Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের হুমকি ছাত্রলীগ নেতার

সিলেট ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ইন্টার্নী নারী ডাক্তারকে ‘তোর সাহস কত, লাশ ফেলে দিবো, ... বাইরে বের হও একবার, রেইপ করে ফেলবো, আমার পা ধরে তোকে মাফ চাওয়া লাগবে’ এমন ন্যাক্কারজনক হুমকির ঘটনায় আলোচনায় উঠে এসেছেন সিলেট দক্ষিণ সুরমা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সারোয়ার চৌধুরী।
ঘটনাটির বিবরণ নিজের ফেইসবুক আইডিতে তুলে ধরেছেন ওই নারী চিকিৎসক। সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। পরবর্তীতে উদ্ধত এ আচরণের প্রতিবাদে চিকিৎসকরা হাসপাতালের বাইরে এসে কর্মবিরতি পালন করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা কাজে যোগ দেয়। ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানা গেছে ওই শিক্ষানবিশ চিকিৎসক। জীবন-নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে তার একাধিক ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার চৌধুরী তার ১৪/১৫ জন সহযোগীসহ এপেন্ডিসাইটিসের এক রোগীকে নিয়ে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। হাসপাতালে প্রবেশের সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড ও লিফটম্যানকেও লাঞ্ছিত করেন তারা। পরে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এপেন্ডিসাইটিসের বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দায়িত্বরত মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসক সবাইকে একটু ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়ে রোগীকে সিনিয়র চিকিৎসক দেখবেন বলে জানান।
এ সময় সারোয়ার চৌধুরী নিজেকে জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দিয়ে তিনিসহ সবাই ইন্টার্নী চিকিৎসকের সাথে উদ্ধত আচরণ ও গালিগালাজ করেন। এতে ভয়ে লজ্জায় কেঁদে ফেলেন ওই ইন্টার্নী চিকিৎসক। ঘটনার একপর্যায়ে সারোয়ার চৌধুরী ছুরি নিয়েও ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধাওয়া করেন। পরে হাসপাতালে দায়িত্বরতদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এখানেই শেষ নয়, ঘটনার পর হাসপাতালের দু’জন চিকিৎসককে মুঠোফোনে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন।
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার চৌধুরীর সাথে হাসপাতালে উপস্থিত এক রাজনীতিক সহকর্মী জানান, এক বন্ধুর পেটে ব্যথা উঠেছিল, অ্যাপেনডিক্সের ব্যাথা মনে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন ২০/২৫ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক পত্রিকা পড়ছিলেন। কিন্তু রোগী দেখতে আসেননি। তিনি বলেন, তাদেরকে বলেছিলাম বন্ধুর অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের মন চাইছিল না, তাকে চিকিৎসা না দিয়ে চলে আসি। তখন চিকিৎসকরা বললেন, আমরা বের না হলে তারা চিকিৎসা করবেন না।
তিনি বলেন, সেবার মানসিকতার পরিবর্তে ওই সময় দায়িত্বরত চিকিৎসকদের ভূমিকা ছিল নির্লিপ্ত। তাদের ভালেশহীন আচরণ মর্মাহত করে তোলে আমাদের। ঘটনার প্রতিবাদ করে চিকিৎসা নিশ্চিত করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু রোগীর সেবা না দিয়ে বরং রোগীকে জিম্মি করে আমাদের শায়েস্তা করতে মনোযোগী হয়ে উঠে।
এ ব্যাপারে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফেরদৌস হোসেন বলেন, তারা সন্ত্রাসীর মতো আচরণ করেছে। আমরা তো তা করতে পারি না। চিকিৎসা সেবাও বন্ধ রাখতে পারি না। এটা মেনে নিয়েই আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
থানায় জিডি : কর্মবিরতিতে ইন্টার্নী ডাক্তাররা
এদিকে, ছাত্রলীগ নেতার ধর্ষণ হুমকি ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরিতে সমাধান, এমনটি মানতে রাজি নয় বলেই টানা কর্মবিরতি শুরু করেছে মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন ডাক্তাররা। সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন ডাক্তারকে প্রকাশ্য ধর্ষণ, লাশ ফেলে দেয়ার হুমকির ঘটনায় শনিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ, রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজ, ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন ডাক্তাররা। এসব হাসপাতালে কর্মবিরতি চললেও ইমার্জেন্সি সেবা চালু আছে বলে নিশ্চিত করেছেন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের পরিচালক ফেরদৌস হোসেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে কোতোয়ালী থানায় ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণের হুমকি দেয়ার অভিযোগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করা হয়েছে। উইমেন্স মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডা. ফেরদৌস হোসেন এ সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, কোন ঘটনা ঘটলে নূন্যতম একটি সাধারণ ডায়েরির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি প্রাথমিকভাবে অবগত করা দরকার মনে করে তারা এ ডায়েরি করেছেন।
গতকাল কর্মবিরতি চলাকালে উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন ডাক্তাররা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান নেন। এছাড়া কতোয়ালী মডেল থানায়ও তারা অবস্থান করে প্রতিবাদ জানায়। সিলেটের প্রতিটি কলেজের কিছু ইন্টার্ন ডাক্তার উইমেন্স মেডিকেল কলেজে এসে তাদের এই প্রতিবাদে সংহতি প্রকাশ করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছাত্রলীগ

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ