চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
নয়
মানুষেরা যেসব জিনিষকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করে, আল্লাহ্র সাথে শরীক করে সে সমস্ত জিনিসও সৃষ্ট। যেমন সূর্য, চন্দ্র, বাতাস, পানি, সাপ, বড় বড় গাছ ইত্যাদি। সৃষ্টি যে কোন দিন স্রষ্টা হতে পারে না, সৃষ্টিকে স্রষ্টা অংশীদার ভাবা যে সাংঘাতিক ভাবে অযৌক্তক তা কুরআনে উপমার মাধমে বলা হচ্ছে। কুরআনে বলা হচ্ছে, “তোমাদের আমি যে রূযী দিয়েছি, তোমাদের অধিকারভূক্ত দাস-দাসীরা কি তাতে তোমাদের সমান সমান অংশীদার? তোমরা কি তাদেরকে সেরূপ ভয় কর, যেরূপ নিজেদের লোককে ভয় কর?” “সূরা ৩০. আয়াত ২৮”।
এখানে মহান আল্লাহ্ দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বোঝাচ্ছেন, গোলাম ও মালিক যেমন একই মর্যাদার অধিকারী নয় তেমনি স্রষ্টা ও সৃষ্টি একই মর্যাদার অধিকারী নয়। অর্থাৎ সৃষ্টিকে স্রষ্টার আসনে বসানো বা স্রষ্টার সাথে অংশীদার বানানো চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
আসলে মানব প্রকৃতির মধ্যেই এক আল্লাহ্র স্বীকারোক্তি বিদ্যমান। কিন্তু সত্যকে জানা সত্তে¡ও যারা অসৎ পথ অবলম্বন করে তারা ধীরে ধীরে বহু দেব-দেবীর আরধনায় মশগুন হয়ে পড়ে। আর মূলত মানুষের সামনে হারিয়ে যাওয়া সত্য পথটি আবার সুষ্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্যই যুগে যুগে আল্লাহ নবী-রাসুল পাঠান। “সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী, সীরাতে সরওয়ারে আলম (১ম খÐ), পৃ. ৩৮”।
তৎকালীন আরব সমাজের মুশরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাসের দিকে লক্ষ্য করে কুরআন বলছে, “যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর তাদের কে পয়দা করেছে? তাহলে তরা নিশ্চয়ই বলবে আল্লাহ্।” “সূরা ৪৩, আয়াত ৮৭”।
সুতরাং একথা পরিস্কার যে, বুহুদেববাদ ও দ্বিÑঈশ্বরবাদ গ্রহণযোগ্য কোন মতবাদ নয়। বরং এ মতবাদদ্বয় মানব প্রকৃতির সাথে সাংঘর্ষিক।
উপরে ‘একত্ববাদের ধারণ’ সংক্রান্ত বিষয়ে যে আলোচনা করা হয়েছে তা থেকে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে, দ্বি-ঈশ্বরবাদ ও বহু ঈশ্বরবাদ নয় বরং একেশ্বরবাদই অধিক যুক্তিযুক্ত। এবং মানব প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যশীল। এ প্রসঙ্গে স্বাভাবিকভাবে যে প্রশ্নটি ওঠে সেটি হলো, এই এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ্র সাথে জীব ও জগতের সম্পর্ক কী? অর্থাৎ আল্লাহ্ এই জগতের অন্তরে না এই জগতকে অতিক্রম করে আছেন? এই মূল প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত মতবাদের “বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, আমিনুল ইসলাম, জগৎ দর্শন, পৃ. ১৮৮-১৯৪; শ্রী প্রমোদবন্ধু সেগুপ্ত, পাশ্চাত্য দর্শন, পৃ. ৩৩০-৩৪৫”।
সৃষ্টি হয়েছে তা হলো ঃ (১) অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ (উবরংস), (২) সর্বেশ্বরবাদ (চধহঃযবরংস), (৩) সর্বধরেশ্বরবাদ (চধহবহঃযবরংস) ও (৪) ঈশ্বরবাদ (ঞযবরংস)। নিম্নে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো ঃ
(১) অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ (উবরংস) ঃ এই মতবাদ অনুযায়ী আল্লাহ সম্পূর্ণভাবে এই জগৎকে অতিক্রম করে আছেন (এড়ফ রং যিড়ষষু ঃৎধহংপবহফবহঃ)।
(২) সর্বেশ্বরবাদ (চধহঃযবরংস) ঃ এই মতবাদ অনুসারে আল্লাহ সম্পূর্ণ জগতের অন্তর্বর্তী বা জগতের অন্তরে আছেন (এড়ফ রং যিড়ষষু রসসবহবহঃ)।
(৩) সর্বধরেশ্বরবাদ (চধহবহঃযবরংস)-ও ঈশ্বর (চধহঃযবরংস) এই দুই মতবাদ অনুসারে আল্লাহ জগতের অন্তর্বর্তী ও অতিবর্তী উভয়ই। আল্লাহ জগতকে অতিক্রম করে আছেন এবং জগতের অন্তরেও আছেন। (এড়ফ রং নড়ঃয রসসধহবহঃ ধহফ ঃৎধহংপবহফবহঃ)।
তবে উভয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলোÑ ঈশ্বরবাদীদের মতে, আল্লাহ একাধারে জগতের অতিবর্তী ও অন্তর্বর্তী বটে। তবে তিনি পুরাপুরিভাবে জীবকুলের অতিবর্তী। কিন্তু সবধরেশ্বরবাদীদের মতে, আল্লাহ্ যেভাবে জগতের অতিবর্তী ও অন্তর্বর্তী, ঠিক একইভাবে জীবকুলেরও অতিবর্তী ও অন্তর্বর্তী। কিন্তু অতিবর্তী ঈশ্বরবাদও সর্বেশ্বরবাদ গ্রহণযোগ্য মতবাদ নয়। ঊভয় মতই চরম বলে মনে
হয়। অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ মেনে নিলে আল্লাহ্কে একজন যন্ত্র নির্মাতার সাথে কল্পনা করতে হয়। যিনি এই জগতরূপ বিশাল যন্ত্রটিকে তৈরি করে জগতের বাইরে চলে গেছেন। আর আল্লাহ্ ছাড়া যদি জগত আপনা আপনিই চলতে পারে তাহলে আল্লাহ্র প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হয় না। অপর পক্ষে, সর্বেশ্বরবাদকে এক শূণ্যগর্ভ মতবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। কেননা, এই মতবাদ বহুকে উপেক্ষা করে কেবল এককে স্বীকার করে। কিন্তু বহুকে অস্বীক্ষার করে শুধুমাত্র একের ধারণা শূণ্যগর্ভ। এই মতবাদে জীব ও আল্লাহ্ এক অভিন্ন। এখানে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু পার্থক্যকে কেন্দ্র করেই ধর্মের অস্তিত্ব সম্ভব। তাই এই মতবাদ ধর্ম সম্পর্কীয় অনুভূতির কোন যক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে পারে না। অপরদিকে সর্বধরেশ্বরবাদ মতবাদটিকে গ্রহনযোগ্য বলা যেতে পারে। এই মতবাদ অনুযায়ী আল্লাহ্ একই সাথে জীব ও জগতের অতিবর্তী ও অন্তর্বর্তী। পৃথিবীর প্রধান প্রধান ধর্মগুলোর মতে, জগতের শুধু বাইরে নয়, জগতের মধ্যেও এবং জগতের কর্মকাÐ পরিচালনায় নিয়ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন।” “আমিনুল ইসলাম, জগৎ জীবন দর্শন, পৃ. ১৮৯”।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।