পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : ইসলামিক স্টেট (আইএস) ১৯৭৯-৮৯ মেয়াদে রাশিয়ার আফগানিস্তানে ব্যর্থতার মতো রাশিয়াকে সিরিয়ায় আরেকটি ব্যয়বহুল কাদার পাঁকে আটকে ফেলতে চাইছে। অর্থাৎ সিরিয়াকে তারা রাশিয়ার জন্য আরেকটি আফগানিস্তানে পরিণত করতে চায়। আফগানিস্তানে মুজাহিদরা কাঁধ থেকে নিক্ষেপযোগ্য স্টিংগার রকেট ব্যবহার করে রাশিয়াকে হটিয়েছিল। খবর দি নিউইয়র্ক অবজারভার।
গত ১৪ মে আইএস সিরিয়ায় রাশিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। তারা ৪টি এমআই-২৪ অ্যাটাক হেলিকপ্টার পুড়িয়ে দেয়, একটি গুদাম ধ্বংস ও একটি মিগ-২৫ জঙ্গি বিমানের ক্ষতি সাধন করে। হোমস প্রদেশের এ রুশ ঘাঁটিটি টি-৪ নামে পরিচিত, কোনো কোনো সময় এটিকে টিয়াসও বলা হয়।
আইএস রাশিয়ার ওপর কঠিন আঘাত হেনেছে। জিহাদিরা সেজন্য গর্বিত। এ হামলার একদিন পর ১৫ মে আইএস তাদের ওয়েবসাইট আমাক-এ এই হামলা ও ক্ষতি সাধনের কৃতিত্ব দাবি করে। ১০ দিন পর ২৫ মে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম খবরটি প্রকাশ করে। বিবিসি, ইন্ডিপে›েডন্ট, ডেইলি মেল, গার্ডিয়ান এবং অন্যান্য সংবাদ সংস্থাগুলো হামলা বিষয়ে বিভিন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করে। তবে তারা এসবই করে স্ট্রাটফর নামক একটি নিরপেক্ষ গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক রুশ ঘাঁটিটির আগের ও পরের উপগ্রহ চিত্র প্রকাশের পর। স্ট্রাটফরের সদর দফতর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অবস্থিত।
উপগ্রহ চিত্রগুলোতে টি-ফোরে হামলার প্রভাব ও তার ফলে সৃষ্ট অগ্নিকা- দেখা যায়। ছবিগুলো থেকে পরিষ্কার যে ক্ষয়ক্ষতি যা ঘটেছে তা একক, দুর্ঘটনাজনিত, অগ্নিকা- বা কোনো গ্যাস ট্যাংকের বিস্ফোরণ নয়। স্ট্রাটফরের উপস্থাপিত প্রমাণ সত্ত্বেও রাশিয়া বলেছে, গোটা গল্পটাই বাজে। এ রকম কোনো কখনোই ঘটনা ঘটেনি। তারা তাদের এ বক্তব্যে অটল রয়েছে।
রাশিয়া চায় না যে বিশ্ব বা তার দেশের লোকজন টি-৪ ঘাঁটিতে হামলাকে আইএসের কাজ হিসেবে ভাবুক। রাশিয়া চায় না যে তারা আইএসের হামলায় বারবার যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা কেউ জানুক।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম গোটা বিষয়টি প্রকাশের ক্ষেত্রে বিলম্ব করেছে। সিএনএন ২৫ মে ওয়েবসাইটে সংবাদটি ছোট করে দিয়ে প্রশ্ন করে, এটা কি ঘটেছে? তাদের খবরের শিরোনাম ছিল : আইএস কি রাশিয়ার একটি ঘাঁটিতে সামরিক সরঞ্জামের ওপর হামলা চালিয়েছে? ফক্স নিউজও খবরটি সম্পর্কে সন্দেহ ব্যক্ত করে।
বিশ্বাসযোগ্য তথ্য না থাকলে ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বারা সমর্থিত না হলে কোনো দেশ আইএসের হামলার খবর প্রকাশ নাও করতে পারে। বিশেষ করে যদি তা দূরবর্তী এলাকায় ঘটে। সে তুলনায় বেলজিয়াম বা ফ্রান্সে সংঘটিত যে কোনো হামলার খবরের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া অনেক সহজ।
যুক্তরাষ্ট্র গত ২১ মার্চ উত্তর ইরাকে তাদের বিশেষ বাহিনীর গোপন ঘাঁটি ফায়ারবেস বেলের ওপর আইএসের হামলার কথা প্রচার করেনি। যেমন তারা প্রচার করেনি দু’দিন আগে এক হামলায় মার্কিন মেরিন লুই কার্ডিন নিহত হওয়ার কথা। যখন এ ঘটনার বিশদ তথ্য পাওয়া গেল তখনো পাশ্চাত্য সংবাদ মাধ্যমে তার কমই প্রকাশ দেখা গেল।
আইএস ওই মার্কিন ঘাঁটিটি খুঁজে পায় এবং বুঝতে পারে যে দূর থেকে রকেটের সাহায্যে তারা সেখানে হামলা চালাতে পারবে। প্রথম হামলা এত সফল হয় যে দু’দিন পর তারা ফিরে আসে ও আবার হামলা চালায়।
রুশ ও মার্কিন ঘাঁটিতে আইএস সম্ভত গ্রাড রকেট দিয়ে হামলা চালায়। এগুলো জিপ বা পিকআপ ট্রাকের উপর স্থাপন করা যায়। তারা এসেছে ও হামলা চালিয়ে সরে গেছে। হামলাকারীরা সহজে বহনযোগ্য রকেট লাঞ্চার ও কাঁধ থেকে নিক্ষেপযোগ্য বহুমুখী অস্ত্রও (এসএমএডব্লিউ) ব্যবহার করে।
আইএসের হামলার তালিকায় রাশিয়া এখন এক নম্বরে রয়েছে। এটা প্রথম দেখা যায় মিসরে রুশ পর্যটকবাহী বিমান ভূপাতিত করার ঘটনায়। এতে ২২৪ জন নিহত হয়। নিরীহ দেখতে সোডা পানীয়ের মধ্যে তা স্থাপন করা হয়েছিল ও বিমানে রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনায় রাশিয়া চুপ থাকবে, তা বিস্ময়কর নয়। আগেও এ রকম দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু এখন রাশিয়ার দরকার যুক্তরাষ্ট্রের মতই আইএসকে তাদের ঘাঁটির কাছাকাছি এসে গুলি করা প্রতিহত করা।
আইএস যে এত দেরি করল তা কিছুটা বিস্ময়কর। তারা সিরিয়া ও ইরাকে তাদের কর্মকান্ড, তাদের নগর ও শহরগুলোর উপর রাশিয়ার আগ্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করছে।
আফগানিস্তানের কথা মনে করা যাক। সেখানে রাশিয়া অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল। কিন্তু শক্তিশালী অস্ত্র ছোট ছোট হামলার মোকাবেলার উপযুক্ত ছিল না। তারা ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল এ কারণে যে মার্কিন সমর্থিত মুজাহিদরা সোভিয়েত সৈন্যদের কলজেয় কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল।
মস্কো বুঝতে পারছে যে তারা ঘরেও বিশ্বব্যাপী আক্রমণের লক্ষ্য, বিশেষ করে সিরিয়া ও ইরাকে। সে কারণেই কয়েক মাস আগে তারা আক্রমণমুখী অবস্থান পাল্টায় এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা করে যে তাদের সৈন্যরা সিরিয়া ত্যাগ করছে।
তবে রাশিয়া আরেকটি বিপজ্জনক সত্য জানে যে আইএস যেভাবে হামলা চালিয়েছে, আবারও তাদের সে রকম হামলা চালাতে দেয়া যায় না।
সম্পূর্ণ সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ
বাশারের জন্য দুঃস্বপ্ন
আই বি টাইমস জানায়, সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়ার প্রকাশ্য অংশগ্রহণ, ইরানি সৈন্য, হেজবুল্লাহ মিলিশিয়া ও আফগান ভাড়াটে যোদ্ধারা বাশারের পক্ষে লড়াই করার পরও ইসলামিক স্টেট (আইএস) এখনো মস্কো ও বাশার সরকারের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক শত্রু হিসেবে বিদ্যমান।
বিশ্লেষকদের মতে, বাশারের প্রাণকেন্দ্র প্রদেশগুলোতে এ ধরনের সমন্বিত হামলা যে ভয়ংকর বার্তা দিচ্ছে তা হচ্ছে গত মার্চে মধ্য সিরিয়ায় পালমিরা হারানো এবং ইরাকের ফাল্লুজা পুনর্দখলের হামলার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও আইএস বাশার প্রশাসনের কেন্দ্রে আঘাত হানতে পারে।
তারা আরো বলেন, রাশিয়া হাজার হাজার বোমা ফেলে এবং ইরানি, হেজবুল্লাহ মিলিশিয়া ও আফগান ভাড়াটে যোদ্ধারা সম্মিলিত ভাবে লড়াই করেও আইএসের বিরুদ্ধে তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য লাভ করতে পারেনি।
এখন আইএসের এসব হামলা আবার রুশ হস্তক্ষেপ ত্বরান্বিত করছে। তা এ কারণে যে বাশার সরকার ও সিরিয়ার সামরিক বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাতেও অবশিষ্ট সিরীয় জনগণকে রক্ষা করতে পারছে না।
তবে প্রেসিডেন্ট বাশার তার বাগাড়ম্বর অব্যাহত রেখেছেন। বাস্তব পরিস্থিতি হচ্ছে, তার সামরিক বাহিনী এখন বিদেশী বাহিনীর উপর নির্ভরশীল, আর তার ক্ষমতায় বহাল থাকা নির্ভর করছে রাশিয়া ও ইরানের সমর্থনের ওপর।
বাস্তব পরিস্থিতি থেকে এটা পরিষ্কার যে, সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা, দামেস্কের কাছ থেকে বিদ্রোহীদের হটিয়ে দেয়া এবং হোমস থেকে ভূমধ্য সাগর পর্যন্ত যোগাযোগ রক্ষা করাটাই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় কাজ। সমগ্র সিরিয়ার কিংবা অধিকাংশ অংশের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় ফিরে পাওয়া বাশারের জন্য দুঃস্বপ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।