মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইস্টার সানডের ভয়ানক সন্ত্রাসী হামলায় ২৫৩ জন প্রাণহানি ও ৫০০ জনের বেশি আহত হওয়ার ঘটনায় পাল্টে গেছে শ্রীলঙ্কান মুসলিম ও বহির্বিশ্বে থাকা তাদের ভাই-বোনদের জীবন।
ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং একটি অপেক্ষাকৃত ছোট চরমপন্থী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে। একজন ব্রিটিশ শ্রীলঙ্কান মুসলিম হিসাবে আমি এই দুঃখজনক ঘটনার শিকারদের সাথে একতাবদ্ধ এবং অপরাধীদের ধরতে চাই। তারা বিভিন্ন স¤প্রদায়ের জনগণের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিসহ সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী। এই চরমপন্থীদের কর্ম ইসলামের শিক্ষার বিরোধী। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা শান্তি ও ঐক্যের প্রচার করে। প্রকৃতপক্ষে, ইসলাম খ্রিস্টান এবং তাদের উপাসনালয়, তাদের জায়গা রক্ষার আহŸান জানায়। বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা এই হামলার গভীর নিন্দা এবং সমগ্র শ্রীলঙ্কান স¤প্রদায়ের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে।
কিন্তু ইস্টার সানডে হামলার ঘটনার নিন্দা প্রকাশ এবং শ্রীলঙ্কার জনগণের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ সত্তে¡ও আক্রমণের কয়েক সপ্তাহ পর শ্রীলঙ্কার অনেক মুসলমান এখন তাদের ঘরের বাইরে বেরুতে ভয় পাচ্ছেন।
হামলার ভয়ে শ্রীলঙ্কায় আমার পরিবার গত রোববার থেকে বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। আমার চাচাতো ভাইয়েরা কাজে বের হয়নি, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠায়নি এবং অন্য পরিবারের সদস্যরা তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। ইস্টার সানডে আক্রমণের তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না এবং হামলার দৃঢ়ভাবে নিন্দা জানানো হয়েছিল।
অনেক মুসলিম ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানে প্রতিশোধে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কান মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ হওয়ার ভয় পান। আমার নিজের চাচা, যিনি তার দোকানটি সাময়িকভাবে খোলা রেখেছিলেন, তাকে মুসলিম বিরোধী মনোভাবের এক সদস্যের কাছে ডেকে আনা হয়েছিল। তারপর থেকে এটি বন্ধ করা হয়েছে এবং তাকে তার বাড়িতে অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
এই প্রথমবারের মতো মসজিদ শুক্রবার জুমা নামাজের জন্য বন্ধ ছিল এবং মুসলমানদের উপস্থিতিকে নিরাপদ মনে করা হয়নি। লোক সমাগম বেশি হলেও সন্ত্রাসীদেরে ভয়ে মুসলিমদের মসজিদ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
অনেক শ্রীলঙ্কানদের জন্য হতাশা এই যে, শ্রীলঙ্কার শীর্ষ ইসলামিক সংস্থা অল সিলেন জামিয়াতুল উলামা (এজেসিইউ) ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এনটিজে সম্পর্কে সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করেছিল এবং দলের সদস্যদের গ্রেফতারের আহŸান জানিয়েছিল। তাদের আহŸানকে এখনো আমলে নেয়া হয়নি।
শ্রীলঙ্কার সংসদে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের সভায় বক্তব্যে এসিজেইউ’র সভাপতি মুফতি রিজভী বলেন, শ্রীলঙ্কার আইএস সন্ত্রাসীদের সম্ভাব্য লিঙ্ক সম্পর্কে তিনি সব তথ্য জমা দিয়েছেন এবং বলেন, ‘আমি তাদের গ্রেফতার করতে বলেছিলাম। কিন্তু, তারা আমাকে বলেছিল যে, তারা তাদের পুনর্বাসনের জন্য নিয়ে যাবে, কিন্তু কিছুই করা হয়নি। আমি প্রথম ব্যক্তি যে ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার আইএস সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছিলাম।’
যদি এটা সত্য হয়, তবে কেন শ্রীলঙ্কান গোয়েন্দা সংস্থার মনোযোগ আকর্ষণ করা হলেও সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হয়নি? এসিজেইউ কর্তৃপক্ষ এই হুমকির কয়েকবার কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেয়, তবুও কেন এই গোষ্ঠীর ব্যাপারে কিছুই করা হয়নি? গির্জার সন্দেহভাজন হামলার বিষয়েও একটি সতর্কবার্তা পুলিশকে পাঠানো হয়েছিল। মুসলমানরা যারা এই গোষ্ঠীর কথা শুনেছিল তারা তাদের জানিয়েছিল এবং বলেছিল যে, ইসলামের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই এবং তারা স¤প্রদায়ের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টিতে ছিল দৃঢ়সঙ্কল্প। অনেক প্রশ্নই উত্তরহীন, যেমন কর্তৃপক্ষ তাদের সরবরাহকৃত তথ্য সম্পর্কে কাজ করেছিল কিনা, ট্র্যাজেডিটি আটকানো যেত কিনা।
শ্রীলঙ্কা গত সপ্তাহে সব মুখ হিজাব নিষিদ্ধ করার আহŸান জানিয়েছে। নিরাপত্তাজনিত প্রয়োজনে মুখোশ অপসারণের জন্য এসিজেইউ সমস্ত মুসলিম নারীর কাছে একই পরামর্শ জারি করেছে। কিন্তু মুসলিমরা অবশ্যই মুসলিম হওয়ার জন্য আরও বেশি নজরদারিতে থাকবে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুসলিম-বিরোধী মনোভাবের উদ্বেগ রয়েছে।
কলম্বো কার্ডিনাল ম্যালকম রঞ্জিতের আর্চবিশপের মতো নেতারা শান্তি ও স¤প্রীতির আহŸান জানিয়েছেন। বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টান ও মুসলমানরা রক্ত দান করেছে, শান্তির আহŸান জানিয়ে পথে র্যালি করেছে এবং এবং কিছু শ্রীলঙ্কান মুসলমান খ্রিস্টানদের তাদের মসজিদগুলোতে প্রার্থনা করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে, ‘আমরা চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে’ লেখা ব্যানার প্রদর্শন করেছে।
এগুলি এমন ঘটনা যা এই ধরনের বিয়োগান্তক ঘটনায় আমাদের স¤প্রদায়ের জন্য প্রয়োজন। সন্ত্রাসবাদের কোন ধর্ম নেই এবং কাউকে সন্ত্রাস করার অনুমতি দেয়া উচিত নয়। এখন শান্তি ও ঐক্যের পথে একত্রিত হওয়ার সময়, যাতে নিশ্চিত হয় যে, আমরা সন্ত্রাসীদের শ্রীলঙ্কার শান্তিপূর্ণ স¤প্রদায়ের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির জন্য সফল হতে দিতে চাই না।
সূত্র : আরব নিউজ। (শ্রীলঙ্কা বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক তাসনিম নাজির-এর প্রতিবেদন।)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।