Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নদী এখন মরা খাল

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

একসময়ের থৈ থৈ পানি আর পানি নিয়ে বৃহত্তর চলনবিল প্রায় সাগরে রুপ নিয়েছিল। মাছের গুতোয় নাকি নৈাকা চলাচলই দায় ছিল। সেটা এখন রুপকথার গল্পের মতো। এখন সেই নদী আর নদী নেই। বর্তমানে সেটা নালা বা খালে পরিনত হয়েছে। অপরদিকে প্রমত্ত খরস্রোতের যমুনাও যেন মরা নদীতে পরিনত হয়ে শাখা নদীগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৪/৫ নং পিলারে দাড়িয়ে চোখ মেললে দেখা যায় খালেরমত রূপতার। চারিপাশে ধু-ধু বালুচর। বিস্তৃণ চরে সবুজ ফসল। মৎস্যজীবীরা হচ্ছেন বেকার। নৌকার মাঝি-মাল্লারা এখন কর্মহীন অসহায়। সবচেয়ে শংকার বিষয় হচ্ছে মাঝ নদীতে বিশাল চর জেগে ওঠায় নদীর গতিপথে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। যা দু’পাড়ের মানুষের জন্য অশনি সংকেত।
বৃহত্তম চলনবিলের ইতিহাস থেকে জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছোট বড় ৪০ টি নদী ছিল সিরজগঞ্জের প্রাণ। কালের বিবর্তনে ২৪ টির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। আর ১৬ টির মধ্যে অন্যদিকে জেলার পুর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর বুকে বিশাল বিশাল চর জেগে ওঠায় যমুনা তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। ৩০ বছর আগেও চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এসব নদ-নদীতে বছর জুড়েই ৬-১২ ফুট পানি থাকত। ফলে সারা বছরই নৌ চলতো। কিন্তু বছরের পর বছর পলি জমে এসব নদী ভরাট হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ, ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব ও ১৯৮০’র দশকে পদ্মার উৎমুখে অপরিকল্পিত সøুইসগেট নির্মাণের ফলে চলনবিলের বিভিন্ন নদ-নদী ও বিল, জলাশয়, খালগুলো পলি জমে ক্রমে ভরাট হয়ে গেছে।
আরো জানা যায়, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, সলঙ্গা, তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, পাবনার চাটমোহর, ভাঙগুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও নওগাঁর আত্রাই নিয়ে বৃহত্তর চলনবিল গঠিত। গঠনকালে চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮ বর্গ কি.মি।
দীর্ঘদিন কার্যকর তেমন খনন না করায় নদীর স্রোতধারা ও নাব্যতা ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে বিলের আয়তন দাঁড়ায় মাত্র ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে মূল বিলটির আয়তন দাঁড়ায় ১৫.৯ থেকে ৩১ কি.মি। এছাড়া বিলের গভীরতা ১.৫৩ মিটার থেকে ১.৮৩ মিটার।
চলতি দশকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে নাটোরের বনপাড়া পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণের পর পানি প্রবাহে আরও বেশি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। গতকয়েক বছরে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ফলে বিলের দেশীয় প্রজাতির প্রায় ৫০ প্রকার মাছের অধিকাংশই বিলুপ্তি ঘটেছে। এছাড়াও জেলার বেলকুচি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহাসিক হুরা সাগরটি এখন মরাখালে পরিণত হয়েছে। মৎস্য বিভাগ থেকে কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নদীর এ খনন কাজ তামাশা ছাড়া অন্য কিছুই না বলে মন্তব্য করেছেন হুরা সাগর পারের বাসিন্দরা।
চলনবিলে মাছ আর পানি ছিল সমান সমান। চলনবিলের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া গারিদহ, ফুলজোড়, করতোয়া নদীতে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত। বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা হাটের দিন জাহাজে করে মালামাল পরিবহন করা হতো। হাজার হাজার জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। আর এখন বর্ষা মৌসুমে সামান্য পানি থাকলেও শুস্ক মৌসুমে নদীর বুকে হয় ধান চাষ।
চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সমন্বয়ক মিজানুর রহমান জানান, যতদিন যাচ্ছে ততই চলনবিল ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে। চলনবিলকে রক্ষায় সরকারের কাছে ২৬ দফা দাবি দেয়া হয়েছে। সরকার শুধু আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু বাস্তবায়নে কোন ভুমিকা রাখছে না।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশালী শফিকুল ইসলাম জানান, সিরাজগঞ্জর উত্তরে কাজিপুর থেকে দক্ষিণে চৌহালী পর্যন্ত প্রায় ৮২ কি.মি দৈর্ঘ্য যমুনা। পূর্বে টাঙ্গাইল-পশ্চিমে সিরাজগঞ্জের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত যমুনার প্রস্থ প্রায় ১৫ কিমি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে লক্ষ লক্ষ টন পলি পড়ে। এ জন্য স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে যমুনার বুকে অসংখ্য চর জেগে ওঠেছে। ফলে নদীটি আঁকা-বাঁকা ও বিভিন্ন চ্যানেল বিভক্তি হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বড় দুটি চ্যানেল পুর্ব-পশ্চিম তীর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তীর এলাকাগুলো ভাঙনের মুখে পড়ছে। সরকার ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী খনন করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাস্তবায়ন হলে নদী পুর্বের যৌবন ফিরে পাবে, পাশাপাশি ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ নদীগুলোও খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে করতোয়া, ফুলজোড়, হুরাসাগর ও বাঙ্গাল নদীর ১২২ কিমি খননের জন্য চুড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি বছরে দরপত্র আহবান করা হবে।



 

Show all comments
  • ash ১৯ মে, ২০১৯, ৭:০৮ এএম says : 0
    ER POREO ORA BANGLADESHER KUDUM !! JARA SHIKHTE CHAY ORA AKBARE E SHIKHE,JARA SHIKHTE PARE NA TARA 3 BA 5 BAR KENO? HAJAR BAREO SHIKHTE PARE NA !! ORA OPODARTHER DOLLL
    Total Reply(0) Reply
  • Md Riyadh Hasan Jewel ১৯ মে, ২০১৯, ১০:২৫ এএম says : 0
    বিগত এবং বিগত এবং বিগত এবং বিগত ও বর্তমান সরকারের অবদান
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ