মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত ৩ মে ইংল্যান্ডের বৃহত্তম গির্জাগুলোর একটি ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে এক অস্বাভাবিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটেনের সাগর ভিত্তিক পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়েস্টমিনস্টারের ডিন যারা দেশের পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীতে কাজ করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান। অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ডিউক অব ক্যামব্রিজ এবং দেশ পরিচালনার অন্যান্য প্রধান ভিত্তিরা।
এদিকে এ সময় বাইরে জমায়েত বিক্ষোভকারীরা চারপাশ থেকে নিন্দাসূচক ধ্বনি দিচ্ছিল। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলনকারীরা গির্জার এ উৎসবকে নৈতিকভাবে বেমানান আখ্যায়িত করে নিন্দা জানায় এবং মৃত্যুদৃশ্যের অভিনয় মঞ্চস্থ করে। প্রায় ২০০ যাজক ও ২ জন বিশপ বলেন, এ ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সাথে জড়িতদের ধন্যবাদ জানানো ভুল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার এবং সামরিক শৌর্যের সাথে তাকে সম্পর্কিত করা নিয়ে বিতর্ক আছে। আর সাংবিধানিক ক্ষেত্রে তা ব্যাপক ভাবে চ্যালেঞ্জের শিকার। তবে এখনো একটি ঐতিহাসিক খ্রিস্টান দেশ আছে যেখানে ৭০ বছরের কম্যুনিস্ট শাসন সত্তে¡ও সেখানকার জাতীয় গির্জার সশস্ত্র বাহিনীর উপর বিশাল, বর্ধমান ও ব্যাপক ভাবে প্রতিবাদহীন প্রভাব রয়েছে। সে দেশটি হচ্ছে রাশিয়া।
প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল অংশ, বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর স্থল- নৌ ও বিমান থেকে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপে প্রস্তুত অংশত্রয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা রুশ অর্থোডক্স গির্জা এখন দেশের সামরিক যন্ত্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তার ভূমিকা জোরদার করছে।
বিভিন্ন নিউজ বুলেটিন থেকে গির্জার সামরিক ভ‚মিকার টুকরো টুকরো খবর উঠে আসছে। যেমন গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোষণা করা হয় যে বিমান বাহিত সেনাদের সাথে যুক্ত যাজকরা সাঁজোয়া যান চালানো শিক্ষা করতে পারবেন। তবে গোটা বিষয়টির পদ্ধতিগত ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইসরাইলি পন্ডিত আইডিসি হার্জলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিমিত্রি দিমা এডামস্কি। তার নতুন বই ‘রাশিয়ান নিউক্লিয়ার অর্থোডক্সি’তে তিনি দেখিয়েছেন যে নাস্তিক্যবাদী কম্যুনিজম ব্যর্থ হওয়ার পর তিন দশকে কিভাবে গির্জা-সামরিক বাহিনী সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
এই সম্পর্ক বহু রকম দৃশ্যমান রূপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সকল ধরনের প্রতিরক্ষা স্থাপনায় বড় ও ছোট আকারে প্রার্থনার স্থানের ব্যবস্থা। সেনাবাহিনীর সদস্যদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতার অনুষ্ঠানে রাশিয়ার ইতিহাস উপস্থাপনাকালে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ধর্ম ও সেনাবাহিনীর মধ্যকার গভীর সম্পর্ক তুলে ধরা হয়। মনে করিয়ে দেয়া হয় যে মধ্যযুগে সামরিক সাধুরা যুদ্ধক্ষেত্রে থাকতেন ও তারা ধর্মীয় প্রতীক বহন করতেন।
এডামস্কি দেখিয়েছেন, গির্জা প্রথমদিকে অভাবনীয় রূপে বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় কর্মরত, পারমাণবিক জ্বালানি থেকে অস্ত্রের নকশা প্রণয়নের সাথে জড়িত সামরিক ও বেসামরিক বিজ্ঞানীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ১৯৯০ দশকের প্রথমদিকে এসব ক্ষেত্রে কর্মরত রুশরা ভীষণ ভাবে নীতিহীন হয়ে পড়েন। তারা প্রয়োজনীয় বেতন পেতেন না। দেশের অস্ত্র ভান্ডারের কোনো ভবিষ্যত আছে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
এ সময় গির্জা নানাভাবে তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে। এ প্রসঙ্গে সারোভ শহরের কথা বলা যায়। সব ধর্মপ্রাণ রুশের কাছে এটি সাধু সেরাফিমের নিজ শহর বলে পরিচিত। এই খ্রিস্টান সন্ন্যাসী জারের আমলে অত্যন্ত সম্মান অর্জন করেছিলেন। কম্যুনিস্ট আমলে এ স্থানটি আরজামাস-১৬ নামে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা সম্বলিত পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হয়।
সোভিয়েত শাসন অবসানের পর শহরটিতে পুরনো ধর্মীয় ঐতিহ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু পারমাণবিক গবেষণার ঐতিহ্যও বহাল থাকে। এটি গির্জা ও পারমাণবিক কর্মসূচিতে জড়িতদের যৌথ উদ্যোগে সম্মেলন আয়োজনের জনপ্রিয় স্থানে পরিণত হয়। আর সেখানে রাশিয়ার পারমাণবিক সক্ষমতা, এমনকি কঠিন সময়েও, বহাল রাখার পক্ষে উপস্থিত প্রত্যেকে সমর্থন প্রকাশ করেন।
২০০৯ সাল থেকে রুশ অর্থেডক্স চার্চের প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল বলেন, গির্জা দেশের পারমাণবিক সক্ষমতা বহাল রাখার বাহাদুরি দাবি করতে পারে। গির্জা এ কাজটি করেছিল এমন এক সময়ে যখন দেশের অর্থনীতি এবং পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে আস্থা তলানিতে এসে ঠেকেছিল। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে অর্থোডক্স গির্জাগুলো সার্বিক ভাবে পার্থিব ক্ষমতার টিকে থাকা চেয়েছিল। তবে গির্জা-পারমাণবিক অংশীদারিত্ব এখন পর্যন্ত অস্বাভাবিক ঘটনা। তা সম্ভবত এ সত্যই প্রকাশ করে যে দুই পক্ষই একটি নতুন যুগকে গ্রহণ করতে কঠিন লড়াই করছিল এবং অনুভব করেছিল যে তাদের বন্ধু প্রয়োজন।
এডামস্কির মতে, শেষোক্ত বড় ঘটনাটি রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু রুশ প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাঠামোতে তা গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। গত আগস্টে ‘মেইন পলিটিক্যাল ডাইরেক্টরেট অব জেনারেল স্টাফ’ নামে একটি নতুন দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদমর্যাদায় একজন জেনারেল এর প্রধান হবেন। সোভিয়েত প্রযুক্তির কথা মনে আছে এমন যে কারো কাছেই এ প্রতিষ্ঠানটি রেড আর্মির মধ্যে কম্যুনিস্ট উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে।
নতুন ইউনিটটির একটি মতাদর্শগত ভূমিকাও থাকবে। একে বলা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সকল পর্যায়ে, একেবারে প্রতিটি স্বতন্ত্র সামরিক ইউনিট পর্যন্ত কাঠামো উন্নয়নের জন্য। এসব কাঠামোর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হবে অর্থোডক্স ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত করা। এ লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠান সামরিক যাজকদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এক বিশাল গির্জা প্রতিষ্ঠার তহবিল সংগ্রহ করবে।
আসছে বছর মস্কোর বাইরে প্যাট্রিয়টিক পার্কে এ গির্জা নির্মিত হবে। এতে ৬ হাজার লোকের জায়গা হবে। এর রং-বিন্যাসে ক্ষেপণাস্ত্র ও সাঁজোয়া গাড়ির প্রতিফলন ঘটবে। ডেকোরেশনে অন্য বিষয়ের সাথে থাকবে বাইবেলের যুদ্ধের দৃশ্য। পার্কে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি শাখার দেশপ্রেমিক সাধুদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত স্মৃতিস্তম্ভ থাকবে।
এ ডাইরেক্টরেটের প্রথম প্রধান জেনারেল আন্দ্রেই কারতাপোলোভ বিশ্বাস করেন যে মনের ভেতর মহান ধর্মবোধের পরিচর্যা ছাড়া আধুনিক রুশ সৈনিক গড়ে উঠতে পারে না। বর্তমানে গির্জা নেতারা আর ক্রেমলিন সামরিক চেতনার বিজয় নিশ্চিত করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।