Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারত থেকে চাল আমদানি

দেশের কৃষক মনের দুঃখে ধানক্ষেত পোড়াচ্ছেন ২০ মাসে এসেছে ২৪ লাখ টন পাইপলাইনে আরো ৩ লাখ ৮০ হাজার টন

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

দেশের সাধারণ কৃষকরা ধানের দাম না পেয়ে মনের দুঃখে ধানক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন; ধানের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে সড়ক অবরোধ করছেন; ঠিক সেই সময় দেশের কৃষকদের বঞ্চিত করে ভারত থেকে চাল আমদানি করার প্রস্তুতি চলছে। ২০ মাসে আমদানি করা হয়েছে ২৪ লাখ টন চাল; এখনো আমদানির পাইপলাইনে রয়েছে আরো ৩ লাখ ৮০ হাজার টন। এ যেন দেশের কৃষক মেরে ভারতীয় কৃষককে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা! অবশ্য গতকাল খাদ্য সচিব জানিয়েছেন, আপাতত ভারত থেকে কোনো চাল আমদানি করা হচ্ছে না। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ইনকিলাবকে বলেন, সরকারিভাবে চালের আমদানি শূন্যের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে।
অথচ বাস্তবতায় উল্টো চিত্র। স¤প্রতি দি এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বিআরআইইএফ প্রকাশিত ‘দ্য পলিটিক্যাল ইকোনমি অব রাইস ট্রেড বিটুইন বাংলাদেশ ইন্ডিয়া অ্যান্ড নেপাল’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ২০ মাসে ভারত থেকে প্রায় ২৪ লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে। এর বেশির ভাগ নন-বাসমতী হলেও বাসমতী চালও রয়েছে। এ পরিমাণ চাল আমদানিতে বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ৯৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। ওই প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ভারতের অর্থবছরের হিসাবে ২০১৭-১৮ সময়ে দেশটি থেকে বাংলাদেশে চাল (বাসমতী ও নন-বাসমতী) রফতানি হয়েছে ২০ লাখ ৪২ হাজার ৫৮২ টন। অন্য দিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৮১ টন। সব মিলিয়ে দুই অর্থবছরের ২০ মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল এসেছে ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ৮৬৩ টন। ১ এপ্রিল থেকে ভারতে নতুন অর্থবছর শুরু হয়।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ইনকিলাবকে বলেন, সরকারিভাবে চালের আমদানি শূন্যের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়েছে। কয়েক বছর ধরেই আমদানি করা হচ্ছে না। দেশে চালের পর্যাপ্ত উৎপাদনের কারণে বেসরকারিভাবে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে উচ্চ শুল্কহার বসানো হয়েছে। তবে কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে চাল রফতানির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। দেশের খাদ্য চাহিদায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাড়তি চাল রফতানির উদ্যোগ নিলে কৃষকরা দাম পাবেন। বোরো মৌসুম শেষ হলেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রচুর পরিমাণ চাল রয়েছে। ভারত অথবা অন্য কোনো দেশ থেকে আপাতত কোনো চাল আমদানি করছি না। পাইপলাইনে আরো ৩ লাখ ৮০ হাজার টন রয়েছে, সেগুলো আনা নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, চাল আমদানি উন্মুক্ত রেখে কৃষকের উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ সাংঘর্ষিক। গত আমন মৌসুমে যখন বাম্পার ফলন হলো, তখনই উচিত ছিল চাল আমদানি বন্ধ কিংবা আরো উচ্চ শুল্ক আরোপ, সেটি করা হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দেশে উৎপাদন কমে গেলে আমদানি শিথিল করা যেতে পারে। চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। আমনের পর বোরোতে পরপর দুই মৌসুম ভালো ফলনের কারণে চাল আমদানির ব্যাপারে এখনই কঠোর হতে হবে। তা না হলে কৃষক যে বোরো ধানের দাম পাচ্ছেন না তা আরো জটিল আকার ধারণ করবে। ভবিষ্যতে কৃষক চাল উৎপাদন থেকে সরে আসতে পারে। এতে হুমকিতে পড়তে পারে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।
জানা গেছে, ব্যবসায়ীর কারসাজি বন্ধ, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও চালের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালের শেষ দিকে শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এর সঙ্গে রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) যোগ হয় ৩ শতাংশ। ফলে চাল আমদানিতে সব মিলিয়ে ২৮ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এর প্রভাবে পরের প্রায় দেড় বছর ধরে চাল আমদানি এক রকম বন্ধ ছিল, কিন্তু ২০১৭ সালের মে মাসে পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওরাঞ্চলে সৃষ্ট আগাম বন্যায় ফসলহানির পর সরকার চালের আমদানি শুল্ক উঠিয়ে দেয়। এ ছাড়া বাকিতে চাল আমদানির সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়। এর ফলে ব্যাপকভাবে চাল আমদানি শুরু হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে প্রায় ৩৯ লাখ ৯৩ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়। অবস্থানগত কারণে আমদানির বেশির ভাগই হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। গত বছরের শেষ দিকে সরকার চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক পুনর্বহাল করে। এতে চাল আমদানি কমলেও বন্ধ হয়নি। যদিও হাওরের বন্যায় চালের ঘাটতি ১০ লাখ টন হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু গত দুই বছরে দেশে ৫৫ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছর আমদানি হয় ১৩ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছর প্রায় ৪০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে মোট আমদানি দুই লাখ টন হলেও এখনো পাইপলাইনে ৩ লাখ ৮০ হাজার টন চাল রয়েছে।
গত শনিবার এক সেমিনারে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকও চাল আমদানিকে অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন। বাড়তি আমদানি, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ থাকা এবং উদ্বৃত্ত উৎপাদন ধানের দাম নিয়ে সঙ্কটকে জটিল করেছে।



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২০ মে, ২০১৯, ৮:৫৫ এএম says : 0
    আল্লাহ তা'আলা জাতীয় বেঈমান ভারতের দালালদেরকে ধংস করিয়া দাও। আল্লাহ সোবহানাহু তা'আলা ।
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার আহমেদ ২০ মে, ২০১৯, ১০:০২ এএম says : 0
    অনতিবিলম্বে চাল আমদানি বন্ধ করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২০ মে, ২০১৯, ১০:০৩ এএম says : 0
    Ashole eai aowamiliger prodhan netri theke aromvo kore trino mool porjonto shokolei jatio shartho jolanjoli dia varotio shartho rokkhai totpor.Eakhon jonogonoi bichar koruk amra ki Aowmiliger netritte shadhin na poradhin jati ?
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ২০ মে, ২০১৯, ১০:০৪ এএম says : 0
    এরা কারা যারা দেশের কৃষকদের কাছ থেকে চাল না কিনে আমদানি করছে ?
    Total Reply(0) Reply
  • রিফাত ২০ মে, ২০১৯, ১০:০৬ এএম says : 0
    সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের মধ্য থেকে দেশ প্রেম হারিয়ে গেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Habib Rahman ২০ মে, ২০১৯, ১০:৪৬ এএম says : 0
    i never seen like sheikh hasina as a prime minister around world that treating his own peoples are oppressing. but neighbor country getting benefited... its pathetic...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ