২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
রবার্ট গ্রিনি বলেছেন, একজন মানুষ রাজ্য ও রাজসিংহাসন পেয়েও দারুণ অসুখী হতে পারে। এ কথাটির সত্যতা আমরা খুঁজে পাই যেকোনো অসুস্থতার ক্ষেত্রে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর আসে। এটা সত্যিই এক মহা আনন্দের মহা উৎসব। কবির ভাষায় ‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/আপনাকে আজ বিলিয়ে দে তুই শোন আসমানী তাগিদ।’ যা আমাদের অনুভূতির আবেগে ধ্বনিত হয়, শিশু-বুড়ো সবার চোখে টুটে গেছে নিদ। বছরে একবার এই উৎসব দিবসটি খুশি ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে ফিরে আসে। এ জন্য এটাকে ঈদ বলা হয়। ঈদ শব্দের অর্থ আদত বা অভ্যাস। অর্থটি এ জন্য যে, মহান আল্লাহ প্রতি বছর ঈদের মাধ্যমে বান্দাকে তার দয়া, এহসান ও করুণা বর্ষণ করে থাকেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈদ হচ্ছে বান্দার জন্য বিরাট আতিথেয়তা। তাই ঈদের দিন রোজা রাখাকে আল্লাহ হারাম করেছেন।
ঈদ হলো আল্লাহর নিয়ামত ও জিয়াফত ভোগ করার চিরন্তন অভ্যাস বা আচার অনুষ্ঠান। এই জিয়াফত ভোগ করতে যেয়েই আমরা একটু বেপরোয়া হয়ে পড়ি। দীর্ঘ এক মাস রোজা আমাদের নিয়মমাফিক চলা ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে জীবনাচরণের একটি ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হয়। এই ইতিবাচক প্রভাবটি যেন নেতিবাচক না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঈদের সফর হোক নিরাপদ ও আনন্দঘন : ঈদে ঘরমুখো মানুষগুলো বাড়ি যাওয়ার জন্য খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে চড়ে ঝুঁকিপূর্ণ সফর করেন, এতে অনাকাক্সিক্ষত বিপদ-আপদের শিকার হন। কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেয়া যায়, অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ বাড়ে। এজন্য সফরে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে, কোনোভাবেই অসতর্কভাবে চলাফেরা করা যাবে না। সফরের সময় প্রচÐ গরমে হিট স্ট্রোক হতে পারে, এজন্য ট্রাভেল ব্যাগে পানি রাখতে হবে, শরীরে লবণশূন্যতা হতে পারে, এজন্য সফর শুরুর আগে দু-একটা খাবার স্যালাইন ইত্যাদি সাথে রাখা ভালো। সফরে দুর্ঘটনায় কোথাও কেটেছিঁড়ে গেলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে ক্ষত জায়গায় কাপড় বেঁধে দিতে হবে, যাতে আর রক্তক্ষরণ না হয়।
ইদানীং প্রায়ই যে বিড়ম্বনাটি চোখে পড়ে তা হলো - যাত্রীরা অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে বসেন, এমনকি জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন তাকে এ জন্য ভুগতে হয়, তাই সফরে কারো দেয়া কোন খাবার বা পানীয় খাওয়া উচিত নয়। ঈদে স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিমিত খাওয়া-দাওয়া : আমরা যেন ঈদের আনন্দে অতিরিক্ত ভূরিভোজে অসুস্থ হয়ে না পড়ি সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
ঈদের দিন যার বাড়িতে যাওয়া হোক সামনে গোশত-পোলাও এনে হাজির করে । না খেলে নারাজ হয়। তাই খেতে হয়। আমরা বেশির ভাগ লোক মুখরোচক খাবার যা পাই মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। কারো বমি হয়। কারো ডায়রিয়া । কেউ বদহজমে ভুগি। বিভিন্ন সমস্যার শিকার হই। তাই পরামর্শ হলো কম খাওয়া। পরিমিত খাবার গ্রহণের জন্য ইসলামে নির্দেশ রয়েছে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা খাওয়ার সময় পাকস্থলীর তিন ভাগের এক ভাগ পূরণ করে খাও। এক ভাগ পানি দ্বারা পূরণ করো, আর এক ভাগ খালি রাখো শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য।’ আমরা রাসূল সা:-এর এই হাদিস অনুসরণ করে চলব ইনশাআল্লাহ। দিনের বেলায় একাধিক বার খাওয়া হলে রাতে উপবাস করাই শ্রেয়। এতে পাকস্থলী বিশ্রাম পায়। ভুক্ত দ্রব্য হজমে সাহায্য করে। অমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আমরা বাঁচার জন্য খাই, খাওয়ার জন্য বাঁচি না। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে দুনিয়া হয় স্বপ্নময় উপভোগ্য। ঈদের সময় ব্যবসায়ী ও দোকানিরা সাধারণত ছুটি কাটায়, দোকানপাট বন্ধ থাকে। কিছু ফাস্ট এইড ওষুধ যেমন- খাবার স্যালাইন, প্যারাসিটামল, অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ, আমাশয় ও হজম রিলেটেড ওষুধ আগে ভাগেই সংগ্রহ করে রাখা ভালো। যাতে কোনো সমস্যা হলে তার আসু সমাধান করা যায়।
পবিত্র ঈদে আমাদের কর্তব্য : ঈদের দিনে সর্বপ্রথম আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত এবং রাসূল সা:-এর ওপর দুরুদ পাঠ করা দরকার। ঈদের রাতে মর্যাদায় রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার দুই রাত সজাগ থাকে, যে দিন সব অন্তর মরে যাবে সে দিন তার অন্তর মরবে না।’ (তাবরানি)। ঈদের দিন ভোরে ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করতে হবে। তারপর ঈদের নামাজ পড়তে হবে। মাঠে ঈদের নামাজ পড়া উত্তম। ভোরে উঠে মিষ্টিজাতীয় কিছু খাওয়া রাসূলুল্লাহর সুন্নত। ঈদের দিন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড়চোপড় পড়া উত্তম। ঈদের সময় ছোটদের ¯েœহ-আদর এবং বড়দের সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং এই দোয়া করা উচিত-আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের কাছ থেকে রমজানের রোজা কবুল করুন এবং পুনরায় রমজানকে ফিরিয়ে দিন। দীর্ঘ এক মাস রোজায় আমাদের নিয়মমাফিক চলা, পরিমিত খাদ্যগ্রহণ করার ফলে জীবনাচরণের একটা ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হয়। আমরা যেন ঈদের আনন্দে অতিরিক্ত ভূরিভোজে অসুস্থ হয়ে না পড়ি সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
ঈদ উপলক্ষে ভালো ও শিক্ষামূলক আলোচনা, নাটক, ফিল্ম, ইসলামি গান ইত্যাদির আয়োজন করা যেতে পারে। তবে ইসলামবিরোধী কিছু করা যাবে না। তাহলে রোজা ও ঈদের মহিমা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। পরিশেষে : মনে রাখতে হবে ‘ঈদ’ প্রচলিত অর্থে তথাকথিত কোনো লাগামহীন উৎসব বা পার্বণের নাম নয়। মাসব্যাপী কঠোর সিয়াম সাধনার পর গুনাহ মাফের এই খুশির দিনে আল্লাহর কাছে নিবেদন করি আমাদের সুস্বাস্থ্য ও আলোকিত জীবনের জন্য সাথে সাথে রোজায় ও ঈদে দেশের সুবিধাবঞ্চিত অধিকার হারা মানুষের পাশে দাঁড়াই। এসব মানুষের জন্য কবি লিখেছেন-‘জীবন যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসেনি নিদ, মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ’। এসব হতদরিদ্রকে নিয়েই পথে পথে আজ হাঁকিব বন্ধু ঈদ মোবারক আসসালাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখুন, এই প্রত্যাশায়।
চিকিৎসক-কলামিস্ট
মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।