পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সম্পদ অর্জনের মোহ নেই এই রকম মানুষ বর্তমান পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুর্বিষহ। শুধু অর্জন নয় সম্পদ রক্ষা বা বৃদ্ধির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা যেন মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। ব্যক্তিগতভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ার স্বপ্ন প্রত্যেকের মধ্যেই বিরাজ করে। নিজের জীবন স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং পরবর্তী প্রজন্মকে সম্পদশালী হিসাবে রেখে যেতে পারলেই যেন শান্তি। মানুষের জীবন পরিচালনা করার জন্য সম্পদ একটি অপরিহার্য উপকরণ। সাধারণত দুই ধরনের সম্পদ মানুষের জীবনকে পরিচালনায় সাহায্য করে। এক. তার ব্যক্তিগত অর্জিত সম্পদ। দুই. রাষ্ট্রীয় সম্পদ। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ছাড়া কখনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। যে দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যবহার যত যথাযথ, সে দেশের অর্থনৈতিক চাকা তত বেশি সমৃদ্ধ। মূলত দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা অনেকটাই নির্ভর করে দেশের সকল সম্পদের সুষ্ঠু ও যথার্থ ব্যবহারের উপর। আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদের ব্যবহার কীভাবে হচ্ছে তা বলা বাহুল্য। সবাই যখন পাহাড় পরিমাণ সম্পদ অর্জন আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে ব্যস্ত তখন আমাদের দেশে যত্রতত্র নষ্ট হচ্ছে জাতীয় সম্পদ। যেগুলোর নেই কোনো ব্যবহার, নেই কোনো রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা। অযতেœ, অবহেলায় পড়ে আছে প্রচুর পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ।
রেলস্টেশনে বা রেললাইন দিয়ে যাওয়ার সময় খেয়াল করলেই নজরে পড়ে অসংখ্য সম্পদের করুণ অবস্থা। প্রত্যেকটি স্টেশনে পড়ে আছে নষ্ট হওয়া ট্রেনের বগি ও মূল্যবান ইঞ্জিন। যেগুলো যুগ যুগ ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। না আছে মেরামত করার কোনো ব্যবস্থা, না আছে অন্য কোনো উপায়ে ব্যবহার নিশ্চিত করার পরিকল্পনা বা উদ্যোগ। হাজার হাজার ফিট রেলের ¯িøপার, লোহার যন্ত্রাংশ, পাথরসহ অনেক সম্পদই মাটির নিচে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা এসব রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি কালের ব্যবধানে ঘাটতি বাড়িয়ে দিচ্ছে রেল পরিবহনে। অথচ অপ্রয়োজনীয় ও অব্যবহৃত লাইন উত্তোলন, নষ্ট হওয়া ট্রেন, বগি ইত্যাদির যথাযথ মেরামতের মাধ্যমে কমানো যেতে পারে ভর্তুকির পরিমাণ। নিয়মিত ব্যবহৃত রাষ্টীয় সম্পদের মধ্যে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ অন্যতম। বিদ্যুতের যত্রতত্র ব্যবহার নিয়ে সব সময়ই বিপাকে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অপ্রয়োজনে বা অবৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাসের ব্যবহার আমাদের দেশের নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সম্পদ না হওয়ার কারণে অবহেলায় অসচেতনতায় প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ। গ্রাহক হিসাবে সাধারণ মানুষ যেমন সম্পদের অপচয় করছে তেমনি কর্তা ব্যক্তিরাও সম্পদ অপচয়ে পিছিয়ে নেই। দেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে রয়েছে সম্পদের প্রাচুর্যতা। গ্যাস, কয়লা, ইউরেনিয়ামসহ অসংখ্য সম্পদ আছে পর্যাপ্ত। যেগুলো উত্তোলন, সংরক্ষণ এবং ব্যবহার উপযোগী করে তোলার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরো যতœশীল হওয়া প্রয়োজন। অধিকাংশ বিদ্যুৎ অফিসেই দেখা যায় প্রচুর পরিমাণ পুরাতন বাইকের বিপুল সমারহ। দেখে বোঝা যায় না বিদ্যুৎ অফিস নাকি মটর সাইকেলের শো-রুম। যথাসময়ে মেরামত না করা, অযতেœ ফেলে রাখা বা ব্যবহার কম হওয়ার কারণেই মূলত প্রতিবছর এভাবে শত শত মটর সাইকেল গ্যারেজ করে ফেলে রাখতে হচ্ছে। নতুন করে আমদানি করতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় খাত থেকে।
স্বাস্থ্য সেবার অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন সাধন হলেও অযতেœ আছে সরকারি স্বাস্থ্য ভবনগুলো। অধিকাংশ ইউনিয়ন বা উপজেলা স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোর অবস্থা বর্ণনাতীত। যেখানে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো গড়ে উঠছে চাকচিক্য মনোরম পরিবেশে, সেখানে রাষ্ট্রীয় হাসপাতালের পরিবেশ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন ও যথাযথ ব্যবহার থাকলেও রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠানের উপকরণগুলোর সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষনের নজির অনেকটাই কম। যা সরকারি স্বাস্থ্যসেবাকে বার বার ব্যাহত এবং প্রশ্নবিদ্ধ করছে। শিক্ষা খাতে সরকার প্রতিবছরই দিচ্ছে বড় আকারের বাজেট। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার বার বার নানাবিধ উদ্দ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। দিন দিন বাড়ছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেওয়া হচ্ছে যুগোপযোগী নানাবিধ শিক্ষা উপকরণ। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। কিন্তু লক্ষনীয় বিষয় হলো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে পরিমাণ সম্পদ বা উপকরণ সরবারহ করা হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ সম্পদ প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিশেষ করে প্রাইমারী লেবেলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্র ইত্যাদি সামান্য ত্রæটি হলেই রাখা হচ্ছে গোডাউন করে। অথচ ব্যক্তি মালিকানায় এ রকমটা খুঁজে পাওয়া যায় না। কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিদিন অপচয় হচ্ছে পানি, বিদ্যুৎসহ অনেক সম্পদের। বিনা প্রয়োজনে ফ্যান, লাইট, এসি ইত্যাদির মাধ্যমে অপচয়ের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে সরকার নিয়েছে নানা ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষপে। তার ধারাবাহিতায় ছাত্র ও যুব সমাজের প্রশিক্ষণের জন্য কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি সামগ্রী সরবারহ করা হয় অনেক সময়। যেগুলোর সঠিক ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না কখনো কখনো। এছাড়াও রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, ফুটওভারব্রিজ ইত্যাদির সঠিক ব্যবহার করার প্রবণতা নেই মানুষের মাঝে। ফুটপাতগুলো ব্যবহার হচ্ছে দোকান কিংবা অন্য কোনো কাজে। সরকারি জমি (খাস জমি) প্রায় সময়ই ব্যবহার হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানা হিসাবে। এগুলো ব্যবহারে মানা হচ্ছে না কোনো বিধি নিষেধ। শুল্ক অফিসেও দেখা যায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় বিভিন্ন যানবাহন ও আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যেতে। এইভাবে দেশের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনাসমূহতে কোটি কোটি টাকা সমমূল্যের রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে নিরবিচ্ছিন্নভাবে। এসব দেখার জন্য যেন কেউ নেই। অবিলম্বে নষ্ট হতে যাওয়া এইসব সম্পদের মেরামতের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা উচিত। ভুলে গেলে চলবে না, রাষ্ট্রের উন্নয়ন মানেই নাগরিকের উন্নয়ন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।