Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পায়রার ডানায় সম্ভাবনা

২০২১ সালের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় বাংলাদেশের

মো. জাকির হোসেন, পটুয়াখালী থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রাকে পূর্ণাঙ্গরুপে চালু করার মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলছে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম। সুষম উন্ন্য়নের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক সময়ের অবহেলিত সাগর পাড়ের জেলা পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরকে ঘিরে চলছে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। পায়রার ডানায় রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। যা বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যেই পায়রার মাধ্যমে সেই স্বপ্ন ডানা মেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র উপকূল রয়েছে। এ সুদীর্ঘ উপকূলবর্তী এলাকায় অসংখ্য চ্যানেল রয়েছে। এ চ্যানেলগুলোকে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করার লক্ষ্যে দেশের দক্ষিণ মধ্যবর্তী অঞ্চলে সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা পূর্বে নেয়া হয়নি।এ অঞ্চলে সমুদ্র বন্দর গড়ে উঠলে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটবে, অর্থনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে, অবহেলিত এ অঞ্চলের জনগণের জীবন যাত্রার সার্বিক পরিবর্তন ঘটবে। তাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পূর্বের সময়কালে ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট ১০ বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা নিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাবনাবাদ চ্যানেলে তৃতীয় সমুদ্র বন্দর- পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ অর্ডিন্যান্স অনুমোদন দেন।
পরবর্তিতে পায়রা বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে পায়রা বন্দর প্রকল্পটিকে ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালে পায়রা সমুদ্রবন্দর উন্নয়নের জন্য ১৯ টি কম্পোনেন্ট সম্পন্ন একটি কনসেপচুয়াল মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুত করা হয়। যার ১২ টি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ, জিটুজি অর্থায়ন এবং সরকারি বেসরকারী অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। অপর ৭টি কম্পোনেন্ট বিভন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্পন্নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ইতোমধ্যে শুরুর তিন বছরের মধ্যেই ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাসের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে পায়রা বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ যাবত ৩৩টি জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে পায়রায় পণ্য খালাস করছে। যা থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৫০ কোটি টাকার উপরে। বন্দর কর্তৃপক্ষ আয় করেছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, তিন পর্বে বন্দর এ নির্মাণ পরিকল্পনায় প্রথম ধাপের ১৯ পর্বের প্রথম পর্যায়ে খরচ হয়েছে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। নির্মিত হয়েছে নিরপত্তা ভবন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, এক হাজার কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, ভিএইচএফ টাওয়ার, প্রশাসনিক ভবন, ওয়্যার হাউজ, মসজিদ, মাল্টিপারপাস ভবন, স্টাফ ডরমেটরি, সার্ভিস জেটি ও সংযোগ নদীর ড্রেজিং ও মার্কিং (বয়া স্থাপন)। নির্মাণ কাজের শেষ পর্যার রয়েছে পাইলট ভেসেল, হেভিডিউটি স্পিড বোট, টাগ বোট, বয়া লেয়িং ভেসেল এবং জরিপ বোট। এ ছাড়াও জাতীয় মহাসড়কের সাথে স্থল সংযোগের চার লেনবিশিষ্ট শেখ হাসিনা মহাসড়কের কাজও শেষ পর্যায় রয়েছে।
পায়রা বন্দর নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্থ জনগণের পুর্নবাসনের জন্য প্রায় ৬ হাজার ৫শ’ একর জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ২ হাজার ৩৭৩ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকীটাও অধিগ্রহণের পথে। অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার ৫শ’ পরিবারের জন্য আনুষাঙ্গিক সুবিধাসহ গৃহ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ৪ হাজার ২শ’ জন নারী-পুরুষকে আত্মনির্ভরশীল করার জন্য ৩৫ টি কোর্সে প্রশিক্ষণের কর্মসূচী চলমান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পায়রা বন্দর নির্মাণে স্বল্পমেয়াদী কার্যক্রম শেষ। এখন চলছে মধ্যমেয়াদী কার্যক্রম। মধ্যমেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পায়রা বন্দর হতে খালাসকৃত মালামাল দেশের অন্যত্র পরিবহনের লক্ষ্যে রাবনাবাদ চ্যানেল সংলগ্ন এলাকার সাথে সংযোগ সড়ক, আন্ধার মানিক নদীর উপর সেতু ও ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটিসহ একটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এটিই হবে বন্দরের প্রথম টার্মিনাল। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে ৩হাজার ৯৮২ কোটি টাকার প্রস্তাব সম্বলিত পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের কাজের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ চলছে। প্রকল্পের স্থাপনাসমূহের ডিটেইল ড্রইং, ডিজাইন, ডকুমেন্টশন এবং প্রকল্প চলাকালীন টপ সুপারিভিশনের জন্য পরামর্শ সেবা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রাপ্ত প্রস্তাবসমূহ মূল্যায়ণপূর্র্বক প্রণীত খসড়া চুক্তি ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সিসিজিপির মাধ্যমে অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্পের মেয়াদ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ২০২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। টার্মিনালের কাজটি স¤পন্ন হলে বন্দরের অপারেশনাল কাজকর্ম আরও দ্রুত শুরু করা যাবে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মধ্যমেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে আরও তিনটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পিপিপি অর্থায়নে ক্যাপিটাল এ্যান্ড মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং এবং ড্রাই বাল্ক/কোল টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫মি. (চার্ট গভীরতা) এ উন্নীত করার লক্ষ্যে পায়রা বন্দরের মূল চ্যানেলে ‘ক্যাপিটাল এন্ড মেইনটেন্যান্স ডেজিং প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি জাতীয় অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বেলজিয়ামভিত্তিক আন্তর্জাতিক ডেজিং কোম্পানী জেন ডি নুলের সাথে পায়রা বন্দর কর্তপক্ষের ইতোমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৯৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এ ছাড়াও ভারত সরকারের লাইন অব ক্রেডিট-৩ এর আওতায় অভ্যন্তরীণ সংযোগ সড়ক ও ১২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটিসহ ১ টি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে ৫ হাজার ১৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পও একনেক সভায় উপস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদের শেষ কাল ধরা হয়েছে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পিপিপি অর্থায়নে ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের লক্ষ্যে ড্রাইবাল্ক/কোল টার্মিনাল নির্মাণ (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছর থেকে ২০২২ পর্যন্ত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়। বর্তমানে দরপত্রটি মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, মধ্য মেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ সরকাি রঅর্থায়নে রাবনাবাদে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ফাস্ট টার্মিনাল, পিপিপি অর্থায়নে ক্যাপিটাল এন্ড মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং, ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, এবং পিপিপি অর্থায়নে ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেটি ও ড্রাইবাল্ক/কোল্ড টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের মধ্যে একসাথেই শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে পায়রা বন্দর পূর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্র বন্দরের দিকে অনেক খানি এগিয়ে যাবে।
উল্লেখিত প্রকল্পগুলির কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যেই পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে পূর্ণাঙ্গ মানের বন্দর হিসেবে চালু করার পরিকল্পনা হাতে নিয়ে পূর্ণদ্যোমে কাজ করছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ।
এ দিকে পায়রাকে থার্ড জেনারেশন আধুনিক মানের বন্দর করার দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা মোতাবেক একটি পূর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীতব্য ডিটেইল মাস্টার প্ল্যান অনুসরণে আরও চারটি টার্মিনাল পিপিপি-জিটুজি অর্থায়নে ২০২৫ সালের মধ্যে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের। ২০২৫ সালের মধ্যে পায়রা বন্দর এ অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের গভীর সমুদ্র বন্দর করার পরিকল্পনায় এখন চলছে মধ্যমেয়াদী কার্যক্রম।
পায়রা বন্দরকে ঘিরে ইতোমধ্যে সরকার অর্থনৈতিক মহাপরিকল্পনা তৈরী করেছে। এ মহিপরিকল্পনা তৈরী করতে যুক্তরাজ্যভিক্তিক প্রতিষ্ঠান এইচ আর ওয়েলিংটন এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করছে সরকার। প্রস্তাবিত প্রকল্পে সবুজ বেষ্টনি তৈরী হবে উপকূলীয় এলাকায়। ইকোপাকের্র পাশাপাশি বন্যপ্রাণীর জন্য থাকবে অভায়রান্য। কয়লা টার্মিনাল থেকে ৬ হাজার ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প, থাকবে কন্টেইনার টার্মিনাল। তৈরি হবে জাহাজ নির্মাণ শিল্প বিশেষ রপ্তানী অঞ্চল। বন্দর সুবিধা কাজে লাগিয়ে এখানে তৈরী হবে তেল শোধানাগার, সার কারখানা এবং বিমান বন্দর। এখানে ৯টি বিদ্যুত কেন্দ্রে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উপাদন হবে। ইতোমধ্যে ১ হাজার একর জমির উপর ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বররের মধ্যেই জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুত যোগ করার পরিকল্পনায় কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, নৌ পথ, সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথে পায়রা বন্দরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ চালুর জন্য বাংলাদেশ রেলেওয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সমুদ্র বন্দরের ভূমিকা অপরিসসীম। বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ৯৫% সম্পন্ন হয়ে থাকে সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে। বর্তমানে এ অঞ্চলের ব্যস্ততম বন্দর হিসেবে পরিচিত চট্রগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির ৯২% সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রকৃতিগত ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এ বন্দরের সম্প্রসারণ সীমিত হয়ে আসছে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে আমদানি-রপ্তানি ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বন্দর সুবিধাদি বৃদ্ধি করা সময়ের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় প্রবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে, দেশের সমুদ্র বন্দর কার্যক্রমকে গতিশীল করতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নির্মিত হচ্ছে পায়রা সমুদ্র বন্দর। প্রতিবছর দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গার্মেন্টস রপ্তানি বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলারে রয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে সরকার তা ৫০ বিলিয়ন ডলার করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ ছাড়া সরকার বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করেছে। আগামী ৫ বছর পর যেহারে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে তাতে বিদ্যমান দুটি বন্দর দিয়ে সামলানো সম্ভব হবে না। পাশাপাশি চট্রগ্রাম বন্দরে ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে, সেখানে পায়রা রাবনাবাদ চ্যানেলে সাধারণভাবেই ৭ মিটার গভীরতা রয়েছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর মাধ্যমে এটাকে ১৪ দশমিক ৫ মিটার গভীরতা করা হবে। তাই যত দ্রুত পায়রা বন্দরকে পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে তোলে সম্ভব হবে তত দ্রুত এ অঞ্চলের আর্থসমাজিক ব্যবস্থার যেরকম উন্নয়ন ঘটবে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে পায়রা বন্দর।
এদিকে, সরকারের আরেকটি মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর সাথে পায়রা বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু করার জন্য চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এ ছাড়া পদ্মা রেল লিংক সরাসরি ঢাকার সাথে রেলপথ সংযুক্ত করবে। যার ফলে রাজধানীর সাথে পায়রা বন্দরের মালামাল খালাস অনেক সহজতর হয়ে যাবে।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পায়রা বন্দরের মেগা প্রকল্পকে সামনে রেখে দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর (রিভানাইন বিগ্রেডের) জন্য ৬শ’ একর, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ( নৌঘাঁটি) এর জন্য ১৯৩ দশমিক ৪৫ একর, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানী লিমিটেড ১ হাজার ৬৪ একর, রুরাল পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড ৯১৫ দশমিক ৭৪ একর,আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লিমিটেড ১হাজার একর, পেট্রোবাংলা ২শ’ একর, পেট্রোলিয়ামকর্পোরেশন ১হাজার একর, সেনাকল্যান সংস্থা ৭শ’ একর, নৌকল্যাণ সংস্থা ৬শ’ একর, বাংলাদেশ ইস্পাত প্রকৌশল কর্পোরেশন ১শ’ একর জমি অধিগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক্স এন্ড সোসিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. মকবুল হোসেন বলেন, এক সময়ের অবহেলিত দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর প্রতি বর্তমান সরকার যে নজর দিয়েছে সেটার মাধ্যমে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগ সৃষ্টি হবে। এটাই অর্থনীতির বড় সাফল্য। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই পরিবহন ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা আসছেন এ বন্দরকে ঘিরে নতুন ব্যবসায়ীক কর্মকান্ড শুরু করতে। এটা অর্থনীতির জন্য সুখবর। যত বেশী সংখ্যক লোক অর্থনীতির সাথে সংযুক্ত হবে ততই অর্থনীতির প্রসার ঘটবে। পাশাপাশি পায়রা বন্দরকে ঘিরে যে উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু হয়েছে তাতে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, পায়রা বন্দর আগামীতে আন্তর্জাতিক মানের গভীর সমুদ্র বন্দর হিসেবে যত তাড়াতাড়ি তার কর্মকান্ড শুরু করতে পারবে তত দ্রæতই আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারিত হবে। আর বৈদেশিক বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে আমাদের নিজস্ব অর্থনীতি মজবুত হবে। যা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতেতে একটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান, বিএন বলেন, বাংলাদেশের আগামী দিনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পায়রা বন্দর বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে পায়রা বন্দরকে ঘিরে অন্য অঞ্চলকে ছাড়িয়ে যাবে। কুয়াকাটা থেকে ঢাকা পর্যন্ত হবে সেন্ট্রাল জোন এবং এটাই হবে সবচেয়ে শক্তিশালী জোন। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলে কন্টেইনার জাহাজ, বাল্ক কেরিয়ারসহ ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্নের মাধ্যমে পায়রা সমুদ্র বন্দর ভবিষ্যতের গভীর সমুদ্র বন্দরের অগ্রযাত্রায় অনেকখানি এগিয়ে যাবে। এ লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর এম জাহাঙ্গীর আলম, এনইউপি, এনডিসি, পিএসসি, বিএন বলেন, বর্তমানে বন্দরে মধ্য মেয়াদী উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিন হাজার নয়শ’ বিরাশি কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা বন্দরের সংযোগ সড়ক, অন্ধারমানিক নদীর ওপড় সেতু, সাড়ে ছয় মিটার দীর্ঘ জেটিসহ একটি টার্মিনাল এবং পিপিপি অর্থায়নে ক্যাপিটাল এন্ড মেইনটিন্যান্স ড্রেজিং ও ড্রাই বাল্ক/কোল্ড টার্মিনালের কাজ চলছে। ভারতীয় ঋণ সহায়তায় মাল্টিপারপাস টার্মিনাল প্রকল্প ২০২১ সালের শেষে সমাপ্ত হলে পায়রা বন্দরের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি আরো জানান, বন্দরের মূল চ্যানেলের রাবনাবাদ পয়েন্টের গভীরতা সাড়ে দশ মিটারে উন্নীত করতে বেলজিয়ামভিত্তিক আর্ন্তজাতিক ড্রেজিং কোম্পানি ’জান ডি নুল’ কাজ শুরু করছে। (আগামীকাল পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব)



 

Show all comments
  • Ismail Hossain ১২ মে, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
    আমাদের অনেক সুবিদা হয়েছে কোন সরকার এত উন্নয়ন আমাদের বরিশালে আগে কখনো করে নায় 100% সত্যে
    Total Reply(0) Reply
  • Saydulmor Salin ১২ মে, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
    Its good job
    Total Reply(0) Reply
  • অপ্রত্যাশিত আগন্তুক ১২ মে, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
    জয় বাংলাদেশ।
    Total Reply(0) Reply
  • Delwar Hossain ১২ মে, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
    go ahead Bangladesh by leading our honorable MP Sheik Hasina.
    Total Reply(0) Reply
  • Joynal Abedin ১২ মে, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
    বোয়ালখালীবাসীর প্রাণের দাবি কালুরঘাটে নতুন সেতু চাই।
    Total Reply(0) Reply
  • Akhter Hossain Raju ১২ মে, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
    অনেক পরে হলেও এই বন্দরের মাধ্যমে "In Shaa Allah" অবহেলিত দক্ষিন অঞ্চলের বৈপলবিক পরিবর্তক আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • M A Rubel Hossain ১২ মে, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
    বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকে দেখিয়ে দিবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Sorwar Kajol ১২ মে, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
    মহেশখালীর গভীর সমুদ্র বন্দর দ্রুত বাস্তবায়ন চাই করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • MH Khan ১২ মে, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
    If pyara is developed as a deep sea port with all the facilities the fate of the people of south will not only improve but the country will also take off to economic emancipation.
    Total Reply(0) Reply
  • Mustafizur Rahman ১২ মে, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
    বাংলার ভাগ্যাকাশে আরও একটি মাইল ফলক সংযোজিত হলো, আরও একটি উন্নয়ন ইতিহাস। এখন ৩টি সমুদ্র বন্দর। দক্ষিনান্চল উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • bhuiyan ২০ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৪৬ পিএম says : 0
    পায়রা বন্দর অর্থনৈতিক হিসেবে লাভ জনক হবে না। কারণ অনবরত ড্রেজিং এর মাধ্যমে একটি বন্দরকে সচল রাখা অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক না। ড্রেজিং না করলে রাবনাবাদ চ্যনেলের গভীরতা মাত্র ৭ মিটার(সর্বোচ্চ) তারপরও পায়রা বন্দর হোক, কারন অবহেলিত দঃ অঞ্চলের উন্নয়ন এর জ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পায়রা

২৪ অক্টোবর, ২০২১
২৩ অক্টোবর, ২০২১
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ