Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জবানবন্দিতে ১২ আসামির যত তথ্য

নুসরাত হত্যা

ওমর ফারুক ও মো. আকতারুজ্জামান : | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার এক মাস পূর্ণ হলো গত শুক্রুবার। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১২ জন আসামি আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহামেদ ও মো. জাকির হোসাইনের আদালতে আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
জবানবন্দি দেয়া আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, তার সহযোগী নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের, জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল। এরা প্রত্যকেই নুসরাত হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। জবানবন্দিতে আসামিরা যেসব তথ্য দিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো।
নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম
১৪ এপ্রিল আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন নুসরাত হত্যা মামলার ২ ও ৩ নম্বর আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম। ওই দিন প্রায় ১০ ঘণ্টা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
পরে রাতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যাণ্ড অপারেশন) তাহেরুল হক চৌহান জনান, আসামিরা অপরাধ স্বীকার করেছেন। তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। নুর উদ্দিন ও শাহাদত হোসেন শামীম জেলখানা (সিরাজ উদ দৌলা) থেকে ণ্ডকুম পেয়েছেন বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন।
আবদুর রহিম ওরফে শরীফ
নুসরাত হত্যায় দায় স্বীকার করে ১৭ এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন আবদুর রহিম ওরফে শরীফ। পিবিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল জানান, মাদাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে ও পরামর্শে নুসরাতকে হত্যার জন্য গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানো হয়। এ জন্য ২৮ ও ৩০ মার্চ দুই দফা কারাগারে থাকা মাদরাসার অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন তারা। ১২ জনের এক সভায় হত্যার পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত ও দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। তার (রহিম) দায়িত্ব পড়ে মাদরাসার ফটকে।
হাফেজ আবদুল কাদের
নুসরাত হত্যায় দায় স্বীকার ১৮ এপ্রিল একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মামলার অন্যতম আসামি হাফেজ আবদুল কাদের। আদালতের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। ঘটনার দিন তিনি হত্যাকারীদের নিরাপত্তায় মাদরাসার গেট পাহারায় ছিলেন এবং পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে অন্যতম। পুলিশ জানায়, হাফেজ আব্দুল কাদের এ হত্যাকাণ্ডে নিজের সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছেন। তার রুমেই হত্যার পরিককল্পনা হয় বলে জবানবন্দিতে তিনি স্বীকার করেছেন।
উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পা
নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৯ এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ভাগনি (শ্যালিকার মেয়ে) উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পা। পিআইবি জানায়, সে নুসরাতকে তিনি নিচ থেকে ডেকে নেন এবং হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন।
কামরুন নাহার মনি ও জাবেদ হোসেন
২০ এপ্রিল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন কামরুন নাহার মনি ও জাবেদ হোসেন। আদালতে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। জবানবন্দিতে তারা জানান, নুসরাতকে ছাদে নিয়ে যাওয়ার পর শাহাদাত হোসেন শামীম ও নুর উদ্দিন তাকে মেঝেতে ফেলে দেন। এ সময় মনি তার বুক চেপে ধরেন ও জাবেদ হোসেন তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেন।
জোবায়ের আহমেদ
নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কথা স্বীকার করে ২১ এপ্রিল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন জোবায়ের আহামেদ। তিনি ঘটনার দিন কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেন এবং ম্যাচের (দিয়াশলাই) কাঠি জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা
নুসরাত হত্যার নির্দেশ দেন সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। ২৮ এপ্রিল রোববার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। পিআইবি জানায়, নুসতার হত্যার মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, জেলহাজত থেকে তিনি নুসরাতকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলে থাকা অবস্থায় নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়ার জন্য বলেন অধ্যক্ষ সিরাজ। কাজ না হলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে নির্দেশ দেন তিনি।
ইফতেখার হোসেন রানা ও এমরান হোসেন মামুন
নুসরাত হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ ও কিলিং মিশনে অংশ নেয়াদের নিরাপদে বের হয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন ইফতেখার হোসের রানা ও এমরান হোসেন মামুন। তারা নুসরাত হত্যার মূল পরিকল্পনায় ছিলেন বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা বলেন- নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনায় ৪ এপ্রিল হাফেজ আবদুল কাদেরের কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় তারা উপস্থিত ছিলেন।
মহিউদ্দিন শাকিল
নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সময় মাদসারার সাইক্লোন শেল্টারের সিঁড়ি পাহারার দায়িত্বে ছিলেন নুসরাতের সহপাঠী মহিউদ্দিন শাকিল। গত ৬ এপ্রিল মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের তৃতীয় তলার ছাদে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়ার সময় মহিউদ্দিন শাকিল সাইক্লোন শেল্টারের গেটে পাহারায় ছিলেন। এ সময় সেখানে অপর আলিম পরীক্ষার্থী মো. শামীমও তার সঙ্গে ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।



 

Show all comments
  • নিয়াজ ১২ মে, ২০১৯, ৪:৫২ পিএম says : 0
    হত্যাকান্ডের স্বীকারুক্তি সবাই করলো কিন্তু যৌন নির্যাতনের কোন স্বীকারুক্তি বা তদন্তের প্রয়োজন নাই? শুধুমাত্র নুসরাত হত্যার বিচার করলে হবে না। তাকে যৌন হেনস্থার বিচারও করতে হবে। একটার নিচে আরেকটা চাপা পড়ছে কেন?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নুসরাত হত্যা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ