পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদরাসাছাত্রী নুসরাতের যৌন হয়রানির অভিযোগ ভিডিওতে ধারণ ও তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ আগামী ৩০ জুন নির্ধারণ করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, বিচারক উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ সময় মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী সালমা আক্তার জামিন আবেদন করেছেন। আর শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ।
বাদী সায়েদুল হক সুমন আদালতে বলেন, আসামি যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো, তাহলে সে কেন এতদিন আত্মগোপনে ছিল? সে পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক। তিনি জামিনের বিরোধিতা করেন। সুমন শুনানিতে আরও বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম আইনের মানুষ হয়ে কেন পলাতক হয়েছেন? উনি নির্দোষ হলে আদালত আত্মসমর্পণ করতেন। ওসি মোয়াজ্জেম পলাতক হয়ে গোটা জাতিকে বিস্মিত করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন।
শুনানি শেষে আদালত ভবনের নিচে মামলার বাদী সুমন সাংবাদিকদের বলেন, ওসি মোয়াজ্জেমকে হাতে হাতকড়া দিয়ে আনা হয়নি। সে বিষয়ে পুলিশ ভালো জানেন কেন আনেননি। তবে পুলিশ ভাইয়দের কাছে অনুরোধ করে বলি, অন্য আসামিদের বেলায়ও যেন একই ট্রিটমেন্ট করা হয়।
আসামির পক্ষে আইনজীবী ফারুক আহমেদ শুনানিতে বলেন, আত্মসমর্পণ করতে আসার মতো নিরাপত্তা বা পরিবেশ ছিল না। ওসি মোয়াজ্জেম বের হলেই মিডিয়া ও বিভিন্ন লোকজন তাকে উত্ত্যক্ত করতো। তার ফলে তিনি উচ্চ আদালতে গেছেন এবং সেখানেই গ্রেফতার হয়েছেন। সে বিচার বিভাগকে অবজ্ঞা করেনি।
ওসি মোয়াজ্জেম পলাতক ছিলেন না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালতে তিনি জামিনের জন্য গিয়েছিলেন। ওসি মোয়াজ্জেম বাইরে বের হননি কারণ বিভিন্ন মিডিয়ার কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। ওসি মোয়াজ্জেমের অভিযোগ শুধু ভিডিও শেয়ারিং করা। নরমালি থানার ভেতরে কোনো ভিকটিম এলে তা রেকর্ড করা হয়। কারণ অনেক সময় এজহার রেকর্ড করার পর তা অস্বীকার করেন ভিকটিম। এজন্য তা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামি জামিন পেলে জামিনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করবেন না। তাই জামিনের প্রার্থনা জানাচ্ছি।
জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম আদালতকে বলেন, ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে আইনের শৃঙ্খলা বিঘœ ঘটিয়ে অপরাধ করায় তার জামিন নামঞ্জুর করা হোক।
মাথা নিচু করে আদালতে মোয়াজ্জেম
গতকাল সোমবার দুপুরে একটি প্রিজন ভ্যানে করে তাকে পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় নেয়া হয়। এ সময় বাদামি রঙের টি-শার্ট ও কালো চশমা পরা মোয়াজ্জেমকে বেলা সোয়া ২টার পর আদালত কক্ষে নেয়া হলে প্রথমে তাকে কাঠগড়ার বাইরে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়। থানা থেকে আনার পর কখনোই তার হাতে হাতকড়া দেখা যায়নি। এ সময় তিনি মাথা নিচু করে আদালতে ঢোকেন। এর আগে দুপুর পৌনে ১২টায় তাকে বহনকারী গাড়িটি শাহবাগ থানা থেকে রওনা হয়ে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে সাইবার ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়। পরে তাকে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে হাজতখানায় রাখা হয়।
হাজতখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোতালেব হোসেন বলেন, আড়াইটার দিকে মোয়াজ্জেমকে আদালতের ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত সাইবার আদালতে তোলা হয়। অন্যান্য আসামির মতোই তিনি হাজতখানায় ছিলেন।
সোনাগাজী থানার বর্তমান ওসি মাঈন উদ্দিন জানান, একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে সোনাগাজী থানা পুলিশের একটি টিম ঢাকায় অবস্থান করছে। তাদের কাছেই মোয়াজ্জেম হোসেনকে হস্তান্তর করা হয়। পরে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর গত রোববার মোয়াজ্জেম হোসেনকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, গত ৮ মে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। ঈদের আগে সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হন ওসি মোয়াজ্জেম।
উল্লেখ্য, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। মাদরাসার প্রিন্সিপাল সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর প্রিন্সিপালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। গুরুতর দগ্ধ নুসরাত পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে হার মানেন। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মারা যান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।