বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে কক্সবাজারের প্রশাসন। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সমন্বিতভাবে এই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঘূর্ণিঝড় থেকে জনগণকে আশ্রয় দিতে জেলা ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা ও খাবারসহ আনুষঙ্গিক সকল ধরণের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম মজুদ এবং করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। বৃহস্পতিবার (২ মে) এক প্রস্তুতি সভায় জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আবছার এই তথ্য জানান।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উক্ত প্রস্তুতি সভায় জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আবছার জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। এই জন্য সকল সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দপ্তরকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্য বিভাগ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, সিপিসি বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সাথে রেডক্রিসেন্টসহ স্বেচ্ছাসেবীদেরও বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি জানান, জেলার প্রতিটি উপজেলাকে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই প্রতিটি উপজেলাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুযোর্গকালীন মুহূর্তে আশ্রয়ের জন্য আট উপজেলার ৫৩৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে প্রতিটিতে ৮২৫জন করে ৪ লাখ ৮ হাজার ৪৩জন লোক আশ্রয় পাবে।
জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৬ হাজার ৪৫০ জন কর্মী রয়েছে। তার মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে ১ হাজার ৭০০ কর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৪৩০ ইউনিটে ভাগ হয়ে তারা কাজ করবে। রেটক্রিসেন্টের রয়েছে ১২ শতাধিক কর্মী। তারা ৫ টি ইউনিটে ভাগ হয়ে কাজ করবে।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা রইস উদ্দীন মুকুল জানান, দুর্যোগকালীন সময়ে বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সম্বলিত ৪ হাজার ৫০০খাবার প্যাকেট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এক প্যাকেটে একটি পরিবারের ১০দিন যাবে। এছাড়া চিড়া ও গুড়সহ বিভিন্ন শুকনো খাদ্য সামগ্রীও মজুদ রাখা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন মহিউদ্দীন আলমগীর জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গঠন করা হয়েছে ‘রেপিড রেসপন্স’ টিম। জরুরী মুহূর্তে সেবাদানের জন্য প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবার মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আট উপজেলায় ৮৯টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিসে দিবারাত্রি ২৪ ঘন্টার জন্য জরুরী ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মোঃ ইদ্রিস জানান, ‘দুর্যোগকালীন সময়ে ফায়ার সার্ভিস বিরতিহীন কাজ করবে। এই জন্য প্রতি উপজেলার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনকে বিশেষভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও জরুরী প্রয়োজনে আরো অতিরিক্ত সেবা দেয়া হবে। এই জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছে।
কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, রেডক্রিসেন্ট যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করতে বদ্ধপরিকর। বিগত সময়েও কক্সবাজারে রেডক্রিসেন্ট সেভাবে কাজ করেছে। ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায়ও রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় সব প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে সর্বাত্মকভাবে কাজ করা হবে।
সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি মেজর তানজিল জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে বেসামরিক সংস্থার সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে রামু সেনানিবাসসহ এর আওতাধীন সকল ক্যাম্পের সদস্যরা। এর জন্য সকল প্রস্তুতি হাতে রাখা হয়েছে। একই সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশেষভাবে কাজ করবে সেনাবাহিনী। সেখানে যেকোনো দুর্যোগকালীন সময়ে কাজ করার জন্য ৫০০ রোহিঙ্গা যুবককে স্বেচ্ছাসেবী কাজ করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাদেরকে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডসহ সব এলাকার মানুষকে আশ্রয় এবং সেবাদানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে পৌরসভা। ইতিমধ্যে কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারাটরি স্কুল, কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্রের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সাথে স্বাস্থ্য সেবা এবং খাবারেরও মজুদ করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ৯১’র ঘূর্ণিঝড়ে প্রস্তুতি না থাকায় এত বিপুল পরিমাণ মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। কিন্তু এখন আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকারি-বেসরকারিসহ সকল স্তরের মানুষকে যৌথভাবে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যাবো।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আবছার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন জোরালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতিমূহুর্তের আপডেট নিয়ে আমরা আমাদের করণীয় নির্ধারণ করছি। সকল প্রস্তুতির পরও আমরা দফায় দফায় আপডেট করছি। প্রতিটি উপজেলার ইউএনও’দেরও সেভাবে নির্দেশনা হয়েছে। আজ বিকালের মধ্যেই অবস্থা বিবেচনা করে নিচু এলাকার লোকজনকে সরিয়ে আনার কাজ শুরু করবো। এর আগেই মাইকিং করা হবে। একই সাথে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ‘
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ভারতের ওড়িশা উপকূল হয়ে আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’। ইতোমধ্যে পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর ও চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সামান্য উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯২৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।