Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফণি নিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি উপকূলের ১৩ জেলার ৪০ উপজেলায়

প্রাথমিক আঘাত হানতে শুরু করেছে ভারতের পুরী উপকূলে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২ মে, ২০১৯, ৬:৫৫ পিএম

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’ ভারতের অন্ধ্র ও উড়িষ্যা উপকূল ঘেষে উত্তর-পশ্চিমের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ায় তা পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকা অতিক্রম করার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে বৃহস্পতিবার সকালেই ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা ও বাগেরহাট থেকে পশ্চিমের সাতক্ষীরার সব নৌপথ ও নদী বন্দরগুলোকেও এ সংকেতের আওতায় আনা হয়। ফলে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকেই বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর এবং বরিশাল-ঢাকা সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের নৌ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী দুটি ফেরী সেক্টর ছাড়াও বরিশাল-ভোলা ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর ফেরী সেক্টরেও যানবাহন পারাপার বন্ধ করে দেয়া হয় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। তবে বরিশাল বিমান বন্দরের সাথে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সব ফ্লাইট চালু ছিল। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বরিশাল সেক্টরে সরকারি-বেসরকারি ৩টি সংস্থার উড়ান পূর্ণ যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বরিশালে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে টেলিটকের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর থেকেই বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণ উপকূল মেঘে ঢেকে যেতে শুরু করেছে। ফলে কিছুটা গুমোট আবহাওয়ার তৈরী হচ্ছে। উপকূলীয় ১৩টি জেলার ৪০টি উপজেলা প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করছে দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। সবগুলো জেলা ও উপজেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রন কক্ষ চালু করেছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনও সম্ভাব্য দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
তবে গতকাল সকালের পর থেকেই আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট অকার্যকর হয়ে পড়ায় যথেষ্ঠ বিপাকে পড়েছে প্রশাসন। আবহাওয়ার সর্বশেষ বার্তা জানতে পারছেনা মিডিয়া সহ প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় ফণির সম্ভাব্য আঘাত থেকে উপকূলীয় ৭১০ কিলোমিটার এলাকার প্রায় সোয়া কোটি মানুষকে সতর্ক করে দেয়া হয়েচে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে প্রায় ৪ হাজার আশ্রয় কেন্দ্রে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে সরিয়ে আনতে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী-সিপিপি’র ৫৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। সিপিপি উপকূলের ৪০টি উপজেলার সাড়ে ৩শ’ ইউনিয়নে তার ৩ হাজার ৬৮৪টি ইউনিটের মাধ্যমে ইতোমধ্যে উদ্ধার ও সতর্কতার কাজ শুরু করেছে। উপকূল জুড়ে মেগাফোনের মাধ্যমে সাইরেন বাজানো ছাড়াও ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় মাইক যোগে প্রচারনার পাশাপাশি বিপদ সংকেতপূর্ণ ৩টি করে লাল পাতকা উত্তোলন করা হয়েছে। সিপিপি’র বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জোনাল অফিসগুলোর সাথে উপকূলের ১৪৬টি ভিএইচএফ ও ইউএইচএফ স্টেশনের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা সহ মনিটরিং করা হচ্ছে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’র ব্যসার্ধের মধ্যে গতকাল দুপুরের পর থেকে পুরী উপকূল চলে আসায় সেখানে ঝড়ের প্রাথমিক তান্ডব ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। পূর্ণ জোয়ারে ভর করেই ‘ফণি’ পুরী থেকে উরিষ্যার দিকে স্ববেগে এগুচ্ছে। প্রায় ২শ’ কিলোমিটার বেগের তীব্রতা নিয়ে আঘাত হানতে ফণি সক্রিয় থাকলেও ঘন্টায় ৫-১০ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হওয়ায় শুক্রবার দুপরের আগে সেটি সুন্দরবন উপকূল অতিক্রম করার সম্ভবনা নেই। ততক্ষনে এর তীব্রতা অনেকটাই হৃাস পাবার সম্ভবনা রয়েছে। তবে ঝড়টি বঙ্গপসাগরের জোয়ারে ভর করে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত হানলেও এর তীব্রতা ততটা বাড়বে না। কারন এ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে পরবর্তী ভাটির সময়ই ফণি কিছুটা হলেও গতি হারাবার সম্ভবনা রয়েছে। তবে ফণির ব্যাসার্ধ প্রায় হাজার কিলোমিটার হওয়ায় কেন্দ্র থেকে ডান-বামের অনেক এলাকাই এর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশংকা রয়েছে। এমনকি ফণির মাঝারি আঘাত আছড়ে পড়তে পারে খোদ কোলকাতা মহানগরীতেও। তবে এবারো প্রকৃতির এ তান্ডব অনেকটাই রুখে দেবে প্রকৃতিই। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যবর্তী সুন্দরবন পর্যন্ত ফণি পৌছলেও তাকে রুখে দিতে পারে ঐ প্রকৃতিক বনভূমিই।
গত শনিবার দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণি ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ এর প্রায় অনুরূপ। সিডরের তীব্রতা ছিল সোয়া ২শ’ কিলোমিটার। ফণি বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে প্রায় ২শ’ কিলোমিটারের তীব্রতা নিয়েই পুরী থেকে উড়িষ্যার দিকে এগুচ্ছিল। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের মতে ১৮৯১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে যে ১৪টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, তার মধ্যে শুধুমাত্র ১৯৯১-এর ২৯ এপ্রিল ও ২০০৮ সালের এপ্রিলে ঘূর্ণিঝড় ‘নার্গিস’ উপকূল অতিক্রম করে। ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের মতে ফণি’র সম্ভাব্য আঘাত হানা ভারতীয় উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ১০ কোটি মানুষের বসবাস। ফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে শংকিত সেখানের মানুষ সহ প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষকে অতি দূর্যোগ প্রবন এলাকা থেকে সরিয়ে ৮৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ভারত সরকার প্রায় ৯৮ লাখ এসএমএস বার্তায় সাধারন মানুষের কাছে ঝড়ের খবর পৌঁছে দিয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ উরিষ্যা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্র প্রদেশের ৩টি জেলায় ‘ইয়োলো এলার্ট’ জারী করেছে। গানজাম জেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ১৮০ গর্ভবতী মহিলাকে বিশেষ নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে।



 

Show all comments
  • মিটু ৩ মে, ২০১৯, ২:০৯ পিএম says : 0
    ফনি কি বি বাড়িয়া দিকে আসতে পারে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় ফণী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ