পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতকে বলা হয় বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ। দেশটিতে ভোটার প্রায় ৯০ কোটি। ৭ ধাপে ভোট গ্রহণের এই সাধারণ নির্বাচনে গতকাল ১২ মে হয়েছে ষষ্ঠ ধাপে ভোট। চলতি বছরের ১১ এপ্রিল শুরু হওয়া এই নির্বাচনের শেষ দফা অনুষ্ঠিত হবে ১৯ মে। ভোট গণনা ২৩ মে। ভারতের জনগণ এই নির্বাচন ‘উৎসব’ হিসেবে নিলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে তোড়জোড়। কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলো।
বাংলাদেশেও রাজনৈতিক দল তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ভারতের এই নির্বাচন নিয়ে অস্থিরতা কম নয়। এবারের নির্বাচনকে দেখা হচ্ছে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের নির্বাচন হিসেবে। কে হবেন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী, এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার যেন শেষ নেই।
বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত। জনগণ ওই নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। এ জন্য ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মানুষের মধ্যে তুমুল আগ্রহের সৃষ্টি করে। নির্বাচনকে ‘উৎসব’ হিসেবে নেয়া জাতি ঘুমিয়ে থাকতেই নির্বাচনের আগের রাতে ভোটের ফলাফল নির্ধারিত হওয়ায় সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
রাতে ব্যালটে সিল মারার পরিণতি দেখা গেছে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে মানুষের ‘বিরত থাকা’র প্রতিবাদের মধ্যে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহের শেষ নেই। এমনকি বাংলাদেশের একজন সিনেমার নায়ক ভারতের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় তো লঙ্কাকান্ড ঘটে যায়।
ভারতের লোকসভা (নিম্নকক্ষ) নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো এখন চরম অস্থিরতায়। বড় দলগুলো বিশেষ করে যারা দিল্লির সাউথ ব্লককে খুশি রেখে ঢাকায় রাজনীতি চর্চায় অভ্যস্ত; তাদের মধ্যে আগামীতে নির্বাচনে জিতে কোন দল ভারতে সরকার গঠন করবেন, কে হবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে টেনশনে আছেন।
ক্ষমতা-কেন্দ্রিক রাজনীতি করায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি তথা বড় দুই দলের জন্যই ভারতের নির্বাচনী ফলাফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দলগুলো মনে করে জনগণ নয়, বাংলাদেশের নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণে দিল্লিই নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। সেজন্য দিল্লিকে খুশি করতে দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা যায়।
তবে বাস্তবতা হলো, যেকোনো কারণেই হোক বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে অধিক নির্ভরশীল মনে করে ভারত। দিল্লিতে যারাই সরকার গঠন করুক না কেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে যা চায় তাই পেয়ে যায়। মোদি এটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অতি পুরনো। কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়েছেন।
ভারত যা চেয়েছে তাই পেয়েছে- এই নীতিতে দুই দেশের সম্পর্ক এখন অন্যরমক উচ্চতায়। তিস্তার পানির মুলো ঝুলিয়ে গত কয়েক বছরে ট্রানজিট, সমুদ্রবন্দরসহ দিল্লি যা চেয়েছে তাই দিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে ভারতে যারাই ক্ষমতায় আসুক আওয়ামী লীগকে আপন করে নেবে। দলটিকে তেমন সমস্যায় পড়তে হবে না। তারপরও ভারতের নির্বাচনে কারা ক্ষমতায় আসেন তা নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেদের স্ট্র্যাটেজিক হিসাব কষছে। আওয়ামী লীগের অনুগত কিছু বুদ্ধিজীবীও কাজ করছেন। কিন্তু মাঠের বিরোধী দল খ্যাত বিএনপি?
ইসলামী মূল্যবোধের চেতনা চাপা দিয়ে হঠাৎ ‘দিল্লি তোষণ’ কৌশল গ্রহণ করে দলটি নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। দিল্লির সহায়তায় ক্ষমতায় যাওয়ার ‘বাসনা’য় দলটি দিল্লির সাউথ ব্লকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার নামে হয়েছে বিজেপি মুখী। জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধকে সিকেয় তুলে বিজেপি ‘তোষণ’ করছে কয়েক বছর ধরে। বিজেপি সভাপতি ‘অমিত শাহের সঙ্গে টেলি সংলাপ’ বিতর্ক এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভারতীয় পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে সেটা স্পষ্ট হয়েছে।
দিল্লির সাউথ ব্লককে খুশি করার নামে ভারতের জনগণ এবং ভারত সরকারের সঙ্গে নয়; বরং বিজেপির নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছে বিএনপি। এখন যদি নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে কংগ্রেস দিল্লির মসনদে বসে তাহলে কি হবে বিএনপির দিল্লি নীতির?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী প্রচারণা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। যদি বিজেপি আবার ক্ষমতায় আসে, তাদের হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি আরো বেড়ে যাবে। আসাম বা উত্তর-পূর্ব ভারতে যে মুসলিম খেদাও পদক্ষেপগুলো তারা নিয়েছে, সেটা আরো বাড়বে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কারণে ভারতের সরকার পরিচালনায় কোন দল আসছে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক ইমতিয়াজের এই মন্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে ২৩ মে। পশ্চিমা দেশগুলোয় নির্বাচনে ‘ভোটকেন্দ্র ফেরত’ ভোটারদের মতামতকে নিয়ে সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে আন্দাজ করা গেলেও ভারতে সে ধরনের প্রক্রিয়া নেই। ভারতে কোন দল ক্ষমতায় আসছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। বিজেপি বিজয়ী হলে নরেন্দ্র মোদি আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন যেমন আলোচনা আছে; তেমনি কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, উত্তর প্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী, পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ প্রায় অর্ধডজন নেতার নাম আলোচনা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।
এ ছাড়াও দিল্লিতে সরকার গঠনে উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও যে দক্ষিণ ভারতের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেই কেরালা থেকেও কোনো নেতা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন এমন আলোচনাও রয়েছে। কারণ ভারতে ছোট দলের নেতা হয়েও ইন্দর কুমার গুজরাল এবং এইচ ডি দেব গৌড়ার মতো নেতারা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
ভারতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, বাংলাদেশকে নিজের জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা এবং বাণিজ্য ঘাটতির মতো অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধানে নজর দিতে হবে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি যদি কোনো কারণে ক্ষমতায় না আসতে পারে তাহলে বিএনপির দিল্লি সম্পর্কের কি হবে? দেশে যেমন ‘ভাড়া করা নেতার নেতৃত্বে’ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়েছে; ভারতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে দিল্লি সম্পর্ক ইস্যুতেও দলটিকে পড়তে হবে বেহাল দশায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।