পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর নিয়ে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (বিএলএফ) চার শীর্ষ নেতার মধ্যে দুই শীর্ষ নেতার বাহাস শুরু হয়েছে। এই দুই শীর্ষ নেতা হলেন সাবেক মন্ত্রী এবং ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রধান নেতা তোফায়েল আহমেদ। অপর জন হলেন সব সময় রাজনীতির পর্দার আড়ালে থাকা কিন্তু সেখান থেকেই রাজনীতির গুটি পরিচালনাকারী নেতা সিরাজুল আলম খান। সিরাজুল আলম খানকে রাজনৈতিক লেখকরা এমনকি অনেক রাজনৈতিক কর্মীও রাজনীতির রহস্য পুরুষ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। বিএলএফর অপর দুই নেতা হলেন সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এবং জাসদ নেতা কাজী আরেফ আহমেদ। আব্দুর রাজ্জাক এবং আরেফ আহমেদ মারা গেছেন। আব্দুর রাজ্জাক মারা গেছেন দুরারোগ্য ব্যধিতে। আর কাজী আরেফ আহমেদ মারা গেছেন উপদলীয় কোন্দলে তারই দলের অপর গ্রæপের সশস্ত্র হামলায়। কাজেই তোফায়েল আহমেদ বা সিরাজুল আলম খান যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিতর্কে নামেন এবং বিএলএফের অপর দুই নেতার রেফারেন্স টানেন তখন তাদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করার কোনো উপায় থাকে না। কারণ মৃত ব্যক্তি কবর থেকে উঠে এসে স্বাক্ষী দিতে পারেন না।
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ অথবা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে কয়েকশত বই এবং ছোট ছোট বুকলেট প্রকাশিত হয়েছে। সেসব নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়েছে। কিন্তু মানুষ আশা করছিলেন যে যারা মুক্তিযুদ্ধের নায়ক তারা এ ব্যাপারে কিছু লিখে যান। কারণ মুক্তিযুদ্ধের অগ্র নায়কদের অনেকেই মারা গেছেন। মুষ্টিমেয় যে কয়জন বেঁচে আছেন তাদের বয়সও ৭০-এর ওপরে। হায়াত মউতের মালিক আল্লাহ। তাই যারা বেঁচে আছেন তারা কতদিন এই পৃথিবীতে থাকবেন সেটি একমাত্র আলেমুল গায়েবই জানেন। তবে অকস্মাৎ কাউকে উঠিয়ে নিলে মানুষ অবাক হবেন না। সে জন্যই সাধারণ মানুষের আকাঙ্খা এই যে যারা বেঁচে আছেন তারা কিছু লিখে যান, যাতে করে ভবিষ্যত প্রজন্ম স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ইতিহাস জানতে পারেন।
অবশেষে মানুষের সেই আশা আকাঙ্খার আংশিক পূরণ করেছেন রাজনীতির রহস্য পুরুষ বলে খ্যাত জাসদের স্বপ্ন দ্রষ্টা সিরাজুল আলম খান। তার বয়স এখন ৭৮। তিনি একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম ‘আমি সিরাজুল খান’। এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি তার কথা বলে গেছেন। তার সেই সব কথার অনুলিখন করেছেন সাংবাদিক শামসুদ্দিন আহমেদ। তার এসব অনুলিখনসমূহ সংকলন করে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটির নাম ‘আমি সিরাজুল আলম খান’। বইটি প্রকাশ করেছে মওলা ব্রাদার্স। বইটি মিডিয়াতে তেমন একটা প্রচার পায়নি। পেলে হয়তো অনেকেই এতদিন সেটি নিজেদের সংগ্রহে রাখতেন।
তবে বসুন্ধরা গ্রæপের বাংলা দৈনিকটি এই বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা শুরু করে। প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয় ৩ জুন শনিবার। পত্রিকাটির দ্বিতীয় শীর্ষ সংবাদের স্থলে এই ধারাবাহিকটি প্রকাশ শুরু হয়। শিরোনাম ‘আমি সিরাজুল আলম খান’। এই শিরোনামে পত্রিকাটি পরপর পাঁচটি পর্ব প্রকাশ করে। দুই তিনটি পর্ব প্রকাশিত হলে সাবেক মন্ত্রী এবং বর্তমান এমপি তোফায়েল আহমেদ সিরাজুল আলম খানকে টেলিফোন করেন এবং বলেন যে বইটিতে পরিবেশিত অধিকাংশ তথ্যই অসত্য এবং বানোয়াট। তিনি এসব মিথ্যা তথ্যের লিখিত প্রতিবাদ করবেন। তোফায়েল আহমেদের এই টেলিফোনের পরেও সিরাজুল আলম খানের বইয়ের পাঁচটি সিরিজ প্রকাশিত হয়। তারপরে সিরিজ প্রকাশনা অকস্মাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে সংবাদ পত্রে এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয় যে মওলা ব্রাদার্স দেশের সমস্ত লাইব্রেরি থেকে সিরাজুল আলম খানের বইটি প্রত্যাহার করেছে। ফলে ষষ্ঠ সিরিজের পর আর কোনো সিরিজ প্রকাশিত হয়নি। পর্যবেক্ষক মহলের মতে সরকার বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা না করেও কায়দা করে বইটি জনচক্ষুর আড়ালে নিয়ে গেলো। অনেকে বলেন এটি এক ধরনের সরকারি চাপ। মওলা ব্রাদার্স সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে।
এই অভিযোগটি সত্য বলে প্রতিভাত হয় আরো এই কারণে যে যেদিন সিরাজুল আলম খানের বইটির ধারাবাহিক প্রকাশ হওয়া বন্ধ হয়ে যায় তার পর দিন থেকেই তোফায়েল আহমেদের আর একটি ধারাবাহিক প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়। রবিবার ১৬ জুন পর্যন্ত একই পত্রিকায় একই স্থানে (প্রথম পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্রধান সংবাদকে যেভাবে ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়) সে ভাবেই সেই স্থানেই তোফায়েল আহমেদের বক্তব্য ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়েছে।
দুই
প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম সম্পর্কে তোফায়েল আহমেদ বনাম সিরাজুল আলম খানের এই বাহাশ আজকের এই লেখায় সম্পূর্ণ তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সিরাজুল আলম খানের ৬টি সিরিজ প্রকাশিত হয়েছে। আর ১৫জুন পর্যন্ত তোফায়েল আহমেদের ৪টি সিরিজ প্রকাশিত হওয়ার পর ১৬জুন তারিখে আর কোনো সিরিজ প্রকাশিত হয়নি। আমি এই লেখাটি লিখছি ১৬ জুন তারিখে। সুতরাং ১৬ জুন তারিখের পর তোফায়েল আহমেদের আর কোনো লেখা বা বক্তব্য প্রকাশিত হলো কিনা, অথবা আদৌ প্রকাশিত হবে কিনা সে সম্পর্কে আমার পক্ষে কোনো কিছু বলা সম্ভব নয়। আমরা অপেক্ষা করবো আগামী সপ্তাহ পযন্ত। দেখি এর মধ্যে তোফায়েল আহমেদ অথবা সিরাজুল আলম খানের আর কোনো লেখা বের হয় কিনা।
এর মধ্যে চলতি বছরের ঈদ সংখ্যা প্রথম আলোয়’ সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী মহিউদ্দিন আহমেদের একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। প্রবন্ধটির নাম ‘সিরাজুল আলম খান এবং স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস’। বস্তুত এখান থেকেই সিরাজুল আলম খানের অনুসারী এবং আওয়ামী লীগের অনুসারীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে বিতন্ডা শুরু হয়। সিরাজুল আলম খান বলেন যে, স্বাধীনতার সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল ১৯৬২ সাল থেকে। তখন তারা ৩ জন ছাত্র নেতা মিলে একটি অনুসংগঠন তৈরি করেন। যার নাম স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস। যথার্থ অর্থে এটি কোনো সংগঠন ছিল না। সিরাজুল আলম খানের ভাষ্য অনুযায়ী ১৯৬২ সালে তারা তিন জন ছাত্রনেতা মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে সেদিনের পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের সাথে থাকতে পারে না। তাই পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা তথা স্বাধীন হতে হবে। এই স্বাধীনতার জন্য তারা এখন থেকে কাজ করা শুর করবে। এই মর্মে ঐ ৩ জন ছাত্রনেতা শপথ গ্রহণ করেন। এই ৩ জন ছাত্রনেতা হলেন সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক এবং কাজী আরেফ আহমেদ। এরা কিন্তু ৩ জনই ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। তবুও সমগ্র ছাত্রলীগকে তাদের এই চিন্তা চেতনা থেকে আলাদা করে তারা নিজেরাই এই ৩জন মিলে স্বাধীনতার পথে যাত্রা শুরু করেন।
পক্ষান্তরে তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা সংগ্রামে নিউক্লিয়াসের কোনো অস্তিত্বই স্বীকার করেন না। তার কথায় ৬৯ সালে শুরু হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদই পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়। প্রথমে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আকার বড় থাকলেও ৭০ সালের নির্বাচনের পর এর পরিধি ছোট হয় এবং ৪ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়। এরা হলেন ডাকসুর তদানীন্তন ভিপি তোফায়েল আহমেদ, ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট নুরে আলম সিদ্দিকী, আসম আব্দুর রব এবং শাহজাহান সিরাজ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে সারা দেশে যে গণ অভ্যুত্থান হয় তখন সারা দেশ বস্তুত ৪ জন ছাত্র নেতার নির্দেশ ও সিদ্ধান্তে পরিচালিত হয়। জনগণ তখন তাদেরকে বলতেন চার খলিফা। তারা এমন প্রবল গণ আন্দোলন শুরু করেন যে তদানীন্তন জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক জান্তা শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। শেখ মুজিব মুক্ত হওয়ার পর বস্তুত সমস্ত সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ আসে শেখ মুজিবের নিকট থেকে। সেটি বাস্তবায়ন করেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এই ৪ নেতা।
কিন্তু সিরাজুল আলম খান ভিন্ন কথা বলেন। তিনি বলেন যে, সব কিছু সিদ্ধান্ত হতো সেই নিউক্লিয়াসে। নিউক্লিয়াসের সেই সিদ্ধান্ত তিনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্রলীগ এবং ডাকসুর ওপর চাপিয়ে দিতেন।
তিন
প্রিয় পাঠক, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং সেটি নিয়ে বিতর্ক,যাই বলুন না কেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে গেলে একটি পূর্ণাঙ্গ পুস্তিকা রচনা করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারতের অবদান কতখানি সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু শেখ মুজিবের সাথে ভারতের যোগাযোগ কতখানি ছিল এবং কবে থেকে ছিল সে সম্পর্কে সঠিক কেউ কিছু বলতে পারেন না। কিন্তু এক সময় জাসদ করা ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ এবার প্রথম আলোর’ ঈদ সংখ্যায় নতুন তথ্য দিয়েছেন। এই তথ্যটি, আমার ধারণা, অনেকেরই জানা ছিল না। তথ্যটি নি¤œরূপঃ-
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বর্তমানে বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে শুধু দলীয় কর্মকান্ডই নয়, রাজনীতিতেও তিনি নিষ্ক্রিয়। মহিউদ্দিনের মতে ষাটের দশকে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। তিনি অসাধারণ জনপ্রিয় ছিলেন। বলা হতো যে শেখ মুজিবের পরেই তার জনপ্রিয়তা ছিল। সেই শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের বয়ানে মহিউদ্দিন বলছেন-
শাহ মোয়াজ্জেমের কথায় বোঝা যায়, পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে শেখ মুজিবের নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তিনি ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালান। এর একটি বিস্ময়কর বিবরণ পাওয়া যায় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের তৎকালীন উপ হাই কমিশনের পলিটিক্যাল অফিসার শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জির কাছ থেকে। ব্যানার্জি পুরান ঢাকায় চক্রবর্তী ভিলায় থাকতেন। পাশের বাড়িতেই ছিল ইত্তেফাক অফিস। ১৯৬২ সালের ২৪ মার্চ মাঝরাতে ইত্তেফাক সম্পাদক মানিক মিয়া একটি ছেলেকে পাঠিয়ে ব্যানার্জিকে ইত্তেফাক অফিসে ডেকে আনেন। মানিক মিয়ার সঙ্গে ছিলেন শেখ মুজিব। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে তাঁরা কথা বলেন। ব্যানার্জি দেখলেন, এক পর্যায়ে শেখ মুজিব ও মানিক মিয়ার কথাবার্তার ধরণ বদলে গেল। তাঁরা কিছু একটা বলতে বা দেখাতে চাইছেন। ব্যানার্জি জানতে চান তাঁরা উঁচু পর্যায়ের কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো বার্তা বার্তা পৌঁছাতে চাচ্ছেন কি না। মুজিব মুখ খুললেন। বললেন, এই বৈঠক ডাকার উদ্দেশ্য হলো, তাঁরা ব্যানার্জির মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা গোপনীয় চিঠি পাঠাতে চান। মুজিব চিঠিটা ব্যানার্জির হাতে দিলেন। তাঁর মধ্যে তাড়াহুড়ো ছিলো। চিঠিটা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরুকে ব্যক্তিগতভাবে সম্বোধন করে লেখা। ভূমিকার পর সরাসরি একটা কর্মপরিকল্পার কথা উল্লেখ করা হয়েছিলো। মুজিব বললেন, তিনি বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনা করবেন। মানিক মিয়া ইত্তেফাক-এ লেখনির মাধ্যমে প্রচারকাজ চালাবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৬৩ সালের ১ ফ্রেব্রæয়ারী থেকে ১ মার্চের মধ্যে মুজিব লন্ডনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে প্রবাসী সরকার গঠন করবেন। চিঠির শেষ প্যারাগ্রাফে নৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন ও সাজসরঞ্জাম চেয়ে নেহরুকে অনুরোধ জানানো হয় এবং এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মুজিব গোপনে নেহরুর সঙ্গে দেখা করতে চান।
চিঠি পাঠানো হলো। ভারত তখন চীনের সঙ্গে যুদ্ধে বিপর্যস্ত। দিল্লি থেকে খবর এল, মুজিবকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। মুজিব ভাবলেন, ঢাকায় ভারতীয় উপ হাই কমিশনের আমলাদের কারণেই দেরি হচ্ছে। ধৈর্য হারিয়ে তিনি কৌশল পাল্টালেন। গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে আগরতলায় গেলেন। ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। আগরতলায় মুজিবকে রেখে শহীদ সিং দিল্লি যান এবং নেহরুর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন। চীনের সঙ্গে যুদ্ধের পর নেহরু আরেকটি ফ্রন্ট খুলতে চাননি। শচীন সিং আগরতলা ফিরে এসে মুজিবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁকে সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবংতা ভারতের ঢাকা উপ হাই কমিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নেহরুর পরামর্শ ছিল, এরপর থেকে মুজিব যেন ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমেই যোগাযোগ করেন, আগরতলার মাধ্যমে নয়।
শচীন সিংহের ভাষ্যে এবং অন্যান্য সূত্রে জানা যায়, শেখ মুজিব আগরতলা গিয়েছিলেন ১৯৬৩ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে। তিনি সেখানে ছিলেন ১৫দিন। তাঁর আগরতলা মিশন সম্বন্ধে দলের সহকর্মীরা এবং সরকারের গোয়েন্দারা ছিলেন সম্পূর্ণ অন্ধকারে।
১৯৯১ সালে মফিদুল হক দিল্লিতে শচীন সিংহের সঙ্গে দেখা করলে তিনি ঘটনাটি নিজের হাতে লিখে দিয়েছিলেন। সেই ভাষ্য ফয়েজ আহমদ উল্লেখ করেছেন তাঁর আগরতলা মামলা, শেখ মুজিব ও বাংলার বিদ্রোহ বইয়ে।
প্রিয় পাঠক, আজ এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। যে বিষয়টি নিয়ে দু চার কথা বললাম সেই বিষয় নিয়ে হাজার কথা লেখা যায়। দেখা যাক, শরীর স্বাস্থ ভালো থাকলে আগামীতে এসম্পর্কে বিস্তারিত বলার ইচ্ছা রইলো।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।