নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার তারাকান্দি গ্রামে কৃষক এমদাদুল হক। বাড়ি কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল তার পরিবার। সংসারে আছে স্ত্রী, এক ছেলে ও চার মেয়ে তার। এ বছর ধান চাষ করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ছেলে-মেয়েদের জন্য ইচ্ছেমতো ঈদের কেনাকাটাও করতে পারছেন না।
ঈদ উদযাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে এমদাদুল হক বলেন, ‘ঈদের ভাবনা নয়, কীভাবে ঋণের টাকা শোধ করবো, সেটাই এখন প্রধান ভাবনা। এ বছর ধানচাষে যে লোকসান হয়েছে, তাতে সৃষ্ট ঋণের ভার কাঁধে নিয়ে ঈদ আর কেমন হয়?’
ধান চাষে উৎপাদন খরচের হিসাব দিতে গিয়ে এমদাদুল হক বলেন,‘এ বছর ধান চাষের জন্য প্রথমেই আমার এক বিঘা (৪৫ শতাংশ) জমি প্রস্তুত করতে চার জন শ্রমিকের খাবারসহ ২৫০০ টাকা মজুরি ব্যয় হয়েছে। জমি চাষে খরচ হয়েছে আরও ২ হাজার টাকা। বীজ ও বীজতলা প্রস্তুত করতে চাষাবাদ ও শ্রমিক খরচ লেগেছে ১ হাজার ৫শ টাকা। এরপর পাঁচজন শ্রমিকসহ নিজে ধানের চারা রোপন করতে গিয়ে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৫শ টাকা। এরপর ধানক্ষেত থেকে আগাছা পরিষ্কার (নিড়ানি) করতে কমপক্ষে চারজন শ্রমিকের মজুরি ও খাবার বাবদ ২ হাজার ৫শ টাকা ব্যয় হয়েছে। সার ও সেচ খরচ হয়েছে আরও ৫ হাজার টাকা। এই এক বিঘা জমির ধান কাটতে গিয়ে প্রয়োজন পড়েছে ৮ জন শ্রমিকের। এবার জনপ্রতি শ্রমিক মজুরি দিতে হয়েছে ১ হাজার টাকা করে। সঙ্গে খাবার খরচ আরও ২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিবিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ পড়ছে ১৭ হাজার ৫শ টাকা। এছাড়া নিজেদের শ্রমতো আছেই।’
তিনি জানান,এক বিঘা জমিতে ধানের ফলন হয়েছে ১৭ মণ। এরমধ্যে রোগাক্রান্ত হওয়ায় চিটা ধান ৪ মণ বাদ দিয়ে মোট ধানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ মণ। প্রতিমণ ধান সর্বোচ্চ ৮শ টাকা দরে ১৩ মণ ধানের দাম পাওয়া গেছে ১০ হাজার ৪শ টাকা। মোট লোকসান হয়েছে ৭ হাজার ১শ টাকা।
এভাবেই ধানচাষে বিঘাপ্রতি লোকসানের কারণে ঋণের বোঝা মাথায় নিতে হয়েছে কৃষক এমদাদুল হকের মতো জেলার প্রায় সব কৃষককে। ধান রোপনের আগে করা ঋণ পরিশোধের চিন্তায় এখন তারা দিশাহারা। এ অবস্থায় তাদের ঈদ যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রায়পুরা উপজেলার টেকপাড়া গ্রামের কৃষক সাত্তার মিয়া বলেন, ‘ধারদেনা করে ধান লাগিয়ে এখন এই ঋণের টাকাই পরিশোধ করতে পারছি না। ঈদে ছেলে-মেয়ের নতুন কাপড়ের আবদার মেটানোও সম্ভব হয়নি। আমাদের মতো কৃষকের ঈদের দিন সবদিনের সমান।’
একই এলাকার কৃষক মুক্তার হোসেন, ইউনুছ মিয়া ও আলাউদ্দিন একই মত পোষণ করে বলেন, ‘এরপর থেকে আর ধান চাষ করবো না বলে ভাবছি। কিন্তু, আমরা তো কৃষক, কী করবো? ঈদের দিনটাও আমাদের পরিবারের জন্য আনন্দের হয় না।’
এবার নরসিংদী জেলায় ৫৬ হাজার ৩শ ১৭ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয় জানিয়ে জেলা কৃষি কর্মকর্তা শোভন কুমার ধর বলেন, ‘সরকার প্রতিমণ ধান ১০২৬ টাকা দরে কেনার ঘোষণা দিয়েছে। আগস্ট মাস পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করবে সরকার। এজন্য কৃষক ধান কেটে ঘরে নিয়ে তিন মাস সংরক্ষণ করার পর বিক্রি করলে লোকসান হবে না। তবে, কৃষকরা তাৎক্ষণিক শ্রমিক খরচ যোগাতে সস্তায় ধান বিক্রি করে লোকসান গুনছেন।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।