পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকার পরিবেশ বসবাসের উপযোগিতা অনেক আগেই হারিয়েছে। শহরটি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত পরিবেশের শীর্ষে রয়েছে। সম্প্রতি একটি বিদেশি সংস্থার জরিপে ঢাকা বায়ু দূষণের দিক থেকে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরই বলছে, ঢাকার বায়ু দূষণের মাত্রা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বায়ুতে যে মাত্রায় দূষণ থাকার কথা, তার চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি দূষিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারি ও বিষাক্ত পদার্থ যেমন-শিসা, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, নিকেল, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ, কপার ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ ঢাকার বায়ুতে মাত্রাতিরিক্ত রয়েছে। এসব বিষাক্ত পদার্থের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করছে, ঢাকার চারপাশের ইটভাটা, ত্রুটিযুক্ত যানবাহনের ধোঁয়া, সড়কের ধুলাবালি, কনস্ট্রাকশনের কাজ, শিল্পকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া ও বর্জ্য। সাধারণত বাতাসে বিভিন্ন পদার্থের উপস্থিতি প্রতি ঘন মিটারে চব্বিশ ঘন্টায় ১৫০ মাইক্রোগ্রাম থাকার কথা। দেখা যাচ্ছে, ঢাকাতে এই মাত্রার চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে। বৃষ্টির দিনে এই মাত্রা কিছুটা কম হলেও, শীতে তা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। বছরের পর বছর ধরে এই বায়ু দূষণ চলছেই। এর প্রতিকারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা ঢাকার কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে নিতে দেখা যায় না।
যুগের পর যুগ ধরে ঢাকা দখল-দূষণ এবং বসবাসের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। এ নিয়ে কারো মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হয় না। থাকলে নিশ্চয়ই কিঞ্চিৎ হলেও বাতাসকে নির্মল করার উদ্যোগ চোখে পড়ত। বিশ্বের মধ্যে ঢাকা এমন একটি নগরী যেখানে যা খুশি তা করা যায় এবং যেমন খুশি তেমন একে ব্যবহার করা যায়। এখানে অপরিকল্পিত রাস্তা-ঘাট খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তা দখল করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা, সড়ক দখল করে ডাস্টবিন তৈরি করা থেকে শুরু করে হেন কোনো অনিয়ম ও অসভ্য কাজ নেই, যা করা হচ্ছে না। বিশ্বের মধ্যে সম্ভবত ঢাকাবাসীই একমাত্র এসব অনাচারের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে। এতে যে তাদের কী পরিমাণ শারিরীক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে, তা কল্পনাও করা যায় না। বিভিন্ন কঠিন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েই তারা বসবাস করছে। ভাবা যায়, এক বায়ু দূষণের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে দেশে এক লাখেরও বেশি মৃত্যুবরণ করে! সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা তার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ঘরে-বাইরের বায়ু দূষণে এক লাখ ২৩ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ু দূষণের কারণে মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সার, কিডনী ডেম্যাজের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্ম শিশু। যতই দিন যাচ্ছে, রাজধানীতে এই বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দূষণ নিরোধ দূরে থাক, তা নিয়ন্ত্রণেরও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। শুধু বায়ু দূষণই নয়, ঢাকা এখন সবচেয়ে উত্তপ্ত নগরীতে পরিণত হয়েছে। এর তাপমাত্রা অন্য যে কোনো শহরের তুলনায় অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, নগরীতে ফাঁকা জায়গা দিন দিন কমে যাচ্ছে। জায়গার তুলনায় কংক্রিটের বাড়ি-ঘরের ঘনত্ব অনেক বেশি। একের পর এক হাইরাইজ ভবন রোদের উত্তাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর সাথে যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত ধোঁয়া, সড়কের ধুলিবালি, শিল্পকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যুক্ত হয়ে রোদকে আরও তীব্র করে তুলছে। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ, পার্ক, লেক, জলাশয় না থাকায় রোদের তাপ শোষিত হচ্ছে না। একটি নগরীতে বায়ু দূষণ রোধ এবং নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা থাকা দরকার ঢাকা থেকে তা হারিয়ে গেছে। ঢাকা হয়ে উঠেছে ইট-পাথরের শহর। এখানে সুস্থ্যভাবে বসবাস করার পরিবেশ বলতে কিছু নেই। অথচ সরকার বেশ জোরেশোরে দাবী করছে আমরা দ্রুত উন্নতি করছি। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজধানীকে বসবাসের অনুপযোগী রেখে উন্নতির দাবী করা কতটা সমীচিন? যেখানে রাজধানীকে দেশের মুখ হিসেবেই উপস্থাপন করা যাচ্ছে না? অসভ্য, বসবাসের অনুপযোগী, দূষিত নগরীর খেতাব নিয়ে উন্নতির দাবী করা কি উন্নয়নের সঙ্গে মানানসই?
দেশের উন্নতির প্রশ্নে কারো কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। উন্নয়ন কার্যক্রম চালানোরও কোনো বিকল্প নেই। তবে রাজধানীর বিকৃত চেহারা নিয়ে উন্নতির বিষয়টি কোনোভাবেই প্রকাশযোগ্য হচ্ছে না। আমাদের কথা হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ঢাকার বায়ু দূষণ কমাতে এর পরিবেশের দিকে নজর দিতে হবে। এর বায়ু দূষণ, পানি দূষণের যেসব প্রধান কারণ রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে প্রতিকার করতে হবে। ঢাকার চারপাশের ইটভাটা উচ্ছেদ করা, শিল্পকারখানা এবং গৃহস্থলীর বর্জ্য অপসারণে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। রাজধানী থেকে ভারি শিল্পকারখানাসহ যেসব কারখানা বায়ু দূষণ করে, সেগুলো সরিয়ে নিতে হবে। ঢাকার যেসব উন্মুক্ত স্থান দখল হয়ে আছে, সেগুলো দখলমুক্ত করে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ঢাকাকে ভারমুক্ত করার জন্য বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। একে সবুজ করে গড়ে তুলতে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি ও উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।