পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ করার কৃতিত্ব দেশের প্রান্তিক কৃষক এবং কৃষি গবেষকদের। দেশের কৃষি গবেষকরা ধানসহ নতুন নতুন কৃষি বীজ ও উন্নত কৃষি পদ্ধতি উদ্ভাবন করে দেশের খাদ্য ঘাটতি পুরণ করতে সক্ষম হলেও এই চ্যালেঞ্জের মূল কৃতিত্বের দাবীদার প্রান্তিক কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন দূরের কথা, ধানের মূল্য না পাওয়ায় তাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়ছে। বাম্পার ফলনের ধারাবাহিকতায় দেশে খাদ্য উৎপাদনের সাফল্য অব্যাহত থাকলেও আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, কৃষকরা এখন ধানচাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তামাক ও রবিশস্যের দিকে বেশী ঝুঁকে পড়লে এক সময় দেশে খাদ্য ঘাটতি ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে পারে। গতকাল প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেশের উত্তরাঞ্চলে ধানের প্রধান মোকাম রংপুরে তামাকে চাষ বৃদ্ধির তথ্য জানা গেছে। সেই সাথে রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জের কৃষকরা ধানচাষের বদলে সবজি, ফল ও মৎস্য চাষের দিকে ঝুকছে। ধান চাষ করে কৃষকের উৎপাদন খরচ না উঠায় দেশের কৃষিখাতে ভেতর থেকে এক প্রকার রূপান্তর ঘটে চলেছে। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ধানের বদলে সব্জি, ফল ও মাছ চাষ বাড়লেও মানুষের খাদ্যাভাসের তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটছে না। সাধারণ মানুষের প্রধান খাদ্য ডাল-ভাতের মূল উৎস ধানচাষে কৃষকের আগ্রহ হারানো দেশের জন্য একটি অশনি সংকেত।
আম, লিচু, কাঠাল আমাদের গ্রীষ্মকালীন প্রধান মওসুমি ফল। কিন্তু ধানের জমিকে তামাক চাষ বা ফলের বাগানে পরিনত করার প্রবণতা খুব ভাল লক্ষণ নয়। ধানের ন্যয্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের ব্যর্থতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবছর উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ ও নওগাঁয় ধানের আবাদি জমির পরিমান কমছে। এসব ধানি জমি তামাক, সব্জি, ভ’ট্টা ও আমচাষের জমিতে পরিণত হচ্ছে। কর্মক্ষম কৃষকরা ধানচাষ ছেড়ে মৎস্যচাষ করে পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য আনার চেষ্টা করছে। কৃষক উৎপাদনের খরচের চেয়ে কমমূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হলেও খুচরা বাজারে চালের মূল্য কমছে না। ধান ও চালের বাজারমূল্যের ব্যবধান এত বেশী যে, প্রান্তিক কৃষকরা ধানের উৎপাদন খরচ উঠাতে না পারলেও রাইসমিল ও মজুদদারদের সিন্ডিকেটেড নিয়ন্ত্রণে সাধারণ দরিদ্র মানুষও ধানের বাম্পার ফলনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাঝখান থেকে শত শত কোটি টাকার মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগিরা। তবে এর বাইরেও আরেক ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেট তৎপর থাকতে দেখা যায়। যারা ধানের ভরা মওসুমে বিদেশ থেকে মোটা চাল আমদানী করে ধান-চালের মূল্যে ধস নামিয়ে কৃষকের বারোটা বাজানোর রাস্তা সুগম করছে। বেশ কয়েক বছর ধরে এ অবস্থা অব্যাহত থাকার পর এবার অনেক দেরিতে হলেও আমদানি শুল্ক দ্বিগুন বাড়িয়ে চাল আমদানী নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ হলেও আমদানী শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি স্থল বন্দর দিয়ে বা চোরাই পথে চাল আমদানী কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।
ধানের বাম্পার উৎপাদনের সময়ও দেশের উত্তরাঞ্চলের বাজারগুলোতে ভারতীয় চালে সয়লাব হয়ে যাওয়ার তথ্য কয়েকদিন আগেও প্রকাশিত হয়েছে। কিভাবে এসব চাল দেশে ঢুকছে কারা কিভাবে চাল আমদানীর সুযোগ বা অনুমোদন পাচ্ছে এসব খতিয়ে দেখাও জরুরী। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। দেশের ধানচাষি কৃষকদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে, খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রেখে দেশের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। ধান উৎপাদনের খরচ কমিয়ে এবং প্রান্তিক কৃষকদের ধানবিক্রির ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও নজরদারি থাকতে হবে। চাল আমদানী শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি এবার দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রশাসন ঘটা করে কৃষকদের ক্ছা থেকে ধান ক্রয়ের তৎপরতা চালাচ্ছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে এটা যেন স্রেফ লোক দেখানো উদ্যোগ না হয়। সরকারী ধান-চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে দলবাজি ও সিন্ডিকেটেড চক্র সক্রিয় থাকার অভিযোগও আছে। পাশাপাশি ধানক্রয়ের পরিমান দ্বিগুন করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি মিলাররা যাতে কৃষকদের জিম্মি করে লোকসানি মূল্যে ধান বিক্রিতে বাধ্য করতে না পারে সে ব্যাপারেও নজরদারি বাড়াতে হবে। ধানচাষের মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনে কৃষকের এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।