মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
শ্রীলঙ্কায় ২১ এপ্রিলের বিস্ফোরণের মধ্যে দিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং যেটা এক পর্যায়ে ইসলামভীতিতে রূপ নিয়েছে, সে অবস্থায় মনে হচ্ছে মুসলিম রাজনীতিবিদদের সাথে নিজের সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার একটা সুযোগ পাচ্ছেন মাহিন্দা রাজাপাকসা, ২০১৪ সালে যিনি মুসলিমদেরকে বিচ্ছিন্ন করার মতো মারাত্মক ভুল করেছিলেন।
আগামী ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শ্রীলঙ্কা পোদুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) দলের পক্ষে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার কথা রয়েছে মাহিন্দা রাজাপাকসার ভাই গোতাভায়া রাজাপাকসার। সেই নির্বাচনের আগ দিয়ে মুসলিম রাজনীতিবিদদের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে সম্মত হন রাজাপাকসা, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সিংহলী-বৌদ্ধ সংখ্যাগুরু জণগোষ্ঠির নির্যাতনের প্রতিবাদে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন, যেখানে রাষ্ট্র এই নির্যাতনকে এক ধরনের প্রশ্রয়ের দৃষ্টিতে দেখছে। ২০১৪ সালে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আলুথগামাতে যখন মুসলিম-বিদ্বেষী দাঙ্গা লেগেছিল, রাজাপাকসা তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। শনিবার তিনি নয়জন সাবেক মন্ত্রীর সাথে কথা বলেন।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকের পরিবেশ ছিল আন্তরিক। রাজাপাকসা তাদের যন্ত্রণার কথা শুনেছেন। কিন্তু একই সাথে, তিনি এই সুযোগে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আরব সংস্কৃতির যে বিস্তার ঘটছে, সেটাকে সমস্যার মূল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সিংহলী-বৌদ্ধদের যে শত্রুতা, তুর মূলে রয়েছে এই আরব সংস্কৃতির প্রাদুর্ভাব।
এমন সময় এই বৈঠক হলো, যখন সাত হাজারের বেশি মুসলিম পরিবার দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছে, কারণ ইস্টার সানডেতে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের আটকের জন্য যে অভিযান শুরু হয়েছিল, সেটা এখন মুসলিম-বিরোধী অভিযানে রূপ নিয়েছে। তুচ্ছ অপরাধ বা কোন রকম অপরাধ ছাড়াই বহু মুসলিমদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনকি এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে যে, আরবি ভাষায় লেখা বই রাখার দায়ে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পাশাপাশি সপ্তাহ দুয়েক আগে প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে কট্টর বোদু বালা সেনার (বিবিএস) জেনারেল সেক্রেটারি গালাগোদা আত্থে নানাসারা থেরোকে মুক্তি দেয়ার পর পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
ইস্টার সানডে হামলার পরপরই মুসলিম ব্যবসায়ীদের বয়কটের যে প্রচারণা শুরু হয়েছিল, সেটি আরও শক্তিশালী হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সিংহলীদের দোকানগুলোতে এখন মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বৌদ্ধ পতাকা টানিয়ে রাখা হয়েছে। দোকানগুলোতে বুদ্ধের মূর্তি রাখা হচ্ছে, যেগুলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মনোযোগ আকর্ষণে সাহায্য করছে। এর সার্বিক ফল হলো মুসলিমরা এখন শ্রীলঙ্কায় বসবাস করাকে ঝামেলাপ‚র্ণ মনে করছে। গত দেড় মাসে তাদের ব্যবসায়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
ইস্টার্ন প্রভিন্সের গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এম এল এ এম হিজবুল্লাহ। পার্লামেন্টের সদস্য বৌদ্ধ ভিক্ষু আথুরুলিয়ে রত্মা থেরোর আমরণ অনশন থেকে সৃষ্ট চাপের কারণে তিনি পদত্যাগ করেন। বাত্তিকালোয়াতে কথিত ‘শরীয়া ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠার জন্য সৌদি আরবের কাছ থেকে তহবিল নেয়ার কারণে তিনি বিতর্কের মধ্যে পড়েন। হিজবুল্লাহর সাথে আরও পদত্যাগ করেছেন ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের গভর্নর আজাথ স্যালি এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী রিশাদ বাসিউদ্দিন। এই তিনজনেরই পদত্যাগ দাবি করেছিলেন আথুরুলিয়ে রত্মা থেরো। নানাসারা থেরোর নেতৃত্বাধীন বিবিএস এবং শ্রীলঙ্কার ক্যাথলিক চার্চের প্রধান কার্ডিনাল ম্যালকম রঞ্জিত উভয়েই এই দাবিকে সমর্থন করেন।
এর পরপরই সরকারের নয়জন মুসলিম সদস্য পদত্যাগ করেন। এদের মধ্যে চারজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীও রয়েছেন, যেটা শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটা নজিরবিহীন ঘটনা। পদত্যাগকারী মন্ত্রীরা বলেছেন যে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে সা¤প্রদায়িক সহিংসতা চলছে এবং যে কারণে পাঁচ শতাধিক দোকানপাট ধ্বংস হয়েছে, সেটার প্রতিবাদে তারা পদত্যাগ করেছেন। তবে, অনেকেই মনে করেন যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অবস্থানরত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত না করার কারণে এবং তাদের মধ্যে এ ধরনের উগ্র মানসিকতার পরিবর্তনে চেষ্টা না করার কারণে মুসলিম মন্ত্রী ও পার্লামেন্ট সদস্যদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
তবে, মুসলিম রাজনীতিবিদরা এটা মানতে নারাজ যে, তাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে উগ্রপন্থার উত্থানের সময় তারা চুপ করে ছিলেন এবং দেশে ওয়াহাবি মতবাদ, আরব সংস্কৃতি ও সন্ত্রাসবাদের প্রসারে তারা সাহায্য করেছেন। ২১ এপ্রিলের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে মুক্তিতে ভূমিকা রাখায় বিশেষভাবে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মন্ত্রী বাথিউদ্দিন।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা শুক্রবার মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠকে বলেছেন যে, ২১ এপ্রিলের আত্মঘাতী হামলার বিষয়ে গঠিত পার্লামেন্টারি সিলেক্ট কমিটিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তির বিষয়টি যেন মিডিয়ার সামনে করা না হয়। তিনি বলেন যে, তিনি সরকারী কর্মকর্তাদের বলবেন যাতে তারা এখানে না যায়। প্রেসিডেন্ট দাবি করেন যে, এ ধরনের বক্তব্য প্রকাশিত হলো রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক অনেক গুরুত্বপ‚র্ণ তথ্য প্রকাশিত হয়ে পড়বে। তবে বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন যে, তদন্তকারীদের বক্তব্য প্রকাশিত হলে প্রেসিডেন্টের অদক্ষতার বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে যাবে বলেই প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পিএসসিতে সাবেক প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি হেমাসিরি ফার্নান্দো (২১ এপ্রিলের হামলার পর যাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়) এবং পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল পুজিথ জয়াসুন্দারা (যাকে বাধ্যতাম‚লক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে) বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন।
শীর্ষ এই দুই কর্মকর্তা বলেছেন যে, জাতীয় নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাবের কারণেই বোমা হামলা ঠেকানো যায়নি। রাজনৈতিক শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীন আচরণ করেছেন বলেও তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে।
গত বছরের অক্টোবর থেকে আইজিপি জয়াসুন্দারাকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) বৈঠক থেকে দ‚রে রাখা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের খামখেয়ালি মতো এই কাউন্সিলের বৈঠক হয়ে আসছে।
সাবেক আইজিপি বলেছেন, “প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কাপিলা ওয়াইদিয়ারত্মে সে সময় আমাকে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, আমার বৈঠকে যোগ দেয়ার প্রয়োজন নেই”। সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব হেমাসিরি ফার্নান্দো পিএসসিতে বলেছেন যে, ইস্টার হামলায় বিস্ফোরণের জন্য যে ন্যাশনাল তাওহিদ জামাতকে (এনটিজে) দোষারোপ করা হচ্ছে, কোন এনএসসি বৈঠকেই তাদের বিষয়টি আলোচনায় আসেনি।
সাবেক আইজিপি স্বীকার করেন যে, এপ্রিলের শুরুর দিকে অতি গোপনীয় এক বার্তায় এনটিজে’র চরমপন্থী ইসলাম প্রচারক জাহরান হাশিম ও তার সহযোগীদের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার বিষয়টি জানানো হয়েছিল।
দুই কর্মকর্তা আরও প্রকাশ করেছেন যে, হামলার বেশ কয়েক ঘন্টা আগে স্টেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের (এসআইএস) প্রধান তাদেরকে বলেছিলেন যে, ইস্টার সানডের দিন “মারাত্মক কিছু ঘটতে পারে”। তথ্য ছিল আরও সুনির্দিষ্ট এবং বলা হয়েছিল যে, ‘মেথোডিস্ট চার্চগুলোকে’ টার্গেট করা হতে পারে। নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে কিছু করার আগেই তিনটি হোটেল ও তিনটি চার্চে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
শ্রীলঙ্কায় এখনও জরুরি আইন জারি রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।