Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাবা দিবসে বাবাদের নিয়ে তারকাদের শ্রদ্ধা

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৯, ১২:১০ এএম

আজ বাবা দিবস। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে প্রথম বাবা দিবস উদযাপিত হয়। এরপর থেকে এটি নিয়মিতভাবে বাংলাদেশেই উদ্যাপিত হয়ে আসছে বাবা দিবস। বাবা দিবসে আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের তারাকারা তাদের বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের মনের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। আর সেসব কথাই পাঠকের জন্য তুলে ধরেছেনে অভি মঈনুদ্দীন।

আব্বাই অভিনয়ের অনুপ্রেরণা দিতেন : ববিতা
আমার বিয়ের মাত্র চার মাস পরেই আমার আব্বা এ এস এম নিজাম উদ্দিন আতাইয়ুব ইন্তেকাল করেন। যে কারণে মানসিকভাবে সেই সময় অনেক ভেঙ্গে পড়েছিলাম। বাবাকে ঘিরে প্রত্যেক 

সন্তানেরই অনেক স্মৃতি থাকে। আব্বা সবসময় আমাদের ছয় ভাই বোনকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে বাসায় ফেরার কথা বলতেন। আমার জীবনের সাফল্যের মূলমন্ত্র কিন্তু আব্বার কাছ থেকেই পাওয়া। এই যে আমিএতো পরিপাটি থাকি, গুছিয়ে থাকার চেষ্টা করি, এটা আব্বার কাছ থেকেই পাওয়া। আব্বা যখন অফিস থেকে আসতেন তখন আমরা সবাই আব্বাকে পান বানিয়ে খাওয়াতাম। আব্বা তখন বেশ আয়েশ করে পান খেতেন। আব্বার পা টিপে দিতে দিতে তখন সব আবদার করতাম। আব্বা আমাদের সেই আবদার রাখতেন। আবার আব্বা অনেক সিনেমা দেখতেন। সিনেমা দেখে দেখে আমাদেরকে মজার মজার গল্প বলতেন এবং সেই সব গল্পে আব্বা আমাদের অভিনয় করতে বলতেন। সেখান থেকেই কিন্তু অভিনয়ে আমার অনুপ্রেরণা আসা। পরবর্তীতে যখন আমি সিনেমার নায়িকা হিসেবে কাজ শুরু করি, তখনও আব্বা আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিতেন। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় অভিনয়ের আগে আব্বাই সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে চিঠি আদান প্রদান করতেন ইংরেজিতে। শুটিং-এর সময় সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে আব্বার চমৎকার একটি সম্পর্ক তৈরী হয়েছিলো। আমার ইংরেজি শেখার খুব শখ ছিলো বিধায় আব্বা আমাকে ছোটবেলাতে একটি ডিকশনারী কিনে দিয়েছিলেন। আমি তখন প্রথম শ্রেনীতে পড়ি। বাগেরহাটে থাকি সবাই। সবাই আমাকে রেখে মামার বাড়ি যাবে বেড়াতে। আমি বুদ্ধি করলাম কীভাবে আব্বাকে রাজি করানো যায়। আব্বা সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় ফেরার সময় আমিই হারিকেন নিয়ে আব্বাকে এগিয়ে আনতে গেলাম। আমাকে দেখে আব্বা ভীষণ খুশি, কারণ তখন বিদ্যুৎ ছিলোনা। অন্ধকারে আব্বাকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলাম। আব্বা তখণ খুশি হয়ে বললেন কী চাও মা? আমি বললাম আমাকেও সঙ্গ মামার বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। আব্বা রাজি হলেন। আমার পপি নামটি আমার আব্বা এবং আমার মা ডা. বেগম জাহানারা উভয়ে মিলেই রেখেছিলেন। আব্বা আমার জীবনের আদর্শ। তাই আমার ইচ্ছে আমার মুত্যুর পর যেন বনানী কবরস্থানে আব্বার কবরেই যেন আমাকে দাফন করা হয়।

 

পরবর্তীতে আব্বুর কারণেই অনেক সাহস পেয়েছি : পপি
যেহেতু কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়ে আমি তাই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের শুরুতে পরিবারের কারো কেমন কোন সমর্থন ছিলোনা যে আমি নায়িকা হিসেবে সিনেমাতে অভিনয় করি। আমার বাবা শুরু

থেকেই সিনেমাতে অভিনয়ের বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু তারপরও যখন কাজ শুরু করেছি, একের পর এক ভালো ভালো গল্পের সিনেমাতে কাজ করতে থাকি। তখন আব্বু আমাকে সমর্থন দেয়া শুরু করেন। যে কারণে পরবর্তীতে আব্বুর অনুপ্রেরণাতেই আমি সিনেমাতে নিজেকে আরো নিবেদিত করে কাজ শুরু করি। আমার অনেক সিনেমার শুটিং-এ আব্বু সঙ্গে গিয়েছেন এবং ধৈর্য্য ধরে আমার পাশে থেকেছেন। এটা অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু আমার বাবা আমার জন্যই কষ্ট করেছেন। আব্বু চুপচাপ স্বভাবের একজন মানুষ। প্রয়োজনের বাইরে তিনি কথা বলতে অভ্যস্ত নন। যথেষ্ট বিনয়ী একজন মানুষ। আব্বুর এই স্বভাবটাই আমি পেয়েছি। আমি প্রয়োজনের বাইরে কথা বলতে পছন্দ করিনা। সবাইকে বয়সানুযায়ী শ্রদ্ধা রেখে কথা বলি, স্নেহ করি। আমার আব্বুর জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন আব্বু সুস্থ থাকেন, ভালো থাকেন।

 

 

 

আমার বাবাই আমার চলার পথের শক্তি : তারিন
আমার দেখা প্রথম নায়ক, আমার কাছে সেরা, বাবা তোমার হৃদয়টা যে আদর দিয়ে ঘেরা, সারাজীবন দিয়েই গেছো, আরো কতো দেবে, সামান্য এই ভালোবাসা, বলো বাবা নেবে?... বেশ কয়েক বছর আগে বাবাকে নিয়ে আমার গাওয়া একটি গান এটি। গানটি লিখেছিলেন জুলফিকার রাসেল, সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন ইবরার টিপু। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানিয়েই গানটি গেয়েছিলাম আমি। আমার বাবা একজন সৎ মানুষ, তার এই সততাকেই আদর্শ হিসেবে মেনে নিয়ে আমি পথ চলার চেষ্টা করি। আমার বাবা পিডাবিøউডি’র ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। বাবা এতোটাই সৎ ছিলেন যে ঢাকা শহরে তার একটি বাড়ি নেই। বাবা সারা জীবন মানুষের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করে গেছেন। বাবা আমাদের সব বোনদের একটি কথাই বলতেন, ‘সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করে যাবে, বিনিময়ে চাইবেনা কিছুই, সে মনে রাখবে-তাও আশা করবেনা। যদি ভালো কাজ করো তার প্রতিদান নিশ্চয়ই পাবে।’ বাবার এই কথা মাথায় রেখেই আমরা সব বোনেরা জীবনের পথ চলি। আমার বাবা আমার চলার পথের সবচেয়ে বড় শক্তি, অনুপ্রেরণা। আমার বাবা অসুস্থ হবার পরও তার সন্তানদের প্রতি প্রতিমুহুর্তে যে ভালোবাসা প্রকাশ করেন তা আমাদের অনেক আনন্দ দেয়। বাবা আমাদের মাঝে সুস্থভাবে বেঁচে থাকুন এটাই চাই মহান আল্লাহর কাছে। বাবাই আমাদের স্বর্গ, এমন বাবার সন্তান হিসেবে আমি অবশ্যই গর্বিত।

 

 

বাবার আদর্শই নিজের মধ্যে লালন করি : অপূর্ব
আমার বাবা একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই আমি আমার বাবার আদর্শে বেড়ে উঠেছি, বড় হয়েছি। বাবার আদর্শের সবচেয়ে যে বিষয়টি আমি আমার নিজের মধ্যে লালন করি তা হলো, বাবা সবসময়ই সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে একই সুঁতোয় গেঁথে থাকতে ভালোবাসতেন। একসঙ্গে থাকার মধ্যে সবসময়ই তারমধ্যে ভীষণ ভালোলাগা কাজ করতো। সবার সঙ্গে সবার সবসময় দেখা

হয়, কথা হয় এটাই বাবাকে ভীষণ আনন্দ দিতো। আমিও ঠিক তাই পছন্দ করি। পারিবারিক যে বন্ধন সেটাকে এড়িয়ে যাবার কোন সুযোগ নেই। তাই বাবার আদর্শকে আমার নিজের মধ্যে লালন করে বাবার মতো করেই সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে ভালোবাসি আমি। আমি যেমন বাবার স্নেহ মায়া মমতায় বেড়ে উঠেছি, তাই আমিও চাই আমার মায়া মমতা স্নেহ’তে আমার সন্তান আয়াশ বেড়ে উঠার পাশাপাশি আমার বাবা মানে আয়াশ তার দাদার স্নেহ মায়া মমতাত্ওে বেড়ে উঠুক। দাদা দাদীর কাছ থেকেও সে যেন কিছু শিখতে পারে সেটাও চাই আমি। আমি মনকরি একজন সন্তানের সঠিকভাবে বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবারে থাকা প্রত্যেক সদস্যেরই আলাদা আলাদা ভূমিকা আছে। একজন মানুষ ছোট থেকে বড় হয়ে উঠার ক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষাটাই প্রধান এবং সবার আগে। পরিবার থেকে শিক্ষা নিয়েই সে বাইরের পৃথিবীতে পা বাড়ায়। আমিও আমার বাবা মা, ভাই বোনের কাছ থেকে পারিবারিক শিক্ষা নিয়েই নিজেকে বাইরের পৃথিবীতে বিকশিত করেছি। তাই আমি চাই আমার পরিবারে আমার বাবা মায়ের স্নেহ মায়া মমতায় আমার সন্তানও বেড়ে উঠুক। আয়াশ তার মায়ের ভালোবাসা আর আদরে , বাবা মায়ের আদর্শে বেড়ে উঠবে। আমার বাবা আমাকে ছোট্ট বেলায় অপু বলে ডাকতেন, এখনো তাই ডাকেন।

 

আমি গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে, এটাই আমার গর্ব : দিঠি আনোয়ার
ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আমার আব্বু দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিবেদিত একজন মানুষ। আব্বুর এই বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে উৎসাহিত করে। যে কারণে আমারও মাঝে মাঝে মনে হয় দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করা উচিত। অবশ্য আমি এখন আমার দুই সন্তান আদিয়ান, আকিব, আমার সংসার জীবন, আমার সঙ্গীত জীবন নিয়েই বেশি ব্যস্ত। তবে এসব ব্যস্ততা কমে গেলে আমার ইচ্ছে আছে নিজেকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার।

দেশের মানুষের জন্য আব্বুর মতোই কিছু করার প্রবল ইচ্ছে আমার। আমার আব্বু গাজী মাজহারুল আনোয়ার এটাই আমার অনেক অনেক গর্বের বিষয়। আমি তার সন্তান হিসেবে অনেক স্থানেই সম্মানিত হই। আব্বুর সুনাম শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও আছে।

আমি জীবনে চলার পথে আব্বুর কর্মক্ষেত্রে সফলতার বিষয়টি বেশি ফলো করার চেষ্টা করি। তিনি তার বাবা মাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করতেন, সেবা করতেন। একজন সন্তান হিসেবে তিনি যেমন শ্রেষ্ঠ, একজন স্বামী হিসেবেও তিনি শ্রেষ্ঠ, একজন বাবা হিসেবেও তিনি পৃথিবীর অন্যকম শ্রেষ্ঠ বাবা। আবার দাদা, নানা হিসেবেও তিনি শ্রেষ্ঠ। আমার জীবনের সবকিছুই আব্বু জানেন। আব্বুর সঙ্গেই শেয়ার করে শান্তি পাই। সবাই আমার আব্বুর জন্য দোয়া করবেন।

 

 

আব্বুর সঙ্গে ছোটবেলায় রিকসায় যাওয়াটা মিস করি : কণা
ছোটবেলা থেকেই আব্বুর সঙ্গে সম্পর্কটা আমাদের দূরত্বের নয় বন্ধুত্বের। ছোটবেলা থেকেই আব্বুর সঙ্গে সবকিছুই শেয়ার করতাম। মগবাজার গার্লস স্কুলে পড়ার সময় আমি আর আমার বড় বোন একই রিক্সায় আব্বুর সঙ্গে যেতাম। আমি আব্বুর কোলে বসতাম, আর আপু পাশে। আমি আরেকটু বড় হবার পর আমি উপরে বসতাম। এক সময় একসঙ্গে আর স্কুলে যাওয়া হয়ে উঠতোনা। এই বড় বেলায় এসে ছোটবেলার সেই আব্বু, আমি আর আপুর একই রিক্সায় করে স্কুলে যাওয়ার দিনগুলো খুউব মসি করি। আমার কণা নামটি আমার খালুর রাখা। স্বাভাবিক ভাবেই একজন সন্তান বিশেষত মেয়েরা তার মায়ের অনেক গুনাবলীই পেয়ে থাকে। কিন্তু আমি আমার বাবার সততা এবং ক্ষমা করে দেয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে পেয়েছি। আমি আমার পেশায়, আমার কাজে যথেষ্ট সৎ থাকার চেষ্টা করি এবং আমি আমার বাবার মতোই ক্ষমাশীল। জীবন নিয়ে আমার খুউব বেশি উচ্চাকাঙ্খা নেই। এখন যা আছি আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। আমার আম্মু আমার সঙ্গে দেশের বাইরে অনেক দেশে ঘুরেছেন। কিন্তু আব্বু বিমানে উঠতে চান না বিধায় তাকে নিয়ে আমার কোথাও ঘুরতে যাবার সুযোগ হয়নি। তাই আমার খুউব ইচ্ছে একদিন জোর করে হলেও আব্বুকে বিমানে উঠাবো, দেশের বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাবো। আব্বুর সঙ্গে কখনো কোথাও গেলে বিশেষত মার্কেটে আব্বু আমার পিছনে হাটেন। আমাকে নিয়ে কে কী বলেন সেটা আব্বু শুনতে চেষ্টা করেন। আবার কোন স্টেজ শো’তে গেলে আব্বু আমাকে ম্যাসেজ পাঠান-দর্শক এখন নাচের গান চাচ্ছে। এই বিষয়গুলো দারুন ভালোলাগে।

 

বাবার আগেই যেন আমি চলে যাই: মিম

যেহেতু আমার বাবা শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন তাই বিভিন্ন সময়ে যখন বাবার কর্মক্ষেত্রে আমি গিয়েছি, নিজ চোখে দেখেছি বাবাকে সবাই কতো সম্মান করেন, ভালোবাসেন। আবার সেই বাবাই যখন আমার সঙ্গে এখন কোথাও যান তখন তিনি নিজ চোখে উপভোগ করেন সেই বাবারই মেয়েকে দর্শক কতোটা ভালোবাসছেন, শ্রদ্ধা করছেন। বাবার বুক তখন আনন্দে ভরে যায়। আমারও চোখে তখন জল চলে আসে। নিশ্চয়ই এটা অনেক ভালোলাগার যে বাবার আন্দ হওয়ার মতো, গর্ব করার মতো জীবনে কিছু একটা করতে পেরেছি। অভিনয়ে দিয়ে দর্শকের মন জয় করা খুব সহজ কোন কথা নয়।

সেই কঠিন কাজটিই যখন করতে পেরেছি তখনই আমাকে নিয়ে বাবার আনন্দ হয় বেশি। বাবা আমাকে ছোটবেলায় টুকটুকি বলে ডাকতেন। আবার একটু বড় হবার পর বাবা আমাকে বাবু বলে ডাকা শুরু করেন। এখনো আমাকে বাবা বাবু বলেই ডাকেন। এই বড় বেলাতে এসেও বাবার বাবু ডাকার মধ্যে ছোট্টবেলার সেই আদুরের ডাকটাই পাই আমি। লাক্স চ্যানেলআই সুপারস্টার হবার পর আমি প্রথম হুমায়ূন আহমেদ স্যারের নির্দেশনায় রিয়াজ ভাইয়ের বিপরীতে অভিনয় করে পাঁচ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলাম। পুরো টাকাটাই তখন বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। অবশ্য তারও আগে আমি যখন অষ্টম শ্রেনীতে বৃত্তি পেলাম বৃত্তির টাকাও বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সত্যি বলতে কী বাবা আমার জীবনের পুরোটাতে এমনভাবে মিশে আছেন বাবা ছাড়া পৃথিবীতে আমি একটি দিনও কল্পনাও করতে পারিনা। আমার বাবা মায়ের আগেই যেন ঈশ^র আমাকে এই পৃথিবী থেকে নিয়ে যান।

 

আমার বাবার মতোই আমি ক্ষমাশীল: সিঁথি সাহা
আমার বাবা বাবলা চন্দ্র সাহা। আমার ব্যক্তি জীবনে এবং সঙ্গীত জীবনে আমার বাবার ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। বাবা যদি ছোটবেলায় সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠিয়ে রেওয়াজ না করাতে বসাতেন, ঢাকায় আর ভারতে গান শেখাতে না নিয়ে যেতেন তাহলে আমার জীবনে কিছুই হতোনা। বাবার কারণেই আজ আমি একজন সঙ্গীতশিল্পী হতেে পেরেছি। আমার বাবা খুবই সহজ সরল একজন মানুষ এবং সর্বোপরি একজন সৎ মানুষও বটে।

আমার বাবার কাছে কেউ কোন অপরাধ করলে কোন কারণে, বাবা তা সহজেই ভুলে গিয়ে ক্ষমা করে দেন। বাবার এই গুনটি আমিও পেয়েছি। আমি ক্ষমা করে দিতে শিখেছি বাবারই কাছ থেকে। বাবার মতো সৎ থাকার চেষ্টা করি আমি। বাবা আমার জন্য জীবনে অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু আমি বাবার জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। তাই ইচ্ছে করে বাবাকে খুউব সুন্দর আনন্দময় জীবন উপহার দিতে, ইচ্ছে করে বহুদেশে বাবাকে নিয়ে ঘুরতে। কারণ বাবা ঘুরতে খুউব ভালোবাসেন। এখনো দেশের বাইরে কোথাও গেলে আমার বাবাই যান আমার সঙ্গে। আমার বাবা হাজার জনে একজন। এমন বাবার সন্তান হিসেবে আমি গর্বিত। বারে বারে এমন বাবার সন্তান হয়েই পৃথিবীতে আসতে চাই আমি। শেষে একটি কথা বলতেই হয়, আমার বাবা মা আমার জন্য ভগবান।

 


জীবন চলার পথে বাবাকে খুব মিস করি : কল্যাণ কোরাইয়া
আমার বাবা পিটার কোরাইয়া, গেলো বছরের ১০ মে বাবা হঠাৎ করেই আমাদের ছেড়ে চলে যান পরপারে। বাবার এই হঠাৎ জলে যাওয়ায় আমি অনেকটাই দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ পরিবারের হাল আমাকেই ধরতে হয়েছিলো। আমার নতুন জীবনে পার রাখার কিছুদিন পরই বাবা চলে যান। যে কারণে আমাকে আরো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো। বাবা যেভাবে আমাদের সংসারের হাল ধরেছিলেন, সংসারটাকে গুছিয়ে এনেছিলেন। তার চিন্তা ভাবনা, তার আদশের জায়গা থেকে যেভাবে নিজের জীবন পরিচালনার পাশাপাশি আমাদের জীবন পরিচালনা করতেন সেভাবেই বাবার আদর্শকে মাথায় রেখে জীবনটাকে সাজানোর চেষ্টা করছি। প্রতিনিয়তই নিজেকে নিজের পরিবারকে সাজানোর চেষ্টা করছি, ভুল করছি। কিন্তু ভুল শুধরিয়ে দেয়া আমার সেই বাবা আর নেই, তাই নিজের ভুল নিজেই বুঝে তা শুধরানোর চেষ্টা করছি। বাকীটা জীবন এভাবেই বাবাকে ছাড়াই কাটাতে হবে, ভাবতে গেলেই বুকের ভেতর খুউব কষ্ট হয়। বাবা তোমাকে সত্যিই ভীষণ মসি করছি , খুউব ভালোবাসি তোমাকে বাবা। তুমি আমাদের প্রার্থনায় আছো সবসময়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ