Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভেঙে পড়ল হোয়াটসঅ্যাপের সুরক্ষা বলয়, নেপথ্যে ইজরায়েল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৯, ৭:১৭ পিএম

আপনার অজান্তেই আপনার মোবাইল ফোন থেকে প্রতি মুহূর্তে তথ্য চুরি করছে কেউ। আপনার ফোনের কথা, ক্যামেরায় তোলা ছবি, লোকেশন, সবই মুহূর্তের মধ্যে চলে যাচ্ছে অন্য কারও কাছে। এমনকি, হোয়াটসঅ্যাপের সমস্ত কথোপকথন, শেয়ার করা ছবি, ভিডিয়ো-অডিয়ো, সবই বেহাত হয়ে যাচ্ছে মূহুর্তে। সুরক্ষা বলয় ভেঙে এই ‘সফটওয়্যার’-এর ঢুকে পড়ার ঘটনা স্বীকার করেছেন হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। এর পরই সারা পৃথিবীর ১৫০ কোটি হোয়াটসঅ্যাপ ইউজারকে অ্যাপটি ‘আপডেট’ করার অনুরোধ করেছে তারা। পুরো ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠছে একটি ইজরায়েলি সংস্থার দিকে, যারা আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় পরিচিত ‘সাইবার অস্ত্রের ডিলার’ হিসেবে।

হোয়াটসঅ্যাপের সুরক্ষা বলয় ভাঙতে ব্যবহার করা হয়েছিল এই অ্যাপের ‘ভয়েস কলিং’ ফিচার। কোনও একটি নির্দিষ্ট মোবাইল সেটে ‘ভয়েস কল’ করে এই সফটওয়্যার ‘ইনস্টল’ করে দিচ্ছিল হ্যাকাররা। কল না ধরলেও ‘ইনস্টল’ হয়ে যাচ্ছিল এই নজরদারি সফটওয়্যার। এমনকি, তা উধাও হয়ে যেত মোবাইলের ‘কল লিস্ট’ থেকেও। এর পরই ওই নির্দিষ্ট মোবাইল থেকে সমস্ত তথ্য পাচার শুরু করে দিত সফটওয়্যারটি।

এই মাসের শুরুতে বিষয়টি জানার পরই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে সঙ্গেই আক্রান্ত হওয়ার খবর তারা জানায় মার্কিন আইন মন্ত্রণালয় এবং কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থাকে। একই সঙ্গে এই ‘নজরদারি সফটওয়্যার’-এর হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়াও শুরু করে তারা। শেষ পর্যন্ত গতকাল তারা ইউজারদের অ্যাপটি ‘আপডেট’ করার অনুরোধ জানিয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপের পক্ষ জানানো হয়েছে, ‘আমাদের মনে হয়, এই হামলার পিছনে আছে কোনও বেসরকারি সংস্থা, যাদের বিভিন্ন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।’ যদিও পৃথিবীর কোন অঞ্চলের কতজন ইউজারের কী তথ্য চুরি করা হয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।

পুরো ঘটনার পিছনে আছে ইজরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থা ‘এনএসও গ্রুপ’, যাদের এক সময় সারা দুনিয়া চিনত ‘সাইবার অস্ত্রের ডিলার’ হিসেবে, এই সংস্থাই বানিয়েছিল কুখ্যাত ‘পেগাসাস’ সফটওয়্যার, যা যে কোনও মোবাইল ফোন থেকে মাইক্রোফোন, ক্যামেরা আর আপনার অবস্থানের তথ্য চুরি করে নিতে সক্ষম। পুরো ঘটনার পর বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, ‘সন্ত্রাস ও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’ একই সঙ্গে তাদের দাবি, ‘আমাদের প্রযুক্তি কোনও বেসরকারি সংস্থা ব্যবহার করতে পারে না। আমরা শুধু বিভিন্ন দেশের সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করি।’

এর আগে অ্যাপলের দুর্ভেদ্য সুরক্ষা বলয়ও ভেঙে ফেলেছিল ইজরায়েলি সাইবার হ্যাকারদের এই গোপন সংস্থা। শোনা যায়, ইজরায়েলের তেল আভিভ শহর থেকে মূল কর্মকাণ্ড চালালেও কোম্পানি হিসেবে তা নথিভুক্ত মার্কিন মুলুকে। বিভিন্ন দেশকে গোপনে ‘সাইবার অস্ত্র’ সরবরাহ করার অভিযোগও আছে এই দলের বিরুদ্ধে। এই সাইবার অস্ত্রের মাধ্যমে কোনও শত্রু দেশের সমস্ত পরিকাঠামো ধ্বংস করে দিতে পারে ইজরায়েলের এই সাইবার হ্যাকাররা। বিভিন্ন সময় তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে অ্যামনেস্টি সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও। আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, এই দলের পিছনে রয়েছে ইজরায়েলি সেনার হাত। কয়েক বছর আগে ‘স্টাক্সনেট’ ভাইরাস দিয়ে সাইবার হামলা চালিয়ে ইরানের পরিকাঠামো ধ্বংস করতে অনেকটাই সফল হয়েছিল তারা। সূত্র: ফিনান্সিয়াল টাইমস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ