প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত মালেক আফসারি পরিচালিত পাসওয়ার্ড সিনেমাটি নিয়ে মুক্তির আগেই নকলের অভিযোগ উঠেছিল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনাও হয়। তখন মালেক আফসারি এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলেন। কেউ যদি সিনেমাটি ভারতীয় কিংবা তামিল সিনেমার নকল প্রমাণ করতে পারেন, তবে তাকে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেবেন। মালেক আফসারি এতটাই দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন যে পাসওয়ার্ড নকল সিনেমা তা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, তার চ্যালেঞ্জ কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। কারণ সিনেমাটি ভারতীয় কিংবা তামিল সিনেমার নকল নয়। ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দক্ষিণ কোরিয়ার সিনেমা ‘দ্য টার্গেট’Ñএর নকল। এটি পরিচালনা করেছেন চ্যাং। এ সিনেমার সত্ত¡ নিয়ে নির্মিত হয়েছে দেবা কাট্টা পরিচালিত ‘ডিনামাইট’ (২০১৫)। মিলছে ২০০৭ সালে ভারতীয় বলিউড নির্মাতা আনিস বাজমির পরিচালিত ‘ওয়েলকাম’ ছবিতে অভিনয় করা ফিরোজ খানের সঙ্গে! পাসওয়ার্ড সিনেমার দ্বিতীয় দৃশ্য অর্থাৎ প্রথম গান থেকেই মিলে যাচ্ছে কবির খান পরিচালিত ও সালমান খান অভিনীত ‘এক থা টাইগার’র (২০১২) ইস্তানবুলের গানের সঙ্গে। দৃশ্য ধারণেও মিল পাওয়া গেছে। তবে মালেক আফসারি নাকি ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে সিনেমাটি নকল বলে স্বীকার করে, আবার তা সরিয়েও ফেলেন। যদি স্বীকারই করেন তাহলে সিনেমাটি নিয়ে এত বড় বড় কথা বললেন কেন? এখন তিনি কি তার ঘোষিত ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেবেন? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সিনেমাটি কোন সিনেমার নকল তা ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্য থেকে যে আগে এই নকল ধরতে পেরেছেন, তাকে এই পুরস্কার দেয়া যেতে পারে। অবশ্য মালেক আফসারি যুক্তি দেখাতে পারেন, আমি তো বলেছি পাসওয়ার্ড ভারতের কোনো সিনেমার নকল নয়, এটি কোরিয়ান সিনেমার নকল। কাজেই পুরস্কার কেন দেব! এ ধরনের যুক্তিকে মানুষ কুযুক্তি হিসেবেই ধরে নেয়। যাই হোক, প্রযুক্তির এই দুনিয়ায় কোনো কিছুই গোপন থাকে নাÑতা বোধ করি মালেক আফসারি ভুলে গিয়েছিলেন। আর ভুলে গিয়েছিলেন দর্শকের সাথে চ্যালেঞ্জ দেয়া কতটা বিপজ্জনক এবং তারাই সবচেয়ে বেশি খোঁজ-খবর রাখেন কোথায় কোন সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। পাসওয়ার্ড কোন সিনেমার নকল তা তারা সিনেমাটি মুক্তির প্রথম দিনেই খুঁজে বের করে ফেলেছেন। অন্যদিকে সিনেমাটির নায়ক শাকিবও বেশ জোরেসোরে প্রচার চালিয়েছিলেন পাসওয়ার্ড বিশ্বমানের সিনেমা। সিনেমার প্রচারের কাজে এমন কথা বলা যেতেই পারে। অতীতেও সিনেমার প্রচারে পরিচালক-নায়করা এমন কথা বলেছেন। ৮০ দশকে কালো গোলাপ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, ববিতা, বুলবুল আহমেদের মতো তারকারা। সে সময় সিনেমাটির প্রচারের জন্য বিটিভিতে বিজ্ঞাপন প্রচার হয়েছিল। সেখানে রাজ্জাক বলেছিলেন ‘আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ছবি কালো গোলাপ’। প্রচারণার কী অসাধারণ ধরণ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক! নায়করাজের যারা ভক্ত তারা এ কথায় অবশ্যই আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কারণ নায়করাজ নিজে তা বলেছেন এবং তার কথার অবশ্যই মূল্য আছে। নায়করাজের ঐ কথা মিথ্যা হয়নি। কালো গোলাপ সিনেমাটি ব্যাপকভাবে দর্শক প্রশংসিত হয়। সিনেমাটি নায়করাজ অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। তবে সিনেমা প্রচারের ক্ষেত্রে এমন কথা বলা ঠিক নয়, যাতে দর্শক কথা ও কাজের সাথে মিল খুঁজে না পান। তাছাড়া দর্শকদের এতটা বোকা ভাবাও ঠিক নয়। তারা ঠিকই বোঝে, মাত্র এক-দেড় মাসে বিশ্বমানের কোনো সিনেমা নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বিশ্বমানের সিনেমা কি, কেমন এবং কাকে বলে, তার পরিধি কি, ব্যাপকতা কতটুকুÑএ সংজ্ঞাটা পরিচালক ও শাকিব জানেন কিনা, তা নিয়ে যদি দর্শক প্রশ্ন তোলে তবে তাদের দোষ দেয়া যাবে না। সে যাই হোক, সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন শাকিব খান। বলা বাহুল্য, শাকিব তার প্রথম প্রযোজিত সিনেমা হিরো দ্য সুপারস্টার যখন প্রযোজনা করেন, তখনও এর বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ উঠেছিল। দর্শক ঠিকই বুঝতে পারেন, সিনেমাটি তামিল সুপার স্টার প্রভাস অভিনীত র্যাবেল সিনেমাটির হুবহু নকল করে নির্মাণ করা হয়েছিল। এ হিসেবে বলা যায়, শাকিব খান যে দুটি সিনেমা প্রযোজনা করেছেন দুটিই নকল। প্রশ্ন হচ্ছে, শাকিবের মতো এমন একজন সুপ্রিম হিরো যখন প্রযোজনা করবেন, তখন কেন নকল সিনেমা প্রযোজনা করবেন? তিনি কি একজন ভাল স্ক্রিপ্ট রাইটারের মাধ্যমে উদ্ভাবনী গল্প দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে পারেন না? নিদেন পক্ষে বিদেশি কোনো সুপারহিট সিনেমার কপিরাইট এনে তা নির্মাণ করে নকলের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন না? এ দেশে কপিরাইটে নির্মিত অনেক সিনেমা সুপারহিট হয়েছে। এমনকি সেগুলো মূল সিনেমার চেয়েও দর্শক বেশি পছন্দ করেছে। যেমন সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত এবং সালমান শাহ ও মৌসুমী অভিনীত কেয়ামত থেকে কেয়ামত। এসব উদাহরণ সামনে থাকতে শাকিবকে কেন চুরি করে নকল সিনেমা বানাতে হবে? আবার নকল নয় বলে চ্যালেঞ্জই বা কেন দিতে হবে? এ প্রজন্মের প্রযুক্তি নির্ভর দর্শকের কাছে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ দেয়া কি বোকামি নয়? এতে কি শাকিবের যে ওজন তা হালকা হয়ে যাচ্ছে না? তার প্রতি দর্শক বিশ্বাস হারাচ্ছে না? আগামীতে শাকিব যে সিনেমা প্রযোজনা করবেন সেটা যত মৌলিক গল্প নিয়েই নির্মিত হোক না কেন, তা যদি দর্শক নকল মনে করে, তবে তাদের কি দোষ দেয়া যাবে? একবার বিশ্বাস হারালে তা ফিরে পাওয়া যে কত কঠিন, তা কি শাকিব বোঝেন না? তার মতো একজন নির্ভরশীল নায়কের কাছ থেকে এটা কি আশা করা যায়? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শকদের যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তাতে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে, পরিচালক এবং শাকিব দুজনের প্রতিই দর্শক অনেকটা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সিনেমাটি দেখে আবু বকর সিদ্দিক নামে এক দর্শক স্ট্যাটাস দিয়েছেন এভাবে, প্রতি ঈদে একটাই পরিকল্পনা থাকে, মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমা হলে গিয়ে দেখতেই হবে। সেই ধারাবাহিকতায় অনেক আশা নিয়ে পাসওয়ার্ড দেখতে গেলাম। কারণ এবারই প্রথম বাংলা ভাষার বিশ্বমানের সিনেমা দেখবো। সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত দেখেছি। সা¤প্রতিক সময়ে আমার দেখা শাকিবের জঘন্যতম সিনেমা এটি। ফরাসি সিনেমা পয়েন্ট বø্যাঙ্ক এবং দক্ষিণ কোরিয়ান সিনেমা দি টার্গেট এই দুই সিনেমার কাহিনী ও চিত্রনাট্যই ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড মানের সিনেমা পাসওয়ার্ড! কেউ যদি নকল প্রমাণ করতে পারে তাইলে পরিচালক মালেক আফসারী বলেছিলেন ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দিবেন। স্ট্যাটাস দিয়েছি, নজরে পড়লে একটা লাইক দিয়ে বিকাশে প্লিজ টাকাটা পাঠিয়ে দিয়েন খরচসহ! খলিলুর রহমান ফয়সাল নামে একজন লিখেছেন, দেখে আসলাম পাসওয়ার্ড। চিৎকার চেঁচামেচিতে ভরা এই মুভি। কোন গল্প নেই। ডিরেকশনের আগা মাথা কিসসু হয়নি। ভোগাস, ডিজগাসটিং মার্কা ছবি এটি। শাকিবের চেয়ে ডিরেক্টরের দোষ বেশি। শাকিবের কাজ অভিনয় করা, ডিরেক্টরের কাজ দৃশ্যগুলো তৈরি করা। ডিরেক্টর মিস্টার আফসারি স¤পূর্ণরূপে ব্যর্থ। মিথ্যে কথা বলে ডিরেক্টর আমাদেরকে হলে যেতে অনুরোধ করেছেন। সেটা একটা অপরাধ বলে মনে করি। ইন্টারন্যাশনাল মান বলতে উনি কি বুঝাতে চেয়েছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে পাসওয়ার্ডের চেয়ে বাংলাদেশেই ন্যাশনাল অনেক ভালো মুভি আছে। দর্শকদের এ ধরনের প্রতিক্রিয়া থেকে এটাই বোঝা যায়, তারা প্রিয় নায়ক-পরিচালকের ওপর ভালবাসার জেদ থেকেই ক্ষুদ্ধ হয়ে এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এ প্রতিক্রিয়াকে সম্মান দেখিয়ে পরিচালক ও শাকিবের উচিত হবে ভবিষ্যতে যাতে সিনেমা নির্মাণ করে এ ধরনের অসম্মানজনক পরিস্থিতে না পরতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।