পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্রোত ঠেকাতে জার্মানি নয়া পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এর অংশ হিসেবে আলজেরিয়া, মরক্কো এবং তিউনিসিয়াকে নিরাপদ রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর নিরাপদ রাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকেরা জার্মানিতে আশ্রয় পাবেন না। বিবিসি বলছে, জার্মানির অর্থমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল জানিয়েছেন, ওই দেশগুলো থেকে আসা মানুষদের আশ্রয় দেয়া হবে অপ্রত্যাশিত। গেল বছর ১১ লাখেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাশীকে গ্রহণ করা জার্মানি অভিবাসী আইন কঠোর করার লক্ষ্যেই নয়া এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গ্যাব্রিয়েলের স্যোসাল ডেমক্রেটসের সঙ্গে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের খ্রিশ্চান ডেমক্রেটস এবং তাদের বাভারিয়াভিত্তিক সহযোগী দল দ্য খ্রিশ্চান স্যোসাল ইউনিয়নের আলোচনার পর অর্থমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল ওই ঘোষণা দেন। জার্মানির প্রস্তাবিত এই পরিকল্পনার ব্যাপারে ইতোমধ্যে মরক্কো সাড়া দিয়েছে। দেশটির কোনো নাগরিক অবৈধভাবে জার্মানিতে গিয়ে থাকলে তারা তাকে ফিরিয়ে নেবে বলে জানিয়েছে। ক্ষমতাসীন জোটের তৈরি এই প্রস্তাবনায় কঠোর আশ্রয়নীতির কথা বলা হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে আশ্রয় পাওয়া ব্যক্তি দুই বছরের মধ্যে তার কোনো আত্মীয়কে জার্মানি নিয়ে আসতে পারবেন না। নয়া এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দেশটিতে যাদের অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হবে তাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। খসড়া এই প্রস্তাবনাটি আইনে পরিণত হতে সরকার এবং সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
এদিকে, তাপমাত্রা কোথাও মাইনাস ২০! কোথাও বা মাইনাস ১৮! কোথাও আবার মাইনাস ১৩! সেই সঙ্গে প্রবল হাওয়া। তারই মধ্যে সবে ম্যাসিডনিয়া-গ্রিস সীমান্ত পেরিয়েছে ইরাকের পরিবারটি। সাত জনের দলে তিনটে শিশু। তাদের প্রত্যেকের বয়স পাঁচ বছরের নীচে। লাগেজের সঙ্গে তিন জনই তাদের বাবা-মায়ের পিঠে রয়েছে। ওদেরই এক জন শীতপোশাক পরার পরেও ঠা-ায় কাঁপছিল ঠকঠক করে। কান্না থামাতে পাশে পাশে হেঁটে যাওয়া তাদের এক আত্মীয় ওই শিশুটিকে বল দেখায়। বরফের বল। বলটি তার হাতে দিতে গিয়েও বার বার কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল। কান্না থামিয়ে হেসে উঠছিল শিশুটি। ‘বল দাও’ বলে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছিল সে বার বার। কিন্তু, তার হাতে দেয়া মাত্রই এক ঝটকায় বলটা সে ছুড়ে ফেলে দেয়। কারণ? শিশুটি জানতই না ‘স্নো’ ঠা-া হয়। ঠা-া হাতে আরও শীতল স্পর্শে সে আরও তীব্র স্বরে কেঁদে ওঠে।
শুধু শিশুটি নয়, তার বাবা-মা এমনকী মধ্য এশিয়া থেকে আসা এই সব শরণার্থীদের বেশির ভাগেরই বরফের সঙ্গে সরাসরি কোনও পরিচয় এত দিন ছিল না। হয় বই নয়তো বা খবরের কাগজের ছবি এবং সিনেমার পর্দাই ছিল তাদের বরফ পরিচিতির মাধ্যম। বরফের মধ্যে নায়ক-নায়িকারদের রোম্যান্স তাদের আনন্দ দিত। কিন্তু, জীবনকে বাজি রেখে একটু আশ্রয়ের খোঁজে মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ছেড়ে অনেক কষ্টে ইউরোপে পৌঁছনো মানুষগুলোর কাছে বরফ এখন একটা ত্রাস। সারা দিন ঝির ঝির করে তুষারপাত হয়েই চলেছে। সেই সঙ্গে ঠা-ার হাওয়ার কামড়। সব মিলিয়ে গোদের উপর বিষফোঁড়া অবস্থা তাদের। জীবনের প্রথম বরফ দেখার অভিজ্ঞতাটা তাদের কাছে ভয়ঙ্কর হয়েই থাকবে সারা জীবন! শুধু রাষ্ট্রপুঞ্জের আবহাওয়া এজেন্সি নয়, অন্য সংস্থাগুলিও বারে বারে পূর্বাভাসে জানাচ্ছে তাপমাত্রা আরও নামতে পারে। মাইনাস ২০-রও নীচে! এর মধ্যেই বেশ কয়েক কিলোমিটার করে হাঁটতে হচ্ছে শরণার্থীদের। রাত কাটাতে হচ্ছে স্টেশনে। এমনকী, ফুটপাথেও। সার্বিয়া-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্ত থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে সার্বিয়া যাওয়ার ট্রেন ধরতে হয়। প্রবল তুষারপাতের মধ্যেই দিন-রাত এক করে হেঁটে চলেছেন শরণার্থীরা। নারী-পুরুষ-শিশু সকলেই হাঁটছে। একটু আশ্রয়ের খোঁজে। ত্বক ফেটে চৌচির। কারও কারও মুখের ত্বক থেকে রক্ত ঝরছে! ফুটিফাটা ঠোঁট। হাতে-পায়েরও একই অবস্থা। প্রবল হাওয়ার শব্দে নিজেদের মধ্যে কথাও বলা যাচ্ছে না। এক ভয়ানক পরিস্থিতি। সীমান্ত পেরোনোর আনন্দে একটা সময় এই জায়গাতেই শরণার্থীদের মুখে হাসিটুক দেখা যেত। এখন সেই সার্বিয়া-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্ত পেরিয়ে কাঁদছেন অনেকে। কষ্টে। ঠা-া সহ্য করতে না পেরে!
সীমান্ত পেরিয়ে হেঁটে প্রিসেভো পৌঁছে সেখান থেকে ট্রেন ধরে প্রথমে ক্রোয়েশিয়া। তার পর অন্তিম গন্তব্য জার্মানি পৌঁছনোর আগে স্লোভেনিয়া এবং অস্ট্রিয়া পেরোনো। তাদের সম্বল বলতে কয়েকটা মাত্র ইউরো। তার আগেই ঠা-া না কেড়ে নেয় প্রাণ! এই আশঙ্কা নিয়েই তারা ঠা-ার মধ্যেই এগিয়ে চলেছেন জার্মানির উদ্দেশ্যে। তাও তো তারা ইউরোপ পৌঁছেছেন। এর আগে তো অনেকে সেটাও পারেননি। তুরস্কের বদরামের সমুদ্রসৈকতে ভেসে উঠেছিল ছোট্ট আয়লানের দেহ। এর আগেও শরণার্থীদের দুরবস্থা, মৃত্যুর খবর এসেছে। একের পর এক সংকট পেরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজটা চলছেই। বিবিসি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।