পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বব্যাপী দিন দিন নন ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থনীতির কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ এখন প্রযুক্তি নির্ভর এই চ্যানেলে আর্থিক লেনদেন করছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীতে মোবাইল ও অনলাইন ভিত্তিক নন ব্যাংকিং এসব চ্যানেলে বিশ্বের বেশিরভাগ অর্থের লেনদেন হবে। এতে ব্যাংকিং যে খাত রয়েছে তা ঝুঁকির মুখে পড়বে। মানুষ ব্যাংক বিমুখ হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে তার আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে। মানুষ এখন নন ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং তা করছেও। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে এক সময় ব্যাংক খাতটি অস্তিত্ব সংকট এমনকি বিলুপ্তও হয়ে যেতে পারে। তখন নন ব্যাংকিং চ্যানেলগুলো হয়ে উঠবে বিশ্ব অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এ খাতেই থাকবে অর্থের সবচেয়ে বড় তহবিল। এসব খাতের নিয়ন্ত্রণ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকায় সরকারিভাবেও তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। বিষয়টি এককেন্দ্রিক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খেয়ালখুশির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই থাকবে। ইতোমধ্যে অ্যামাজন, অ্যাপলের মতো বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তেমনি বিশাল অংকের লেনদেনও তারা করছে। অদূর ভবিষ্যতে প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে এমন আরও নতুন নতুন নন ব্যাংকিং চ্যানেল যে চালু হবে তা হলফ করে বলা যায়, যা ব্যাংকিং খাতকে ক্রমেই দুর্বল করে দেবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার খুব বড় নয়। উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার পথে এর আকার ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে আর্থিক লেনদেনে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। ব্যাংকগুলোতে অনলাইন কার্যক্রম চালু করলেও তা সময়ের নিরিখে খুবই অপ্রতুল। ফলে অনলাইন কিংবা মোবাইলে ব্যাংকিং কার্যক্রমে মানুষ ঝুঁকে পড়েছে। ব্যাংকে যাওয়া, সেখানের সেবা কার্যক্রম পেতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করাসহ সময় ক্ষেপণ এবং যখন-তখন লেনদেন করার সুযোগ না থাকায় মানুষ প্রযুক্তি নির্ভর নন ব্যাংকিং খাতের দিকে ঝুঁকছে। বেসরকারি খাতের এই লেনদেন জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে। দেশে ইতোমধ্যে বিকাশে অর্থের লেনদেন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাক বিভাগও ‘নগদ’ নামে নন ব্যাংকিং চ্যানেল চালু করেছে। হয়তো এমন আরও নন ব্যাংকিং চ্যানেল অচিরেই আবির্ভূত হবে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেনের বিষয়টি আছেই। এসব মাধ্যমে যে আর্থিক লেনদেন হচ্ছে, তা কোনো ব্যাংকিং লেনদেন নয়। ইন্টারনেট বা অনলাইন লেনদেনের মাধ্যম। এতে বিপুল অংকের আর্থিক লেনদেন হচ্ছে। নন ব্যাংকিং চ্যানেলের এসব প্রতিষ্ঠানের হাতেই পুরো লেনদেনের বিষয়টি থাকছে এবং তারাই বিপুল অংকের অর্থ নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলাদেশে অনলাইন নির্ভর অর্থনীতি দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। অনলাইনে বেচাকেনা বছরে কয়েক হাজার কোটিতে গিয়ে পৌঁছেছে। এই লেনদেন হচ্ছে পুরোপুরি নন ব্যাংকিং চ্যানেলে। অল্প সময়েই যে এ খাতটি ব্যাপক আকার ধারণ করবে, তাতে সন্দেহ নেই। অর্থাৎ নন ব্যাংকিং চ্যানেলে বিপুল অংকের অর্থ প্রবাহ চলছে। ব্যাংকিং লেনদেন এবং কার্যক্রমে তা নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো আমানত সংকটে পড়েছে। তারল্য দেখা দিয়েছে। এর বড় একটি কারণ নন ব্যাংকিং খাতের বিস্তৃতি এবং এ মাধ্যমে লেনদেন। বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতিবিদরাও নন ব্যাংকিং চ্যানেলের কারণে ব্যাংক খাত হুমকির মুখে পড়া নিয়ে শঙ্কিত। এতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ সহ যেসব বৃহৎ ব্যাংক রয়েছে সেগুলো আর্থিক লেনদেন এবং তহবিল সংকটে পড়তে পারে। নন ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধির ফলে তাদের কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে যেতে পারে।
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, নিকট ভবিষ্যতে মানুষের কাছে ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তিই এ পথ করে দেবে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে যে মাধ্যমে মানুষ সহজে যে কোনো সময় আর্থিক লেনদেন করতে পারবে, তাই গ্রহণ করবে। লেনদেনের জন্য ব্যাংকের প্রসিডিউরের জন্য বসে থাকবে না। প্রযুক্তির এই উন্নতি বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য ধীরে ধীরে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কারণ ব্যাংকগুলো এখনো নন ব্যাংকিং চ্যানেলের মতো সহজ লেনদেনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। আমাদের অর্থনীতি যদি চীন বা অন্য উন্নত দেশগুলোর মতো বৃহৎ হতো, তাহলে হয়তো নন ব্যাংকিং চ্যানেলে আর্থিক লেনদেন এবং তাদের হাতে অর্থ কুক্ষিগত হয়ে থাকার বিষয়টি হুমকি হয়ে উঠত না। সারাবিশ্বে এখন আর ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সীমাবদ্ধ নেই। প্রযুক্তি নির্ভর নন ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে যে কেউ যে কোনো সময় লেনদেন করতে পারছে এবং তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যাংক খাত টিকিয়ে রাখতে হলে ব্যাংকগুলোকে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি নির্ভর হতে হবে। ব্যাংকিং লেনদেন মানুষের কাছে সহজ করে তুলতে হবে। যদি তা না করা হয়, তবে মানুষের কাছে নন ব্যাংকিং চ্যানেলই আর্থিক লেনদেনের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। সরকারকে নন ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থের লেনদেনের বিষয়টি মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তা নাহলে এক সময় নন ব্যাংকিং চ্যানেল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে এবং তাতে সরকারের কিছুই করার থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।