পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও সেবার নিম্নমান, যাত্রী হয়রানি, লাগেজ হারানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও তাতে ন্যূনতম উন্নতি হয়েছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে না। ইদানিং এই বিমানবন্দরে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে চলেছে। যাত্রীদের লাগেজ কেটে মূল্যবাণ জিনিসপত্র লাগেজ কাট পার্টি নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি লাগেজ গায়েব করে দেয়া হচ্ছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিমানবন্দরে লাগেজ হয়রানি চরমে পৌঁছেছে। সাধারণ যাত্রী থেকে শুরু করে ভিআইপি কেউই এই হয়রানি থেকে বাদ যাচ্ছে না। শত শত যাত্রীর লাগেজ প্রতিদিন গায়েব হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুইশ’র বেশি লাগেজ খুঁজে পাওয়া যায় না। বিমানবন্দরে কর্মরত কয়েকটি সংস্থার একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারির সহায়তায় অর্ধশত লাগেজ কাটা পার্টি সক্রিয় রয়েছে। তারা লাগেজ কেটে ও তালা ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে মূলবান সামগ্রী। বিদেশ যাত্রী ও বিদেশ ফেরত যাত্রী-উভয়েই এর শিকার হচ্ছে। বিদেশ যাত্রীরা বিদেশ গিয়ে বুঝতে পারেন দেশের বিমানবন্দরে এ কাজ করা হয়েছে। তখন তাদের কিছু করার থাকে না। যাত্রীরা সবচেয়ে ভয়ংকর যে আশঙ্কাটি করছেন তা হচ্ছে, লাগেজ কাটা পার্টি যদি লাগেজ কেটে তাতে মাদক ভরে দিয়ে দেয় তবে বিদেশের বিমানবন্দরে নিশ্চিতভাবেই ধরা পড়বে এবং এতে ঐ যাত্রী যেমন বিপদে পড়বে, তেমনি দেশের ভাবমর্যাদাও ক্ষুন্ন হবে। বিমানবন্দরে প্রতিদিনই লাগেজ কাটা পার্টির এই ভয়াবহ অপকর্ম চলছে।
একটি দেশের বিমানবন্দর দেশটির আন্তর্জাতিক মুখ হিসেবে বিবেচিত হয়। বিদেশিদের স্বাগত জানানোর দরজা বলা হয়। এটি দেশের মানুষের আচার-ব্যবহার এবং সংস্কৃতির সাথে পরিচয়ের প্রথম ধাপ। বিশ্বের প্রতিটি দেশই তার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে অত্যন্ত আধুনিক, পরিপাটি এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখে, যাতে যাত্রীরা আরামে যাতায়াত করতে পারে। বাংলাদেশে এর ঠিক উল্টো। বিমানবন্দরগুলো বিশেষ করে শাহজালাল বিমানবন্দর যে আন্তর্জাতিক মান পর্যন্ত যেতে পারেনি, তা সকলেরই জানা। এ বিমানবন্দরে হেন কোনো অনিয়ম নেই যা হয় না। নিরাপত্তাহীনতা, যাত্রী হয়রানি, লাগেজ টানা পার্টি, কাটা পার্টি, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম থেকে শুরু করে অনিয়ম ও অপকর্মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ কারণে এ বিমানবন্দর যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছিল। তারপরও বিমান কর্তৃপক্ষের হুশ হয়নি। বন্দরের নিরাপত্তা এমনই ঢিলাঢালা হয়ে পড়ে যে যাত্রীদের কেউ কেউ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিমানে উঠে গেলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ টের পায় না। অন্যদিকে লাগেজ চেক করার নামে যাত্রীদের লাগেজ তছনছ করা এবং লাগেজ কাটা পার্টির দৌরাত্ম এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে ভোগান্তির অন্ত থাকছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর একটি স্থানে লাগেজ কাটা পার্টি থাকবে কেন? এটা যে রীতিমতো এক ধরনের ত্রাস সৃষ্টিকারী অপকর্ম তা কি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছে না। প্রতিদিন শত শত যাত্রী তাদের লাগেজ খোয়া যাওয়া এবং লাগেজ কেটে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, কাস্টমস চেকিংয়ের নামে আনেক আগে থেকেই একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারি কর্তৃক বিদেশ ফেরত যাত্রীদের লাগেজ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এখনও এই রেখে দেয়ার মতো অসম্মানজনক কাজটি করা হচ্ছে। আবার বিদেশ থেকে যারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেন, তাদের পণ্য থেকেও কাস্টমসের কেউ কেউ পছন্দমতো পণ্য রেখে দেয়। পুরাতন এই অপসংস্কৃতির পাশাপাশি এখন বিমানবন্দরের বিভিন্ন বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারির সহযোগিতায় লাগেজ কাটা পার্টি যাত্রীদের লাগেজ কেটে তছনছ করে মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। লুট করা মালামালের মধ্যে রয়েছে ল্যাপটপ, মোবাইল, পারফিউম, ঘড়ি, ক্যামেরা, মেকআপ সামগ্রী, চকলেটসহ অন্যান্য জিনিপত্র। এতে যে যাত্রীরা কত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তা কল্পনাও করা যায় না। পর্যবেক্ষরা মনে করছেন, লাগেজ বিমানে উঠার আগে কেটে ও তালা ভেঙ্গে তল্লাশি করা কোনোভাবেই সঠিক নয়। আধুনিক যুগে এ প্রক্রিয়া চলতে পারে না। সারাবিশ্বের বিমানবন্দরে লাগেজ চেক করার অত্যাধুনিক স্ক্যানার রয়েছে। তাতেই সবকিছু ধরা পড়ে। এতে যাত্রীদের লাগেজও ঠিক থাকে এবং দ্রুত তারা ফেরতও পায়। আমাদের দেশে খুলে বা কেটে যেভাবে লাগেজ তল্লাশি করা হয়, তা একজন যাত্রীর জন্য অসম্মানজনক। এমনকি তার লাগেজও খুঁজে পাওয়া যায় না। এটা শুধু একজন ব্যক্তির মানসম্মানের বিষয় নয়, তা আন্তর্জাতিকভাবে মানসম্মান খোয়ানোরও বিষয়।
আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি-এ নিয়ে গর্বের সীমা নেই। অথচ দেশের যে বিমানবন্দর তার চেহারাই এখন পর্যন্ত বদলাতে পারছি না। এখানে যে ধরনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দেখা যায়, তা দেশের অভ্যন্তরের জেলা পর্যায়ের বাসস্ট্যান্ডের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বৈশিষ্ট্য কেমন থাকে এবং তাতে কর্মরতদের আচার-আচরণ কেমন, তা বন্দর কর্তৃপক্ষ কতটা জানে, এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। বিমানবন্দরে যাত্রীরা উঠা-নামা করবে, উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করবে-এমন পরিবেশ দেশের বিমানবন্দরে কল্পনাও করা যায় না। একজন যাত্রী, হোক দেশি বা বিদেশি তার লাগেজটি পেতেই দ্ইু-তিন ঘন্টা বসে থাকতে হয়। অথচ পুরো দেশ নয়, ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বিমানবন্দর সেবার দিক থেকে আমাদের বিমানবন্দরের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার যে, আমরা এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ, আধুনিক, নিরাপদ, যাত্রীবান্ধব ও দ্রুত গতির একটি বিমানবন্দর সৃষ্টি করতে পারিনি। আমাদের দেশের বিমানবন্দর নিয়ে যত অভিযোগ, বিশ্বের আর কোনো বিমানবন্দর নিয়ে এত অভিযোগ শোনা যায় না। তাহলে আমরা কিসের উন্নতি করছি? আমাদের ভাবমর্যাদা কোথায় যাচ্ছে? এ বিষয়গুলো নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত। আমরা মনে করি, বিমানবন্দরে লাগেজ খোয়া যাওয়া এবং লাগেজ কেটে তছনছ করে জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার যে দুর্বৃত্তায়ণ চলছে তা অবিলম্বে নির্মূল করা প্রয়োজন। যারাই এর সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। যাত্রীদের লাগেজে সন্দেহজনক কিছু থাকলে তা যাত্রীর উপস্থিতিতে চেক করাই উত্তম। তাদের অনুপস্থিতি লাগেজ কেটে উল্টো জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়া কিংবা পুরো লাগেজ গায়েব করে দেয়া কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। আশা করি, বিমান কর্তৃপক্ষ, এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।