চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
নাগরিক জীবনের অন্যতম উদ্বেগের নাম ‘খাদ্যে ভেজাল’। কথায় বলে, “ ঐবধষঃযু ভড়ড়ফ, ঐবধষঃযু ষরভব” অর্থ্যাৎ সুস্থ খাবার, সুস্থ জীবন। যে খাদ্য দেহের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং দেহের বৃদ্ধিসাধন, ক্ষয়পূরণ ও রোগ প্রতিরোধ করে তাই স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য হিসেবে পরিচিত। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এদেশে খাদ্য মানেই ভেজালে পরিপূর্ণ। ১৬ কোটি মানুষ আজ ভেজাল আতঙ্কে রয়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আম, কলা, পেঁপে, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের ফল পাকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড। ফলে জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, পেটের পীড়া, লিভার ও কিডনি সমস্যা এবং বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হচ্ছে। দ্রæত পচন রোধ করতে খাদ্যপণ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। যেমন মাছ, মাংস, সবজি, ফল ও দুধ ইত্যাদি। যার পরিণতি বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ, কিডনিরোগ, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ প্রভৃতি। এছাড়াও গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে, চাউল মুড়ি সাদা করতে ইউরিয়া, খাবারের ওজন বৃদ্ধিতে অ্যামেনিয়াম সালফেটসহ খাবারকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের ক্ষতিকারক রং।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি হলেও ভোক্তা ১৬ কোটি ৩০ লক্ষ। অতিরিক্ত সংখ্যাটি শোনার পর অবাক হবার কিছু নেই। বর্তমানে প্রায় ৩০ লক্ষ মা গর্ভবতী। মায়ের পেটে অবস্থানরত নবাগত শিশুরাও ভোক্তা হিসেবে গণ্য হবে। কারণ ভেজাল খাদ্যের পরিণতি তাদেরও ভোগ করতে হবে।
খাদ্যে ভেজাল বন্ধ করতে হলে প্রতিটি নাগরিককে ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে। মিথ্যা, লোভনীয় ও প্রতারণাপূর্ণ বিজ্ঞাপণ বন্ধ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম বাড়াতে হবে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জনশক্তি বাড়াতে হবে এবং কর্মপরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। সর্বোপরি নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে। কারণ ভেজাল খাবার গ্রহণের ফলে মানুষ হার্টঅ্যাটাক, বøাড ক্যান্সারসহ বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ভেজাল একটি নীরবঘাতকরূপে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। একজনকে খুনের শাস্তি যদি মৃত্যুদন্ড হয়, তবে যারা লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যার ফাঁদ পেতেছে তাদের বিরুদ্ধে কেন মৃত্যুদন্ড নয়? সম্প্রতি খাদ্যে ভেজালের অপরাধ প্রমাণিত হলে চীনে মৃত্যুদন্ডের আইন প্রনয়ণ করা হয়েছে। আমাদের দেশেও ১৯৭৪ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫)গ) এর ১(ঙ) উপধারায় খাদ্যে এবং ঔষধে ভেজাল মেশালে বা বিক্রি করলে মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনটির প্রয়োগ নেই। ২০১৩ সালে প্রণীত ভোক্তা অধিকার আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড। আইনটির যথেষ্ট ফাঁকফোকর রয়েছে। অবিলম্বে আইনটি সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা উচিত। খাদ্যে ভেজাল একটি জাতীয় সমস্যা ও বর্তমানে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে আমাদের সামনে প্রতীয়মান হয়েছে। আমাদের নীতি নির্ধারকদের সর্বাগ্রে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হবে। দেশ ও জাতির জাতির সত্যিকার অর্থে উন্নতি চাইলে খাদ্যসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এখনই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।