের ছোট-বড় শত শত কোম্পানী শত শত প্রকার পণ্য আমদানী ও রফতানী করছে। এসব আমদানী রফতানীর সঠিক পরিসংখ্যান এবং সঠিকভাবে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা গেলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। জাল কাগজপত্র, ভ’য়া ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আমদানী- রফতানী, রাজস্ব ঘাপলা ও অর্থপাচার ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজকে ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট যত শক্তিশালী হোক, তারা রাষ্ট্রের চেয়ে বড় শক্তি নয়। এদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। সেই সাথে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে শুরু করে বন্দরে পণ্য স্ক্যানিং, পণ্য খালাসের সময় যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বন্দর ও কাস্টমস হাউজগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে। শুল্ক গোয়েন্দ্ াবিভাগকে আরো দক্ষ ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন। তার এই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় যথাশীঘ্র কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলোর রাজস্ব ফাঁকিসহ নানা কারসাজিতে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়ার বাস্তবতার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।