Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধ লাইন-সংযোগ ৮৪ হাজার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাখরাবাদ গ্যাস চালায় কে? সরকার বঞ্চিত কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

সরকারি নির্দেশনানুযায়ি তিন বছর গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার কথা থাকলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিদিনই নতুন নতুন গ্যাস সংযোগ হচ্ছে। মাইলের পর মাইল নতুন লাইন বসানো হচ্ছে। গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষ বাখরাবাদ অসহায় হয়ে পড়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ব্যের কাছে। নাজেহাল হয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। অফিস এমনকি বাসায় গিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নানা ভয়ভীতির কারনে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাস বিতরণকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। এতে অবৈধ সংযোগের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৩ হাজার ৯৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ২৩টি অবৈধ গ্যাস লাইন চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ রয়েছে ৫ হাজার। কিন্তু অফিসের অন্য সূত্র মতে, অবৈধ সংযোগ সংখ্যা ৩০ হাজার। একদিকে কর্তৃপক্ষ অবৈধ লাইন চিহ্নিত করছে, অন্যদিকে মাইলের পর মাইল নতুন লাইন বসিয়ে সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
অবৈধ সংযোগ ৩০ হাজার হলেও সরকার প্রতিমাসে রাজস্ব হারাচ্ছে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা। এসব সংযোগ বৈধভাবে হলে সিকিউরিটি মানি হিসেবে প্রতিটি সংযোগ থেকে আসতো ১৬০০ টাকা। আর ৩০ হাজার সংযোগে সিকিউরিটি মানি চার কোটি ৮০ লাখ টাকা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
২০১১ সাল পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষ ছিলো তিতাস। বাখরাবাদ দায়িত্ব নেয়ার সময় আবাসিক গ্রাহক ছিল ১৪ হাজার। পরে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত আরো আট হাজার সংযোগ দেয় বাখরাবাদ। বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ২২ হাজার। কিন্তু এ সময়ে বাখরাবাদ নতুন কোন নেটওয়ার্ক করেনি বলেই জানান কর্মকর্তারা।
বিশ্বরোড থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর এবং শহর থেকে দক্ষিণ দিকে রামরাইল পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক এবং শহর বাইপাস সড়কের দুইপাশে সর্বোচ্চ এক কিলোমিটার পর্যন্ত বাখরাবাদের গ্যাস নেটওয়ার্ক (সম্প্রসারন লাইন) রয়েছে বলে তারা জানান। অবৈধভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার পথের দুইপাশে এবং দক্ষিণ দিকে রামরাইল পর্যন্ত যত গ্রাম আছে সবখানেই গ্যাসলাইন সম্প্রসারিত হয়েছে। গ্রামের পর গ্রামে স্থাপিত হয়েছে গ্যাসলাইনের অবৈধ নেটওয়ার্ক। এসব সম্প্রসারণ লাইন থেকে শত শত বাড়িঘরে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
বাখরাবাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্যাস বিতরণ কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত সুহিলপুরের কলামুড়ি কবরস্থান থেকে তাজুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত চার হাজার ফুট, ঘাটুরা মামুন মোল্লার বাড়ি এলাকায় তিন হাজার ফুট, দারমা ও নন্দনপুরে চার হাজার ফুট, কোনাহাটি-মাইঝহাটি জড়জড়িয়া পাড়া ও মালিহাতায় পাঁচ হাজার ফুট, রামরাইল থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার, সুহিলপুরের হাড়িয়ায় চার হাজার ফুট, তেলীপাড়ায় সাত হাজার ফুট, গৌতমপাড়া কাঠবাড়িয়া দীলিপদাশের বাড়ি এলাকায় ছয় হাজার ফুট, এ ছাড়া সুহিলপুর তেলীহাটি, হিন্দুপাড়া, গৌতমপাড়া, কেন্দুবাড়ি এলাকায় প্রায় আট হাজার ফুট, রাজঘর, নাটাই, ভাটপাড়া ও আমতলীতে ছয় হাজার ফুট, রামরাইলের ভোলাচংয়ে তিন হাজার ফুট, বুধলগ্রামে ছয় হাজার ফুট অবৈধ গ্যাস লাইন চিহ্নিত করেছে।
এছাড়া বুধলবাজার থেকে তৈয়ব চেয়ারম্যান বাড়ি পর্যন্ত, শালগাঁও-কালীসীমায় গ্রামে হাজার হাজার ফুট অবৈধ গ্যাসলাইন রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি অবৈধ লাইন বসানো হয়েছে সুহিলপুরে। এরপর বুধল ইউনিয়নে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সেখানে অবৈধ সম্প্রসারিত গ্যাসলাইন থেকে হাজারের মতো সংযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া নাটাই ইউনিয়নের আমতলী, রাজঘর ও ভাটপাড়াতে ৩০০ ও বুধলের মালিহাতা প্রায় দেড়শো অবৈধ সংযোগ রয়েছে। খাটিহাতা ঈদগাহ রোড এবং খাটিহাতা গ্রামে দুই হাজার ফুট অবৈধ গ্যাসলাইন বসিয়ে দেড়শ’র মতো অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগেও অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাটিখাতা গ্রামে। প্রায় প্রতিদিনই সংযোগ দেয়া হচ্ছে কোনো কোনো স্থানে। বাখরাবাদের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চক্রটি অফিসের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এরা অনেক শক্তিশালী।
তিনি জানান, তারা পাইপ এনে লাইন বসাচ্ছে। রাইজার উঠাচ্ছে। বিল বই দিচ্ছে। সবই করছে। প্রশাসনও শঙ্কিত। গত মাসের ১০ তারিখে ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ করে অবৈধ লাইন অপসারণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। অভিযানের দিন সদর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাকে ফোন করলে আসতে পারবেন না বলে জানান। বার বার জেলা প্রশাসকের সহায়তা চাওয়া হয়। কোম্পানির এমডিকে দিয়ে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয় ম্যাজিষ্ট্রেট দেয়ার জন্যে। তারপরও কিছুই হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাস

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৯ জানুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ