Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বরিশালে কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে সাড়ে ৩শ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৯, ৭:০০ পিএম

বরিশাল মহানগরী সংলগ্ন বেলতলা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে চরবাড়ীয়ার প্রায় শেষ সীমানা পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার এলাকায় কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে সাপেক্ষে এ ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের মধ্যে ৩.৩৬ কিলোমিটার অংশের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর পক্ষে খুলনা শিপইয়ার্ড। এ লক্ষে শিপইয়ার্ড ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে ২১০ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরের পরে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ ডাম্পিং সহ সিসি ব্লক তৈরি এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তনে ড্রেজিং কার্যক্রমও পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। প্রকল্প এলাকার অবশিষ্ট ১ হাজার ১৪৪ মিটার এলাকার ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়নে দরপত্র গ্রহণের পরে তার কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরে চলতি মাসের মধ্যেই এলক্ষ্যে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী অর্থ বছরের মধ্যে পুরো প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর দায়িত্বশীল মহল। 

২০১৭-এর নভেম্বরে ৩৩১ কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ এ নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পটি একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করলেও দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরে গত জানুয়ারীতে ৩ হাজার ৩৩৬ মিটার এলাকার প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়নে খুলনা শিপইয়ার্ডের সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ‘ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড-ডিপিপি’এর আওতায় কীর্তনখোলার ভাঙন রোধে খুলনা শিপইয়ার্ডকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম সরেজমিনে তদারকি করছেন।
প্রকল্পের আওতায় আসন্ন বর্ষার আগেই বরিশাল মহানগরীর উত্তর প্রান্তের বেলতলায় সিটি করপোরেশনের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে পুরো চরবাড়ীয়ার ৩ হাজার ৩৬৬ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং-এর একটি বড় অংশ সম্পন্ন করা হবে। সাড়ে ৪ লাখ জিও ব্যাগ-এর মধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকায় ইতোমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ব্যাগ ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। চলতি মাসে আরো অন্তত ২০ হাজার ব্যাগ ফেলা সম্ভব হবে। ফলে প্রাথমিকভাবে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যাপারে আশাবাদী কতৃপক্ষ। এসব জিও ব্যাগের ওপর আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন সাইজের প্রায় ১২ লাখ ২০ হাজার সিসি ব্লক সন্নিবেশ-এর কাজও শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে কীর্তনখোলার ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রায় ২৫ হাজার সিসি ব্লক নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে আরো অন্তত ২০ হাজার ব্লক তৈরী সম্ভব হবে বলে জানা গেছে।
এ ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় বরিশাল মহানগরীর বেলতলা ফেরি ঘাটের অপর প্রান্তে কীর্তনখোলা নদীর ৫.৬০ কিলোমিটার এলাকার ডুবোচর কেটে গতিপথ পরিবর্তন করা হচ্ছে। এলক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৩টি বেসরকারী ড্রেজার প্রায় ৫ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারন সম্পন্ন করেছে। চলতি মাসের মধ্যে আরো অন্তত ৫ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আরো একটি বড় মাপের ড্রেজার মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রায় ৪১ লাখ ঘন মিটার পলি অপসারন করে কীর্তনেখোলার গতিপথ পরিবর্তনের মাধ্যেমে ভাঙনের তীব্রতা রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল।
তবে কীর্তনখোলার এ ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পে’র ডিপিপি’তে যে পরিমান ড্রেজিং-এর কথা ছিল তা কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। আর এরই সাথে বরিশাল বন্দরের অপর পাড়ের চরকাউয়ার ঝুকিপূর্ণ ১ হাজার ১৭৭ মিটার এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রম সংযূক্ত করে ডিপিপি সংশোধন করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ ডিপিপি সংশোধন করে প্রকল্পটির বর্ধিত অংশের কাজ শুরু হবে তা জানা যায়নি। বিষয়টি ইতোধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন শেষে মন্ত্রনালয়ের বিবেচনাধীন।
তবে ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রায় সোয়া লাখ জিও ব্যাগ ডাম্পিং সম্পন্ন হবার পাশাপাশি এ কার্যক্রম চলমান থাকায় গত কয়েকটি বছরের তুলনায় আসন্ন প্রায় বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা যথেষ্ঠ হ্রাস পাবে বলে আশাবাদী দায়িত্বশীল প্রকৌশলীগন। এব্যাপারে খুলনা শিপইয়ার্ডের জিএম নকশা ও পরিকল্পনা-ক্যাপ্টেন শহিদুল­াহ আল ফারুক-(ই),পিএসসিÑবিএন ইনকিলাবকে জানান, কির্তনখোলা সহ প্রতিটি ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের কাজই যথাযথভাবে সম্ভাব্য দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। খুলনা শিপইয়ার্ড প্রায় ১ হাজার ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শরিয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা এলাকায় পদ্মার ভাঙন প্রতিরোধ কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙন

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৪ অক্টোবর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ