ইসরাইলের নির্বাচনে বিজয়ী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সেই অসাধারণ বিজয়ের রাত ঘোষণার পর সাত সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। গত বুধবার রাত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকার গঠন করতে পারেননি। ফলে ইসরাইল এখন আরেকটি নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ইসরাইলিরা তিন মাসের মধ্যই আবার ব্যালট বাক্সের কাছে ফিরে যাচ্ছে। আগের সরকার পরের বার নির্বাচিত হয়েও সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ রকম ঘটনা ইসরাইলের ইতিহাসে এটাই প্রথম। তাই আবার নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য হচ্ছে সরকার। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ইসরাইলি পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটে সরকার ভেঙ্গে দেয়ার পক্ষে ভোট বেশি পড়ে। সরকার শপথ নেয়ার এক মাসের মধ্যে এ ঘটনা ঘটল। ১২০ আসনের পার্লামেন্টে সরকার ভেঙে দেয়ার পক্ষে ৭৪ ভোট ও বিপক্ষে ৪৫ ভোট পড়ে। একজন পার্লামেন্ট সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। ভোটে নতুন নির্বাচনের কথা বলা হয়। বলা হচ্ছে, পার্লামেন্টের এ সিদ্ধান্তে এক দশক ধরে দেশের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকারের ভাগ্যাকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ৯ এপ্রিলের নির্বাচনের পর নেতানিয়াহু আস্থাশীল ছিলেন যে তার রক্ষণশীল লিকুদ পার্টি সহজেই তার পূর্বের ডানপন্থী ও ধর্মীয় মিত্রদের নিয়ে জোট সরকার গঠন করতে পারবে। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ উগ্র জাতীয়তাবাদী ও উগ্র অর্থোডক্স দলছুটদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই তার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে। বিশেষ করে লিবারম্যান সামরিক চাকরি বিষয়ে নেতানিয়াহুর প্রস্তাবিত আইন বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগের সম্মুখীন নেতানিয়াহুর অধিকতর উদার দলগুলোর সাথে সমাঝোতা করার সুযোগ সীমিত হওয়ার পাশাপাশি সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ৬১ জন পার্লামেন্ট সদস্যকে সপক্ষে আনা সম্ভব হয়নি।
ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিন সরকার গঠনের জন্য নেতানিয়াহুকে ৬ সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন। আইনে এটাই ছিল সর্বোচ্চ সময়। গত বুধবার মধ্যরাতে চ‚ড়ান্ত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে রিভলিন সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে পরবর্তীতে কি ঘটতে পারে সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেন।
খবরে বলা হয় যে নেতানিয়াহুর জোট সরকার গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হচ্ছেন ধর্মনিরপেক্ষ উগ্র-জাতীয়তাবাদী ইসরাইল বেইতেইনু পার্টির নেতা আভিগদর লিবারম্যান। লিকুদ দলসহ অন্যান্য ডানপন্থী মিত্রদের নিয়ে জোটের মোট আসন সংখ্যা ৬০। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ক্ষেত্রে একটি আসন কম। লিবারম্যানের দলের আসন সংখ্যা ৫ যা তাকে কিংমেকারে পরিণত করেছে। তিনি নিজেকে ইসরাইলের ধর্মনিরপেক্ষ ডান দলগুলোকে অগ্রনেতার ভূমিকায় নিজেকে দেখতে চান। সে সাথে উগ্র-গোঁড়াপন্থী দলগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাবরোধেও তিনি বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালনে আগ্রহী।
রাজনৈতিক ভেলকিবাজিতে অতিশয় পারঙ্গম নেতানিয়াহুর বহুদিন ধরেই ছদ্মনাম ‘দ্য ম্যাজিশিয়ান’। এই রাজনৈতিক জাদু ক্ষমতার বলেই গত এক দশক ধরে তিনি একটানা ক্ষমতায় রয়েছেন। তার আগে ১৯৯০ দশকেও তিনি তিন বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এখন তিনি ঘুষ, প্রতারণা ও তিনটি দুর্নীতির মামলার বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগের সম্মুখীন। আর এগুলো তার বিকল্প সরকার গঠনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। নতুন জোট গঠনেও সঙ্কুচিত করেছে তার সুযোগকে।
প্রধান বিরোধী দল মধ্যপন্থী ব্ল অ্যান্ড হোয়াইট এপ্রিলের নির্বাচনে ৩৫টি আসন পেয়েছে যা লিকুদ দলের সমসংখ্যা। তারা বিচারের সম্মুখীন একজন প্রধানমন্ত্রীর সাথে জোট সরকার গঠনে রাজি হয়নি। পার্লামেন্টের ৬৫ জন সদস্যের অনুমোদনের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট রিভলিন এপ্রিলে নেতানিয়াহুকে সরকার গঠনের জন্য সর্বোচ্চ ৬ সপ্তাহ সময় দেন। লিবারম্যান জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নেতানিয়াহুকেই সমর্থন দেবেন। আর কাউকে নয়। কিন্তু তা শুধু তার শর্ত মানলেই।
নেতানিয়াহু এ রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য লিবারম্যানকে দায়ী করেছেন। গত সোমবার রাতে টোলিভিশন ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, দেশকে আরেকটি নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই।
একজন ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ চরিত্র ও তুখোড় বক্তা লিবারম্যান নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›দ্বী হলেও তার সাথে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগিতা করারও তার নজির আছে। তিনি ২০১৬ সালে নেতানিয়াহুর সর্বশেষ সরকারে যোগদান করেন।
গত মঙ্গলবার ফেসবুকে এক পোস্টে লিবারম্যান নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণে লিপ্ত থাকার বা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করার লিকুদ দলের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বার্থে, ইহুদি রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করি। আমি ইহুদি ধর্মীয় আইন ভিত্তিক কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।