Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘রোহিঙ্গাদের থেকেও আমরা অবহেলিত নিজ দেশে!’

ঈদুল ফিতরে বিল, বেতন বোনাস নিয়ে উৎকন্ঠায় শ্রমিকরা

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৯, ৪:৪২ পিএম

নিজের দেশে আজ আমরা পরবাসী। ঘাম ঝরিয়ে দিনের পর দিন কাজ করে আজ বেতন না পেয়ে না খেয়ে মরতে হচ্ছে জন্মভূমিতে। আর রোহিঙ্গরা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে বসে বসে খাচ্ছে। আর আমরা নিজেরে দেশে না খেয়ে মরছি। আমরা পাটকল শ্রমিকরা কি এতটাই অবহেলিত।
দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করেও কোন টাকা পাচ্ছি না অথচ টিভিতে দেখছি শমী কাওসার নামের একজন অভিনেত্রী ৬০ লক্ষ টাকার সরকারী অনুদান পাচ্ছে ছবি করার জন্য। তাহলে আমাদের জীবনের চেয়ে তাদের ছবি’র মূল্য অনেক বেশি।
অভিনেত্রীরা সারা জীবন উপার্জন করে ব্যাংক ব্যালেন্স করে রাখে আর চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাদের ১০/২০ লাখ টাকা দিচ্ছে। আর চিকিৎসাতো দূরে থাক আমাদের কষ্টের প্রাপ্য বেতনের অভাবে না খেয়ে পরিবার নিয়ে রাজপথে মরতে হচ্ছে। এ কেমন বিচার, আমরা কি তাহরে এ দেশের নাগরিক নই?
রাজপথে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে গেলে পাটকল শ্রমিক আব্বাস উদ্দিন, ফোরকান শেখ ও মিন্টু মোল্লা চোখের জল ফেলে এভাবে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকদের।
আর কত আন্দোলন কর্মসুচি করলে তাদের শ্রমের মজুরি পরিশোধ করবে বিজেএমসি। অব্যাহত আন্দোলনে এবার শিল্প এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চরম উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। বিল না পেয়ে এবং বিজেএমসির নিরব ভুমিকায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা পর্যক্রমে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে।
শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই, পেটে ভাত নেই, বকেয়া মজুরির পাশাপাশি সমাগত ঈদুল ফিতরে বোনাস পাবে কি না এমন ভাবনা বয়ে বেড়াচ্ছে শ্রমিকরা। ফলে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে আর এ কারণে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা করছে শিল্পাঞ্চলবাসী।
মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক কলোনিতে। কোনোভাবেই পরিবারের ভরণপোষণ মেটাতে পারছেন না সরকারি পাটকলের শ্রমিকরা। ঠিকমতো সন্তানদের মুখে আহার তুলে দিতে না পারার কষ্ট ছাপিয়ে তাদের পড়ালেখা নিয়ে চিন্তিত শ্রমিক পরিবারগুলো।
বিল না পেয়ে এবং বিজেএমসির নীরব ভূমিকায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা পর্যায়ক্রমে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে। শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই, পেটে ভাত নেই, বকেয়া মজুরির পাশাপাশি সমাগত ঈদুল ফিতরে বোনাস পাবে কিনা এমন ভাবনা ও দুশ্চিন্তায় রয়েছে শ্রমিকরা। শ্রমিকদের ১০ থেকে ১৩ সপ্তাহের মজুরী, কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ৪ মাসের বেতন, জাতীয় মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ৯ দফা দাবিতে গত ৫ই মে মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলনে নামেন খুলনা-যশোরের ৯টি পাটকলের প্রায় ৩৩ হাজার শ্রমিক।
বৃহস্পতিবার টানা ১১ দিনের শ্রমিক আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চল। এ সময় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা সড়কের বিভিন্নস্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
টানা ১১ দিন মিলের চাকা বন্ধ, ৭ দিন সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, সড়কের উপর অবস্থান, টায়ারে আগুন জ¦ালিয়ে বিক্ষোভ, রোজাদার শ্রমিকরা সড়কের উপর নামায আদায় এবং ইফতারি করছে। পাটকল শ্রমিকলীগ ও সিবিএ, নন-সিবিএ নেতারা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা চেয়ে এনে চিড়া, গুড়, মুড়ি, শরবত দিচ্ছে রোজাদার শ্রমিকদের।
খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান জানান, শ্রমিকদের বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। বিষয়টি তিনি নিজেও বোঝেন। এজন্যই তিনি তার দায়িত্বের বাইরে গিয়েও অনেক সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী স¤প্রতি বিদেশ সফরে যাবার আগে বেগম মন্নুজান সুফিয়ান তার সাথে দেখা করার সময় পাটকল শ্রমিকদের আড়াইশ’ কোটি টাকা দেয়ার কথাও বলেন। অর্থাৎ যখন একটি সমাধানের দিকে যাচ্ছিল তখন আন্দোলন করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল।
এদিকে আন্দোলন আরো জোরদার এবং পাট শিল্পকে রক্ষা করতে ৯ মিলের শ্রমিকদের নিয়ে যুব পাট শিল্প রক্ষা কমিটি গঠন করেছে। প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মোঃ নুর ইসলামকে আহবায়ক ও জেজেআই জুট মিলের শমসের আলমকে যুগ্ন আহবায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়েছ। কমিটর অন্যান্য সদস্যরা হলেন অলিয়ার রহমান, মানিক পাভেজ, আজগর মোল্যা, মোঃ শাজাহান, আঃ রাজ্জাক, শফিকুল ইসলাম, মনির হোসেন, মোঃ রাশেদ, মনোয়ার হোসেন, আঃ রাজ্জাক, মোঃ ইউনুস, মোফাজ্জেল হোসেন, ফজর আলী, খায়র”ল মল্লিক, মোঃ পিপলু, নাজমুল, সাব্বির, নান্নু, ইসমাইল। এ যুব কমিটি ৯ দফা দাবির পাশাপাশি তাদেরও ৬ দফা বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন বলে জানান যুব কমিটির আহবায়ক মোঃ নুর ইসলাম।
শ্রমিক নেতারা জানান, রমজান মাসে ইফতারি ও সেহেরি খাওয়ার টাকা নেই শ্রমিকদের হাতে। পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে আছেন শ্রমিকরা। শ্রমিক সন্তানরা স্কুল-কলেজের ফি দিতে পরছেনা। সন্তানদের পড়া লেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অতি মানবেতর জীবন যাপন করছে শ্রমিকসহ তাদের পরিবার।
প্রতিবাদ সভায় শ্রমিক নেতারা বলেন এতদিন স্বেচ্ছায় শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে অবরোধ কর্মসুচি পালন করেছে। এখন থেকে পাটকল শ্রমিকলীগ ও সিবিএ, নন-সিবিএর ডাকে আন্দোলন কর্মসুচি চলবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রমিক বিক্ষোভ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ