পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বরাজনীতির একটা বিরাট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে পরিশোধিত বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। যুগে যুগেই এই জ্বালানি তেল নিয়ে বেঁধেছে সংঘাত। বিশ্বায়নের এই যুগেও মহাপরাক্রমশালী দেশগুলো তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ। বিশ্বরাজনীতিবিদগণ প্রতি মুহূর্তেই তেলের দাম এবং এর প্রাপ্যতা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে থাকেন। বর্তমান বিশ্বে যত সংঘাত দেখা যাচ্ছে, যেমন; ভেনিজুয়েলা সংকট, ইরানের উপর মার্কিন অবরোধ, লিবিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধ, সিরিয়ার সংঘাত এগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তেলের বিষয় জড়িত। দ্য ইকোনমিস্টের একদল গবেষক এজন্য বলেছেন যে, ‘এই সম্পদরূপী অভিশাপ অর্থনীতিকে চাপে ফেলে, রাজনীতিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ও যুদ্ধকে উসকে দেয়।’ গবেষকদের এই বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে সময় অসময়ে। নতুন করে তেল নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে মার্কিন জোট। তারা ইরানে অবরোধ আরোপসহ তেহরানের বিরুদ্ধে অব্যাহত শক্তি ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে বিমানবাহী রণতরীর অবস্থানও তেহরানকে চাপে ফেলার জন্যই। অপরদিকে, ভেনিজুয়েলায় মার্কিন বিরোধী নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে উৎখাত করে ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে হুয়ান গুয়াইদোকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে। এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমানভাবে তেলের রাজনীতি জড়িত। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে ভেনিজুয়েলার অবস্থান দ্বিতীয়। অন্যদিকে, ভেনিজুয়েলা দক্ষিণ আমেরিকার শীর্ষ জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশ। দেশটির রপ্তানি আয়ের ৯০ শতাংশের বেশি যোগান দেয় জ্বালানি তেল। মার্কিন অবরোধের কারণে, বামপন্থী মাদুরোর সরকার অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মার্কিনপন্থী হুয়ান গুয়াইদো দেশে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। অপরদিকে, মাদুরোর পক্ষে রয়েছে চীন, রাশিয়া, তুরস্ক। অন্যদিকে, ইরান থেকে সর্বোচ্চ তেল আমদানিকারক দেশ ভারত ও চীনের উপর ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় ভারতের জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা বাতিল এবং চীনা পণ্যের আমদানি শুল্ক ১০% থেকে বাড়িয়ে ২৫% করার মতো কার্যক্রম আছে। মার্কিন এই সিদ্ধান্তগুলোকে প্রতিহত করার জন্য বৈরী রাষ্ট্র ভারত ও চীন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানকে নিয়ে ইরানকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিচ্ছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। মোটা দাগে বলতে গেলে, তেল নিয়ে বিশ্বে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই গেমে জয়ী হওয়ার জন্য নতুন নতুন তেল উৎপাদনকারী দেশের সন্ধানেও ব্যস্ত। দৃষ্টিতে রয়েছে এক্ষেত্রে, উগান্ডা, মোজাম্বিকের মতো দেশগুলো যেগুলোকে তেল উত্তোলনের পূর্বেই দেনার দায়ে জর্জরিত করা হচ্ছে। তেল নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাষ্ট্রগুলোর এই নগ্ন রাজনীতির কারণে বিশ্ব শান্তি আজ বিঘ্নিত। তেল মজুদ ও উৎপাদনকারী দেশগুলো তা আরব হোক আর অনারব হোক কেউ নিস্তার পাচ্ছে না মার্কিন অপরাজনীতি থেকে। বিশ্বরাজনীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য তাই তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বিপণনকে আরো স্বচ্ছ, শক্তিশালী করার জন্য ওপেককে আরো বেশি সৃজনশীল পদক্ষেপ ও উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ডক্টর মালিকা কলেজ, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।