পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষের যখন নাভিশ্বাস হওয়ার পালা ঠিক তখনই রাজধানীসহ সারাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে কালবৈশাখী ঝড়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ এমন ঝড়ে ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের এক মুসল্লীসহ রাজধানীতেই মারা গেছেন ৪ জন। এতে আহত হয়েছে অন্তত ২২ জন। এছাড়া দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় ঝড় ও বজ্রপাতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। বায়তুল মোকারমে নিহত ব্যক্তির দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া ঘটনা তদন্তে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ৯৩ কিলোমিটার। এছাড়া দেশের অন্যান্য জেলাতেও ঝড়ের গতি ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল। হঠাৎ এমন ঝড়ে বড় বড় গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়ে দেশের অনেক সড়েক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ঢাকার সাথে কয়েকটি জেলার ট্রেন যোগাযোগ বন্ধসহ ফেরি চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা মেডিক্যাল, পুলিশ ও ফায়র সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশে হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের প্যান্ডেল ভেঙে সফিকুল ইসলাম (৩৫) নামে একজন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বাড্ডায় কংক্রিটের প্রাচীর (দেয়াল) ধসে তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের দু’জনকে ঢাকা মেডিক্যালে ও একজনকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (মসজিদ ও মার্কেট বিভাগ) মুহাম্মদ মহিউদ্দিন মজুমদার জানান, শুক্রবারে মসজিদে অনেক লোক হয়। এছাড়া রোজার মাসে এ সংখ্যা আরও বাড়ে। তিনি বলেন, শুক্রবার জুমআ’ উপলক্ষ্যে মসজিদের দক্ষিণ গেটে মুসল্লিদের নামাজের জন্য একটি প্যান্ডেল করা হয়। মাগরিবের নামাজের সময় প্রবল বেগে ঝড়ে প্যান্ডেলটি ভেঙে মুসল্লীদের ওপরে পড়ে।এতে অনেকে আহত আহত হয়। পরে অন্যান্য মুসল্লীরা তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সফিকুলকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতরা ঢামেকে চিকিৎসাধীন।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার মো. রাসেল সিকদার বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্যান্ডেল ভাঙার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুই ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। পল্টন থানার ওসি মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সাথে পুলিশও মুসল্লীদের উদ্ধারে কাজ করছে।
ঢামেক সূত্র জানায়, বায়তুল মোকারমের ঘটনায় সফিকুল ছাড়াও অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। সফিকুলের বাড়ি লালমনিরহাটে। তিনি ঢাকায় পোশাক শ্রমিক হিসবে কাজ করতেন। তাদের মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এএসআই শরীফুল ইসলাম, মুসল্লি বদিউজ্জামান রুবেল, বিপ্লব, আব্দুল কুদ্দুস, জানে আলম, শফিকুর রহমান সবুজ, মনির হোসেন, তারেক রহমান, মাসুদ, জহিরুল ইসলাম, সজীব, আজগর হোসেন, আরিফুল ইসলাম, হেলাল উদ্দিন, সাইফুল ইসলামের নাম জানা গেছে। বাকিদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
ধর্মমন্ত্রণালয়ের সচিব আনিসুর রহমান বলেন, বায়তুল মোকাররমের নিহত মুসল্লীকে দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া ঘটনাটি তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে উত্তর বাড্ডায় দেয়াল ধসে তিন জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে দুই জনকে ঢাকা মেডিক্যালে ও একজনকে পঙ্গু হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনই মারা যান। নিহতদের মধ্যে বুলবুল ও তপনের পরিচয় জানা গেলেও অন্যজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
বুলবুলের সহকর্মী মামুন শেখ জানায়, ঝড়ের সময় বুলবুল বাড্ডা প্রাণ আরএফএলের গাড়ি পার্কিংয়ের দেয়ালের পাশে দাড়িয়েছিল। এ সময় ঝড়ে দেয়াল ধ্বসে তাদের উপড় পরে। বুলবুলের মামা রাজিব হোসেন জানায়, তাদের বাড়ি নড়াইল জেলার নড়াগাতি উপজেলায়। বাবার নাম আব্দুল রাজ্জাক বিশ্বাস। বর্তমানে গাবতলীর বাগবাড়ি এলাকায় বাড়ি। মিরপুর বাংলা কলেজ থেকে মাষ্টার্স শেষ করে বাসের চেকারের কাজ করত।
বাড্ডা থানার এসআই গোলাম মোস্তফা জানায়, ঝড়ে দেয়াল ধ্বসে নিহতদের একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এছাড়া গুলশান-১ নম্বরে একটি যাত্রী ছাউনীতে গাছ পড়ে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ইফতারের আগে চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড় ও বজ্রপাতে কয়েকজন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে রাত সোয়া ১০টার দিকে প্রবল বেগে এ ঝড় হয়।
এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় ঝড় ও বজ্রপাতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীরামপুরে মৃত হজরত আলীর ছেলে রেজাউল হোসেন (৪০) ও মোতালেব হোসেনের ছেলে মো. মুসা (৩৫) নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন একই এলাকার হজরত আলী (৬০)।
অপরদিকে নওগাঁর পোরশা উপজেলায় বিকেলের দিকে হওয়া বজ্রপাতে দুই ধানকাটা শ্রমিকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন হয়েছেন। তারা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের গানুইর গ্রামের আজাদ হোসেনের ছেলে শফিনুর রহমান বিষু (৩২) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার পিঠাইল গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে হাসান আলী (৩০)। এ সময় বুলবুল হোসেন আহত হন। অন্য নিহতের নাম জানা যায়নি।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে রাজধানীতে বয়ে ঝড়ের গতিবেগ ভিন্ন ভিন্ন রকম ছিল অনেক। বিমানবন্দর এলাকায় ঝড়ের সময় বাতাশের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ৯৩ কিলোমিটার। আগারগাঁওয়ে ছিল ৬৫। এছাড়া রংপুরে ঝড়ের গতি ছিল ৬৭, বগুড়ায় ৬৫ ও রাজশাহীতে ৫২ কিলোমিটার।
##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।